সোমবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭, ০৯:৪০:৫১

এখনো প্রধানমন্ত্রীর সাহায্যের অপেক্ষায় প্রতিবন্ধী ফায়জুল

এখনো প্রধানমন্ত্রীর সাহায্যের অপেক্ষায় প্রতিবন্ধী ফায়জুল

আকরামুল ইসলাম : দু’পা নেই। দুই হাতের ৬টি আঙ্গুলও নেই। চারটি আঙ্গুল থাকলেও তা পরিপূর্ণ নয়। এভাবে প্রতিবন্ধী জীবন নিয়েও থেমে নেই ফায়জুল ইসলাম। জীবন-জীবিকার তাগিদে প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ছোট্ট একটি চা-পানের দোকানকেই বেছে নিয়েছেন বেঁচে থাকার অবলম্বন হিসেবে। ৭ বছর ধরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার এলাকার পেট্রোবাংলার সামনে ছোট্ট একটি অস্থায়ী দোকান তার।

রোববার সন্ধ্যায় চা খেতে খেতে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপচারিতায় ৫৫ বছর বয়সী ফায়জুল ইসলাম বলেন তার কষ্টে ভরা জীবন কাহিনী।

তিনি বলেন, গরীবের ঘরে জন্ম আমার। বাবা হাতেম আলী হাওলাদার কৃষিকাজ করতেন। অভাবের সংসারে তিনি একদিন মারা গেলেন, আমি তখন খুব ছোট। একদিন মাও মারা গেলেন। এরপর ৩৫ বছর আগে গ্রামের বাড়ি পিরোজপুর জেলার চুঙ্গোবাসা এলাকা থেকে ঢাকায় চলে আসি। অন্যের জায়গায় থাকতাম। কোনো ঘরবাড়িও নেই।

ঢাকায় আসার পর অসুস্থ হয়ে পড়ি। শ্রম দিয়ে উপার্জিত টাকা দিয়ে অনেক ডাক্তারও দেখাই। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ডাক্তার বলেন, রক্তনালী বন্ধ হয়ে গেছে। দু’পা কেঁটে ফেলতে হবে। দু’পা কেঁটে ফেলতে হয়। আঙ্গুল গুলোও আস্তে আস্তে নষ্ট হয়ে যায়। শুরু হয় প্রতিবন্ধী হয়ে জীবনের পথচলা। প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ছোট্ট এ দোকানে থাকি। ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা রোজগার হয় প্রতিদিন। কোনোভাবে সংসারটা চলে যাচ্ছে।
 
আলাপচারিতায় তিনি আরো বলেন, স্ত্রী সম্পা আর মেয়ে ফারজানা আক্তার কলিকে নিয়ে তেজগাঁও এলাকার রেল কলোনীতে বসবাস করছি বহু বছর। মেয়েটার বয়স এখন ১৫ বছর। ইন্দ্রিরা রোড ঢাকা অরিয়েন্টাল কলেজের এইচএসসির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। মেয়েটা পড়ালেখায় খুব ভালো।
 
করো কাছে সহায়তা চান কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, না, সংসার চালাতে কারো কাছে আমি সহায়তা চাই না। তবে মেয়েটার লেখাপড়াটা নিয়ে একটু সমস্যা হয়। লেখাপড়ার পেছনেও অনেক খরচ, সেগুলো জোগাড় করতে সমস্যা হয়।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ৮ বছর আগে বাংলাদেশ চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে একটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে বলেছিলেন, তুমি যদি প্রতিবন্ধী হয়ে ব্যবসা করতে পারো তবে ব্যবসা করার জন্য সহযোগিতা করা হবে। কিন্তু সে সহযোগিতা আজো পায়নি। আমার আর চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। প্রধানমন্ত্রী যদি আমার মেয়েটার একটা উপায় করে দিতো তবে শান্তিতে মরতে পারতাম।

ফায়জুল ইসলামের মেয়ে ইন্দ্রিরা রোডের ঢাকা অরিয়েন্টাল কলেজের এইচএসসির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ফারজানা আক্তার কলি জানান, লেখাপড়ার খরচ জোগাতে আব্বু হিমশিম খায়। তারপরও যেকোনো ভাবেই তিনি সবকিছু জোগাড় করে দেন। -জাগো নিউজ।
০৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে