আব্দুল আলীম : অনলাইনে পশু কেনা-বেচা হচ্ছে কয়েক বছর ধরেই। এবার পশুর মাংস কাটার লোকও (কসাই) পাওয়া যাবে অনলাইনে। এজন্য গরুর মূল্যের প্রতি হাজারে গুনতে হবে ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত সার্ভিস চার্জ। ৫০ হাজার টাকা মূল্যের একটি গরুর মাংস কাটতে দিতে হচ্ছে সাড়ে ৭ হাজার টাকা থেকে সাড়ে ১২ হাজার টাকা। এটি আলোচনা সাপেক্ষে নির্ধারণ করছেন উভয় পক্ষ।
অনলাইনের মাধ্যমে ‘কসাই’ বুকিং দিয়েছেন ঢাকার সাভারের মো. মঞ্জুরুল আলম। প্রতি বছরই গরু কোরবানি দেন সাভারের নিজ বাড়িতে। কিন্তু ঈদের সময় কসাই পাওয়া নিয়ে থাকেন বিপদে। এবার কোরবানির গরু কেনার পর ফেসবুকের এক স্ট্যাটাসে দেখেন অনলাইনে কসাই সাপ্লাই দেয়া হয়। যোগাযোগ করে অর্ডারও দিয়ে দেন। ৭৫ হাজার টাকার গরুর মাংস কাটার জন্য ৯ হাজার টাকায় চুক্তি করেন। কোনো ধরনের অগ্রিম বুকিং বা অন্যান্য ফি বাদে কাজ শেষে টাকা পরিশোধের চুক্তিতে বুকিং দেন তিনি।
মঞ্জুরুল আলম বলেন, আমি ফেসবুকে দেখে ‘কসাই সাপ্লাই’ নামের একটি ফেসবুক পেজের মালিক সোলাইমান হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করি। কথা বলে সার্ভিস ও দরদাম ভালো লেগেছে। সঙ্গে সঙ্গে অর্ডারও দিয়েছি। এমনকি বন্ধুদেরও বলেছি অনলাইনে কসাই সাপ্লাই পাওয়া যায়। এখান থেকে দক্ষ কসাই দিয়ে তোমাদের কোরবানির পশুও কাটতে পারো। তিনি বলেন, এর জন্য কোনো ধরনের কমিশন বা বাড়তি টাকা দেয়া লাগবে না। এমনকি মাংসও দেয়ার চুক্তি হয়নি। ফেসবুক থেকে কসাই বুকিং দিয়েছেন এমন আরেকজন হলেন হৃদয় হাসান।
মগবাজারের নয়াটোলায় বাড়ি। এক্সপোর্ট-ইম্পোর্টের ব্যবসায়ী তিনি। তিনি বলেন, আমার ছোট ভাই ফেসবুকের ‘কসাই সাপ্লাই’ নামক একটি পেজে কসাই সাপ্লাইয়ের একটি স্ট্যাটাস দেখে। পরে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে ৯৫ হাজার টাকার গরু কাটার জন্য ১৫ হাজার টাকার কথা বলেছি। তারা আমাদের বাড়ি এসে গরু দেখে টাকার বিষয়টি ঠিক করবে বলে জানিয়েছে।
মঞ্জুরুল আলম ও হৃদয় হাসানই না তার মতো অনলাইনে স্ট্যাটাস দেখে কসাইয়ের অর্ডার মোহাম্মদপুরের মোহাম্মদীয়া হাউজিংয়ের এহসানুল কবির, উত্তরার আরিফ চৌধুরী, রেজওয়ানুল হকসহ আরো অনেকেই। প্রত্যেকে কোনো ধরনের ঝক্কি ঝামেলা পোহানোর ভয়ে কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে কসাইয়ের অর্ডার দিয়েছেন।
এহসানুল কবির বলেন, আমি জাতীয় সংসদ ভবনের ইলেকট্রিক্যাল ঠিকাদার। প্রতি বছরই আমি কোরবানি দিয়ে থাকি। কিন্তু ঈদ আসলে নব্য কিছু লোক এক দিনের কসাই হয়ে ওঠে। এদের মধ্যে অনেকেই গ্রাম থেকে আসে। পশু জবাইয়ের পর মাংস কাটতে গিয়ে নষ্ট করে ফেলে। এ ছাড়া এসব লোক পাওয়াও অনেক কষ্টের বিষয়। তাই এবার কোনো রকম ঝক্কিঝামেলা ছাড়াই কসাই বুকিং দিয়েছি অনলাইনে। আশা করছি সার্ভিসটি ভালো হবে।
তিনি বলেন, ‘সেবাডটএক্সওয়াইজেড’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ফেসবুক পেজে প্রথমে কসাই সাপ্লাইয়ের একটি স্ট্যাটাস দেখি। সেখানের লিংক থেকে ওয়েবসাইটে গিয়ে তাদের কাস্টমার কেয়ারে কথা বলে সব তথ্য জানার পর কসাই বুকিং দেই। যোগাযোগ করা হলে ‘সেবাডটএক্সওয়াইজেড’ নামক প্রতিষ্ঠানটির সিইও আদনান আহম্মেদ বলেন, আমরা সাধারণত রাজধানীর আফতাব নগর হাট, গাবতলি হাট, বনানী মাঠ, ইস্টার্ন হাউজিং ও উত্তরা হাট থেকে কোরবানির পশু পরিবহন সার্ভিস দিয়ে থাকি। বাসা ক্লিনিং সার্ভিস, প্রফেশনাল ঈদ ফটোগ্রাফি সার্ভিস, ফ্যামেলি লন্ড্রি সার্ভিস, হেভি ক্লথিং লন্ড্রি সার্ভিসসহ বেশ কিছু সার্ভিস দিয়ে থাকি। এর সঙ্গে এ বছর কোরবানির পশুর মাংস কাটার জন্য কসাই সাপ্লাইয়ের সার্ভিসটি শুরু করেছি। আমরা এ বছর ১৫০টি টিম দিয়ে শুরু করেছি। বেশ সাড়াও পেয়েছি ইতিমধ্যে ১০০টি অর্ডার পেয়েছি।
সেবাডটএক্সওয়াইজেডের মার্কেটিং অফিসার শিবলি আহম্মেদ জানান, আমাদের প্রতিটি কসাই টিমে কমপক্ষে ৩ জন থাকবে। তিন ক্যাটাগরিতে কসাইদের ভাগ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ‘সিজনাল’ কসাইদের নিতে হলে প্রতি হাজারে ১৫০ টাকা, ‘সেমি প্রফেশনাল’ কসাইয়ের জন্য ২০০ টাকা ও ‘প্রফেশনাল’ কসাইয়ের জন্য হাজারে ২৫০ টাকা করে খরচ হবে একজন গ্রাহকের। তবে সর্বনিম্ন পারিশ্রমিক হবে ৫,০০০ টাকা। ‘কসাই সাপ্লই’ নামের একটি ফেসবুক পেজ চালান রাজধানীর বাংলামোটরের সোলাইমান হোসেন নামের একটি ব্যবসায়ী।
তিনি বলেন, এবারই প্রথম এই ব্যবসা শুরু করেছি। বেশ সাড়া পেয়েছি। ইতিমধ্যে ১০০ এর বেশি অর্ডার পেয়েছি। আমাদের সব অর্ডারই প্রায় মগবাজার, বাংলামোটর, ধানমন্ডি বা আশপাশ এলাকায়। দক্ষ ও প্রফেশনাল লোক দিয়ে আমরা সার্ভিস দিচ্ছি। এক্ষেত্রে এক লাখ টাকার একটি গরুর জন্য ১৫ হাজার টাকা নিচ্ছি। প্রতিটি কসাই টিমে ৩ জন লোক গিয়ে কাজ করবে। - এমজমিন
৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি