সোমবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৫, ০২:৪৯:০৯

দলীয়ভাবেই নির্বাচনের সিদ্ধান্ত

দলীয়ভাবেই নির্বাচনের সিদ্ধান্ত

তাওহীদুল ইসলাম : দলীয়ভাবেই স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে আইন পরিবর্তনের জন্য আজ মন্ত্রিসভা বৈঠকে উঠছে স্থানীয় সরকার নির্বাচন পদ্ধতি সংশোধনী ৫টি বিল। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমানে জাতীয় সংসদ অধিবেশন না থাকায় এবং বিষয়টি জরুরি বিবেচনায় নিয়ে এ সংক্রান্ত অধ্যাদেশ জারির অনুমোদনের জন্যই মন্ত্রিসভা বৈঠকে বিলগুলো উত্থাপন করা হচ্ছে। তবে রাজনীতি বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, এটি দেশের গণতন্ত্রের জন্য খুব একটা সুফল বয়ে আনবে না, বরং উল্টো ফল হতে পারে। সহিংসতা বাড়তে পারে তৃণমূলে। তাদের পরামর্শ, স্থানীয় সরকার নির্বাচন পদ্ধতি পরিবর্তনের আগে রাজনৈতিক দলগুলো ও স্থানীয় সরকার কাঠামোয় পরিবর্তন আনা জরুরি।

দীর্ঘদিন ধরেই দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে আলোচনা চলছিল। বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোও এমন দাবি জানিয়ে আসছিল। অবশেষে সে দাবি পূরণে পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। আজ মন্ত্রিসভায় বিলগুলো অনুমোদন পেলে স্থানীয় সরকারব্যবস্থায় সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ- এই ৫ স্তরের নির্বাচন দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হবে। এসব নির্বাচনে আগে রাজনৈতিক দলগুলো সমর্থন জানাতে পারলেও দলীয় ব্যক্তিকে সরাসরি প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিতে পারত না। সংশোধিত আইনটি অনুমোদন পেলে দলীয়, এমনকি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন প্রার্থীরা।

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, আগে স্থানীয় সরকার কাঠামোয় পরিবর্তন আনতে হবে। কাঠামো পরিবর্তন না করে দলীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করলে চেয়ারম্যান হয়ে যাবেন একদলীয়। কাঠামো পরিবর্তন করে যখনই একটি ককাস/কাউন্সিল গঠনের ব্যবস্থা করা হবে, তখন সেখানে অনেক দলের সদস্য থাকবেন। এর মধ্য থেকে একজনকে চেয়ারম্যান বা মেয়র নির্বাচনের জন্য তখন প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যাবে। ফলে যোগ্য লোকজনও নির্বাচনে অংশ নেবেন। এতে অন্যান্য দল এমনকি স্বতন্ত্র হিসেবে প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে। এ জন্য রাজনৈতিক দলে এবং স্থানীয় সরকার কাঠামোয় পরিবর্তন আনতে হবে। তাহলেই সুফল মিলবে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে স্থানীয় নির্বাচন নির্দলীয় বলা হলেও প্রকারান্তরে দলীয়ভাবেই এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এখন আইন পরিবর্তনের পর এ নির্বাচন কতটা স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু হবে সেটাই বড় প্রশ্ন হিসেবে দেখা দিয়েছে।

সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে হলে তৃণমূলে সহিংসতা বাড়বে। মনোনয়ন বাণিজ্য এবং পেশিশক্তির মহড়া চলবে। দলীয়ভাবে নির্বাচন হলে স্থানীয় সরকারব্যবস্থা শক্তিশালী হবে না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। তিনি আরও বলেন, অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, বিশেষ করে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে, পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন কমিশন উৎসাহের সঙ্গে অপকর্মের দোসর হয়েছে। ভোট কারচুপিসহ বিভিন্ন অনিয়ম হয়েছে তখন। আমার মতে, এতে সংকট আরও ঘনীভূত হতে পারে। তাই এতে ইতিবাচক কিছু দেখছি না। আমরা দলের নামে সহিংসতা, সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ি। দলীয়ভাবে নির্বাচনের ফলে তৃণমূলেও একদলীয় লোক ক্ষমতায় বেশি আসবে।

জানা গেছে, দলীয়ভাবে নির্বাচন নিয়ে আজকের মন্ত্রিসভা বৈঠকে সম্পূরক বিষয় হিসেবে বিবেচিত হওয়ার কথা রয়েছে ৫টি বিল- ১. স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) (সংশোধন) আইন, ২০১৫-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন।  ২. উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন, ২০১৫-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন। ৩. জেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন, ২০১৫-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন। ৪. স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) (সংশোধন) আইন, ২০১৫-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন। ৫. স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) (সংশোধন) আইন, ২০১৫-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন।

স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্র জানায়, দেশে বর্তমানে ৫ স্তরের স্থানীয় সরকারব্যবস্থা বিদ্যমান। এগুলো সরাসরি ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি দ্বারা পরিচালিত। তবে নির্দলীয়ভাবে এসব নির্বাচন হলেও বাস্তবে প্রতিটি রাজনৈতিক দল প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্বাচনে দলীয় ব্যক্তিকে সমর্থন দিয়ে থাকে। এ ছাড়া অনেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের মতে, রাজনৈতিক দলের সরাসরি অংশগ্রহণে এসব নির্বাচন হলে প্রার্থীদের দায়বদ্ধতা বাড়বে। সুযোগ হবে রাজনৈতিক অঙ্গীকার পালনের। এক্ষেত্রে মনোনয়ন প্রদানকারী রাজনৈতিক দল তাদের নীতি-আদর্শ বাস্তবায়নে এবং জনস্বার্থ রক্ষায় মনোনীত প্রার্থীর কর্মকা- নজরদারি করবে। এরই অংশ হিসেবে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশন আইনে সংশোধনী আনা হচ্ছে। আজকের মন্ত্রিসভায় এসব আইনের সংশোধনীর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে অধ্যাদেশ জারি করা হতে পারে।

ইউনিয়ন পরিষদ
বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদ আইন, ২০০৯ অনুযায়ী, চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্যসহ অন্য সদস্যদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের শর্ত হিসেবে রাজনৈতিক দল কর্তৃক প্রার্থী মনোনয়নের সুযোগ নেই। এটি ১৫ অক্টোবর, ২০০৯-এ গেজেট হিসেবে প্রকাশিত হয়। পরবর্তীকালে ২০১০ সালের ১২ অক্টোবর এটি ইউনিয়ন পরিষদ, (সংশোধন) আইন, ২০০৯ গেজেট হিসেবে প্রকাশ হয়। এ অবস্থায় আইনের কিছু কিছু ধারা সংশোধন/প্রতিস্থাপন/সংযোজন করতে ইউনিয়ন পরিষদ (সংশোধন) আইন, ২০১৫-এর খসড়া বিল প্রস্তুত করা হয়েছে।

উপজেলা পরিষদ
বর্তমানে উপজেলা পরিষদ আইন, ২০১১ অনুযায়ী চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানরা রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থীর বিষয়টি উল্লেখ করতে পারেন না। উপজেলা পরিষদ আইন, ১৯৯৮ সংশোধন হয়ে বর্তমানে ২০১১ অনুযায়ী চলছে। তাই দলীয়ভাবে এবং স্বতন্ত্র হিসেবে অংশগ্রহণের সুযোগ উল্লেখ করে আইনের নতুন খসড়া তৈরি করা হয়েছে। এটি উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন, ২০১৫ হিসেবে অনুমোদন পেতে পারে।

পৌরসভা
পৌরসভা আইন, ২০০৯ অনুযায়ী বর্তমানে পৌরসভার মেয়র এবং কাউন্সিলররা রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করতে পারেন না। তাই পৌরসভা আইন, ২০০৯-এর কিছু ধারা সংশোধন/প্রতিস্থাপন/সংযোজন করে পৌরসভা (সংশোধন), আইন ২০১৫-এর খসড়া বিল তৈরি করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।

সিটি করপোরেশন
বিদ্যমান সিটি করপোরেশন আইন, ২০০৯-এ সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং কাউন্সিলর প্রার্থীদের যোগ্যতা বা অযোগ্যতার শর্ত হিসেবে রাজনৈতিক দল কর্তৃক মনোনয়নের সুযোগ নেই। তাই কিছু ধারা পরিবর্তন বা সংযোজন করে সিটি করপোরেশন আইন (সংশোধন), ২০১৫-এর খসড়া বিল তৈরি করা হয়েছে।

জেলা পরিষদ
বিদ্যমান জেলা পরিষদ আইন, ২০০০ অনুযায়ী চেয়ারম্যান এবং সদস্যরা রাজনৈতিক দল কর্তৃক মনোনীত হতে পারেন না। তাই রাজনৈতিক দলের শর্তটি সন্নিবেশিত করে এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা হয়েছে প্রস্তাবিত জেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন, ২০১৫-এ। আজ সকালে সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে অনুষ্ঠেয় মন্ত্রিসভা বৈঠকে এসব বিল উত্থাপন করার কথা। -আমাদের সময়
১২ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে