রবিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১০:০৬:৫৬

জঙ্গলে পালিয়ে থাকা নির্যাতিত এক রোহিঙ্গার সাক্ষাৎকারে গণহত্যার নির্মম চিত্র

জঙ্গলে পালিয়ে থাকা নির্যাতিত এক রোহিঙ্গার সাক্ষাৎকারে গণহত্যার নির্মম চিত্র

নিউজ ডেস্ক : মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু এলাকায় এখনো অনেক মুসলিম রোহিঙ্গা বন জঙ্গলে পালিয়ে আছেন। তারা লোকালয়ে যেতে পারেন না। তাদের ছেলেমেয়ে, ভাইবোন কোথায় কিভাবে আছেন তাও তারা জানেন না।

মায়ানমারের মংডুর চালিপাড়াং এলাকায় বন আর টিলার মাঝে লুকিয়ে আছেন নূর মোহাম্মদ। তিনি জানান, ‘মংডুর এলাকার বন আর টিলার মধ্যে তারা কয়েকজন লুকিয়ে আছেন। তাদের বাড়িও ওই এলাকায়। গত অক্টোবরে তাদের এলাকায় হামলা চালিয়ে ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়। হেলিকপ্টার থেকেও হামলা চালানো হয়। ওই হামলায় অনেক লোক মারা গেছে। আর কেউ কেউ পালিয়ে বাঁচতে পেরেছেন।’

তিনি জানান, হামলাকারীরা নারীদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন করেছে। অনেককে ধরে নিয়ে গেছে।

এখন পরিস্থিতি কেমন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যখন মিলিটারী থাকেনা তখন আমরা গ্রামে যাই। সৌরবিদ্যুতে, ব্যাটারির মাধ্যমে মোবাইল চার্জ দিয়ে ফিরে আসি। আমরা কয়েকজন মিলে মোবাইল ফোন চার্জের ব্যবসাও করতাম। কেউ কেউ আছেন জীবনের ঝূঁকি নিয়ে। আমরা মাঝে মাঝে খাবারের খোঁজেও যাই। তবে আবার বনে ফিরে আসি।’

এভাবে বাঁচা সম্ভব? প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘খাবার নেই, পানি নেই। তিনদিনও না খেয়ে থেকেছি। তারপরও বাঁচার চেষ্টা করছি। আপনারা যদি পারেন আমাদের জন্য কিছু করেন।’

নূর মোহাম্মদ জানান, ‘আমাদের গ্রামে সাত হাজারের মত বাসিন্দা, দেড় হাজারের মত পরিবার। তাদের সব কিছু শেষ হয়ে গেছে। কোনো ঘর-বাড়িই আর অক্ষত নেই।’

তিনি বলেন, ‘আমার ছয় বোন, বাবা-মা নেই। দুই বোনকে বিয়ে দিয়েছি। চারবোন হামলার দিন আমার সঙ্গে বাড়িতে ছিলো। দুই বোন পালিয়ে কক্সবাজারের কুতুপালং গেছে বলে জানতে পেরেছি। বাকি দুই বোন কোথায় আছে জানিনা।’

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ সংলগ্ন মায়ানমারের সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশের মোবাইল ফোন কোম্পনিগুলোর নেটওয়ার্ক কাজ করে এবং ওইসব এলাকায় বাংলাদেশের মোবাইল ফোন কোম্পানির সিম ব্যবহার হয়। নূর মোহাম্মদের সঙ্গে চার দফা কথা হয়েছে। তবে তাকে সব সময় মোবাইল ফোনে পাওয়া যায়নি। মাঝে মাঝে পাওয়া গেছে। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাঝে মাঝে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক ডাউন হয়ে যায়।’

তিনি বলেন, ‘আমি বাংলাদেশে আশ্রয়ের জন্য আসার চেষ্টা করছি। ওখানে আমার আত্মীয়-স্বজন আছে। কিন্তু আসতে পারবো কিনা জানিনা।’

এদিকে জাতিসংঘের প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ‘গত ছয় সপ্তাহে ২২ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। শুক্রবার এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ জানায়, ৯ অক্টোবর থেকে রাখাইনে শুরু হওয়া মায়ানমার সেনাবাহিনীর দমন-অভিযানে অন্তত ৮৬ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া ঘর হারিয়েছেন ৩০ হাজার মানুষ। নির্যাতন থেকে বাঁচতে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ সীমান্তে ছুটে আসছেন। সূত্র: ডয়চে ভেলে
১১ ডিসেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে