রবিবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৫, ০১:১১:০২

চমক নিয়েই ফিরছেন খালেদা জিয়া

চমক নিয়েই ফিরছেন খালেদা জিয়া

শফিউল আলম দোলন : সত্যিই এবার চমক আসছে বিএনপিতে। দল ও অঙ্গসংগঠনের প্রতিটি স্তরেই ব্যাপক পরিবর্তন অত্যাসন্ন। সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি থেকে শুরু করে জাতীয় নির্বাহী কমিটি পর্যন্ত প্রতিটি স্তরেই ঢেলে সাজাবেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটিতে নয়টি পদেই নতুন মুখ দেখা যেতে পারে চলতি বছরই। বাদ পড়ছেন পাঁচজন, সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে আরও অন্তত চারজনকে। সমমর্যাদায় হচ্ছে দলের নতুন উপদেষ্টা পরিষদ। গুরুত্ব হারাতে চলেছেন দলের অনেক হেভিওয়েট নেতা। তরুণদের প্রাধান্য দিয়ে তৈরি হচ্ছে নির্বাহী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদের তালিকা। চিকিৎসার্থে লন্ডন সফররত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবার দেশে এসেই সংগঠনের সর্বস্তরে পুনর্গঠন সংক্রান্ত সেই কাঙ্ক্ষিত চমক দেখাবেন বলে দলের সংশ্লিষ্ট সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

জানা গেছে, স্থায়ী কমিটির বর্তমান তালিকায় দলের প্রয়াত মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের শূন্য পদটি পূরণ ছাড়াও আরও আটটি পদে রদবদলের চিন্তাভাবনা চলছে। গঠনতন্ত্রের বাধ্যবাধকতা, বয়সের ভারে ন্যুব্জ ও শারীরিক অক্ষমতার জন্য পাঁচজন সদস্যের সরে যাওয়ার বিষয়টি মোটামুটি নিশ্চিত। তাছাড়া নিষ্ক্রিয়তা, অনিয়ম ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে আরও তিনজনকে সরিয়ে দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে।

একই সঙ্গে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিল বিলুপ্ত করে স্থায়ী কমিটির সমমর্যাদায় নতুন করে দলের উপদেষ্টা পরিষদ গঠনেরও প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এতে সদস্য থাকবেন সর্বোচ্চ ৩০ জন। চলতি বছর তথা আগামী দুই মাসের মধ্যেই এসব পরিবর্তনের আভাস দিয়েছেন দলের নীতিনির্ধারক মহলের নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো। দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশ অনুসারে গত সোমবার রাতে গুলশানের একটি ভবনে দলের নীতিনির্ধারণী মহলের বেশ কয়েকজন সদস্য এ ব্যাপারে অনানুষ্ঠানিকভাবে তিন ঘণ্টার একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠকেও মিলিত হন।

লন্ডন থেকে ফিরলে খালেদা জিয়াকে ঢাকার হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সংবর্ধনা দেওয়ার কথাও ভাবছেন তারা। চোখের চিকিৎসা শেষে চলতি মাসের শেষের দিকে তিনি দেশে ফিরতে পারেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম। তবে তা সম্পূর্ণভাবে তার চিকিৎসা এবং চিকিৎসকদের পরামর্শের ওপর নির্ভর করছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এদিকে লন্ডনের অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, এ পর্যন্ত একটি চোখের অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসনের। অপর চোখের অপারেশনসহ পায়ের চেকআপও করাবেন তিনি। এখন চিকিৎসকদের পরামর্শ ও চিকিৎসার ওপরই নির্ভর করছে তার দেশে ফেরা।

কেন্দ্রীয় বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, দলের আসন্ন জাতীয় কাউন্সিলে ৩৮৬ সদস্যের সাজানো গোছানো নির্বাহী কমিটি এবার সম্পূর্ণ ওলটপালট হতে যাচ্ছে। এই 'কাউন্সিলঝড়ে' অনেক বড় বড় নেতাও ছিটকে পড়তে পারেন। আবার ত্যাগী, যোগ্য, দক্ষ ও দীর্ঘদিন ধরে কোণঠাসা ছোট পদের নেতারাও এবার নির্বাহী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে স্থান করে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে সম্ভাব্য একটি নামের তালিকাও তৈরি করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে মরহুম খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের পদটি ছাড়াও বয়সের ভারে ন্যুব্জ ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে সবচেয়ে প্রবীণ ড. আর এ গনি ও এম শামছুল ইসলাম নিজেরাই সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আদালত থেকে দণ্ডিত হওয়ার কারণে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পদটিও খালি হতে যাচ্ছে। একই কারণে সরে যেতে পারেন বেগম সারওয়ারি রহমানসহ ৮৬ বছর বয়সের আরেক প্রবীণ সদস্য।

এ ছাড়াও নিষ্ক্রিয়তা, নানা অনিয়ম, দলের ভিতরে গ্রুপিং তৈরি করা, সরকারের সঙ্গে আঁতাতসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে আরও তিনজন সদস্য রয়েছেন বাদ পড়ার তালিকায়। স্থায়ী কমিটির এসব পদে সম্ভাব্য যারা স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন তাদের মধ্যে দলের ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, (এলডিপি বিলুপ্ত করে সদলবলে বিএনপিতে যোগ দেওয়ার পর) কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোর্শেদ খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, উপদেষ্টা ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, আবদুল আউয়াল মিন্টু ও ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী রয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে স্থায়ী কমিটি থেকে যারা সরে যাবেন তাদের একই সমমর্যাদায় গঠিতব্য দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করা হবে।

একই সঙ্গে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলও বাতিল করা হতে পারে। আর এই নতুন উপদেষ্টা পরিষদের প্রধান করা হতে পারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদকে। তার নেতৃত্বে এই পরিষদের সম্ভাব্য অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি টিএইচ খান, ড. আর এ গনি, মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ, ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, রিয়াজ রহমান, বিশিষ্ট সাংবাদিক শফিক রেহমান, সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ, ড. আসিফ নজরুল, মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী, শামছুজ্জামান দুদু, ড. তুহিন মালিক, আহমেদ আজম খান, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, মুশফিকুর রহমান, মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসান, মীর মো. নাসির, হারুনুর রশিদ খান মুন্নু, ব্যারিস্টার হায়দার আলী, সাবেক শিক্ষা সচিব খন্দকার শহীদুল আলম প্রমুখ। তবে কোনো কারণে এমাজউদ্দীন আহমদ প্রধান না হলে বর্তমান স্থায়ী কমিটির একজন প্রবীণ সদস্যকেও তা করা হতে পারে বলে চিন্তাভাবনা চলছে।

অন্যদিকে দলের মহাসচিব পদের ঝুলন্ত বিষয়টিও এবার দেশে ফিরে নিষ্পত্তি করবেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ ছাড়া পরবর্তী নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও যুগ্ম মহাসচিবসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সম্পাদক পদে যাদের নিয়োগ করা হবে তরুণদের প্রাধান্য দিয়ে তাদের নামেরও একটি প্রাথমিক তালিকা করা হয়েছে। এ তালিকায় উল্লেখযোগ্য নামগুলোর মধ্যে রয়েছে- মোহাম্মদ শাহজাহান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, মাহবুবউদ্দিন খোকন, রুহুল কবির রিজভী, বরকতউল্লাহ বুলু, মুজিবুর রহমান সারওয়ার, ফজলুল হক মিলন, গাজীপুরের সিটি মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান, আসাদুল হাবিব দুলু, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, আ ন ম এহসানুল হক মিলন, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, নাজিমউদ্দিন আলম, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, গোলাম আকবর খন্দকার, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, হাবিবুর রহমান হাবিব, নাদিম মোস্তফা, হাবিব-উন নবী খান সোহেল, ব্যারিস্টার রুহিন ফারহান, রশিদুজ্জামান মিল্লাত, শিরিন সুলতানা, নিলোফার চৌধুরী মনি, সৈয়দা আশিফা আশরাফি পাপিয়া, রেহেনা আক্তার রানু, শামা ওবায়েদ ইসলাম রিংকু, সাইফুল আলম নীরব, আজিজুল বারী হেলাল, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু প্রমুখ।

নির্ভরযোগ্য অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, দলীয় চেয়ারপারসন এবার দেশে ফেরার পর দলের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি গবেষণা সেল খোলা হবে। যা দলের 'থিংক-ট্যাংক' এর কাজ করবে। এই সেলে দলীয় ঘরানা এবং তার বাইরের সম্ভাব্য বুদ্ধিজীবী ও বিভিন্ন সেক্টরের বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিরা কাজ করবেন।

এ ছাড়াও নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় বিএনপি এবং গুলশানে চেয়ারপারসন কার্যালয়ের স্ট্রাকচারেও ব্যাপক পরিবর্তন আনা হতে পারে।-বিডিপ্রতিদিন
১১ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে