রবিবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৫, ১২:৪৩:৫৯

জাতিসংঘ প্রতিনিধি দল এখন ঢাকায়

জাতিসংঘ প্রতিনিধি দল এখন ঢাকায়

মিজানুর রহমান ও নুরুজ্জামান লাবু : দুই বিদেশী নাগরিক খুন ও একের পর এক বিভিন্ন দেশের সতর্কতা জারির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ নিয়ে তোলপাড় চলছে সারা দুনিয়ায়। এ যখন অবস্থা তখন ঢাকায় এসেছে বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গি অর্থায়নের বিষয়ে অনুসন্ধানে জাতিসংঘ সম্পর্কিত একটি প্রতিনিধি দল। সাত সদস্যের প্রতিনিধি দলটি কাজ শুরু করবে আজ থেকে। ১২ দিনের সফরে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের উৎস অনুসন্ধান করবে দলটি। পর্যবেক্ষণ করবে নিরাপত্তার বিষয়টিও। যদিও মানি লন্ডারিং নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করাই তাদের প্রধান কাজ। বাংলাদেশ সফর শেষে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে প্রতিবেদন দাখিল করবে দলটি। বিভিন্ন দেশের নিরাপত্তা রেটিং তৈরিতে এসব প্রতিবেদন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

সূত্র মতে, এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ অন মানি লন্ডারিং (এপিজি)’র ওই প্রতিনিধি দলে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, শ্রীলঙ্কাসহ ৭টি দেশের প্রতিনিধি রয়েছেন। বাংলাদেশে আজ থেকে তাদের অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু হয়ে চলবে আগামী ২২শে অক্টোবর পর্যন্ত। এ সময়ে অর্থ, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ে তারা সিরিজ বৈঠক করবেন। তাদের সফরের উদ্বোধনী বৈঠক হবে বাংলাদেশ মানি লন্ডারিং ও জঙ্গি অর্থায়ন প্রতিরোধে গঠিত ন্যাশনাল কমিটির সঙ্গে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ওই কমিটির চেয়ারম্যান। আজ সকাল সাড়ে ৯টায় অর্থ মন্ত্রণালয়ে বৈঠকটি হওয়ার কথা রয়েছে।

এদিকে পররাষ্ট্র দপ্তর সূত্র জানিয়েছে, আগামী ১৫ই অক্টোবর মন্ত্রণালয়ের জাতিসংঘ অনুবিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এপিজি প্রতিনিধি দলের বৈঠকের সূচি নির্ধারিত রয়েছে। বাংলাদেশ এপিজির সক্রিয় সদস্য। বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জাতিসংঘ বিভিন্ন সময়ে যেসব রেজুলেশন পাস করেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এর বাস্তবায়ন এবং মনিটরিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ওই আন্তর্জাতিক সংস্থাটি।

উল্লেখ্য, গত জুলাইতে মানি লন্ডারিং এবং জঙ্গি অর্থায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশ ৩ বছর মেয়াদি জাতীয় কৌশলপত্র নির্ধারণ করেছে। বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার উত্থান মোকাবিলায় জাতিসংঘ কনভেনশনের বিভিন্ন ধারা বাস্তবায়নে স্টেক হোল্ডারদের সক্ষমতা বাড়াতে ওই কৌলশপত্রে মধ্য মেয়াদি লক্ষ্যমাত্রা এবং এজেন্ডা নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপে শনিবার তিনি বলেন, এপিজি তথা জাতিসংঘ সম্পর্কিত ওই প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বাংলাদেশের জাতীয় কৌশলপত্র পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন করবেন।

এদিকে দেশের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সংস্থা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বিদেশী নাগরিকদের নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সাধারণ মানুষের মন থেকে আতঙ্ক দূর করতে পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কার্যক্রম চলছে। শনিবারও গুলশানের কূটনৈতিক পাড়াসহ উত্তরায় পুলিশের স্পেশ্যাল ওয়েপন অ্যান্ড ট্যাক্টিজ- সোয়াত টিমের নেতৃত্বে বিশেষ মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, দুই বিদেশী নাগরিক হত্যার পর দেশী-বিদেশী নাগরিকদের মনে ভয় ঢুকেছে। সেই ভয় দূর করতে এই কার্যক্রম চলছে। তবে সূত্র বলছে, জাতিসংঘ প্রতিনিধি দলের ঢাকা সফরকে সামনে রেখেই এসব কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। যে কোন মূল্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।

দুই বিদেশী নাগরিক হত্যার পর নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক চাপের মুখে পড়ে সরকার। পশ্চিমা কয়েকটি দেশ বাংলাদেশে ভ্রমণের বিষয়ে তাদের নাগরিকদের সতর্ক করেছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্য দ্বিতীয় দফা সতর্কতা জারি করে। একইসঙ্গে বাংলাদেশে পশ্চিমা নাগরিকদের ওপর নির্বিচার হামলা চালানো হতে পারে বলেও এতে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়।

এছাড়া, বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশী নাগরিকদের চলাফেরাও সীমিত হয়ে আসছে। অনেকেই নিরাপত্তা ইস্যুতে দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। বিদেশী মালিকানাধীন আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে তাদের কর্মীদের সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। মানুষের মন থেকে আতঙ্ক দূর করতে ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখাতে ব্যাপক ‘শোডাউন’ কার্যক্রম চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। শনিবার ঢাকার পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে গুলশানের পুলিশ প্লাজা কনকর্ড থেকে উত্তরা পর্যন্ত বিশেষ নিরাপত্তা মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। এতে ডিএমপির স্পেশ্যাল ওয়েপন অ্যান্ড ট্যাক্টিজ- সোয়াতের সদস্যরা ছাড়া থানা পুলিশ ও আর্মড পুলিশ সদস্যরা অংশ নেয়। এর আগে গত বৃহস্পতিবারও গুলশানের কূটনৈতিকপাড়ায় ডিএমপির পক্ষ থেকে একইরকম মহড়ার আয়োজন করা হয়েছিল।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজধানী ঢাকার বাইরে বিশেষ করে চট্টগ্রামসহ অন্যান্য এলাকায় বিদেশী নাগরিকদের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বিশেষ করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় ও মাঠ পর্যায়ের অবকাঠামো নির্মাণের স্থানগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। যদিও সম্প্রতি একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদেশী নাগরিকদের সরিয়ে নেয়া হয়েছে। শনিবার সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের পদ্মাসেতু প্রকল্পে কর্মরত বিদেশী নাগরিকদের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানান।-এমজমিন
১১ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে