বিশেষ প্রতিনিধি : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এখন লন্ডনে। এ খবর এখন একটু বাসি হলেও তিনি লন্ডনে কী করছেন, আর কী করবেন—এ নিয়ে চলছে বিস্তর জল্পনা-কল্পনা। এরই মধ্যে আরও নতুন খবর হলো, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাও লন্ডনমুখী হচ্ছেন। এমনকি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও লন্ডন যাবেন বলে দলীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র মতে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেয়ার পর অক্টোবরে নিউইয়র্ক থেকে দেশে ফেরার পথে প্রধানমন্ত্রী লন্ডন যাবেন। এছাড়া জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের লন্ডন যাওয়াও প্রায় নিশ্চিত।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে মঙ্গলবার রাতে একই ফ্লাইটে লন্ডনে গেছেন তার উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও তাবিথ আউয়াল। তাবিথের বাবা বিএনপি চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টু ব্যাংকক থেকে লন্ডনে পৌঁছেছেন খালেদা জিয়ার তিনদিন আগেই। ঢাকা থেকে গত মঙ্গলবার অর্থনীতি বিষয়ক একটি সেমিনারে যোগ দিতে দিল্লি গেছেন বিএনপি নেত্রীর আরেক উপদেষ্টা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। সেমিনার শেষে তিনিও লন্ডন যাবেন বলে দলীয় সূত্র জানায়।
জানা গেছে, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহর থেকে লন্ডনে এসে যুক্ত হচ্ছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ড. ওসমান ফারুক, বিএনপির অর্থবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম ও আন্তর্জাতিক-বিষয়ক সম্পাদক এহসানুল হক মিলন।
সূত্রমতে, বিএনপির শীর্ষ নীতি-নির্ধারদের অনেকেই এখন লন্ডনে। আবার কেউ-কেউ লন্ডনের পথে। এই তালিকা আরও দীর্ঘ হতে পারে। দীর্ঘ আট বছর পর পরিবারের সবাইকে নিয়ে লন্ডনে খালেদা জিয়ার এবার ঈদুল আজহা পালনই লন্ডন সফরের মুখ্য উদ্দেশ্য নয় বলে মনে করছেন রাজনীতি বিশ্লেষকেরা। তাদের মতে, মূল কারণ আরও গভীরে।
সূত্র জানায়, এই সফরে খালেদা জিয়া বিএনপি’র ভবিষ্যৎ রাজনীতি নিয়ে বড় ধরনের কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। আর এই সিদ্ধান্তের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হলো, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের আগামী নির্বাচনে প্রার্থিতা নিয়ে অনিশ্চয়তা। কারণ, দুর্নীতি মামলায় শাস্তি হলে দুজনই আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা হারাতে পারেন।
আর আগাম নির্বাচনের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ সরকারের ওপর কিভাবে বাড়ানো যায়, এ নিয়েও লন্ডনে সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে মনে করছেন রাজনীতি বিশ্লেষকেরা। তাদের মতে, বিএনপির প্রায় একডজন শীর্ষ নেতা বেশ কয়েকমাস ধরে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে আছেন এই কাজেই।
অন্যদিকে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭০তম অধিবেশনে যোগ দিতে ২৩ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৬০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী ছাড়াও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী সরাসরি নিউইয়র্ক থেকে দেশে ফিরছেন না। ১ অক্টোবর নিউইয়র্ক থেকে প্রধানমন্ত্রী দেশে ফেরার পথে লন্ডন যাবেন। সেখান থেকে ৩ অক্টোবর তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
এছাড়া, আগামী ২০ সেপ্টেম্বর লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। সৈয়দ আশরাফের স্ত্রী ও একমাত্র মেয়ে থাকেন লন্ডনে। তবে, এমন এক সময় তিনি লন্ডন যাচ্ছেন, যখন খালেদা জিয়াসহ বিএনপির শীর্ষ নেতারাও সেখানে। তাই, তার এই সফরকে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাও শুধু স্ত্রী-কন্যার সঙ্গে ঈদ করা বা দেখা করার সফর বলে মনে করেন না।
দুটি কথা রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে। প্রথমত, সৈয়দ আশরাফের লন্ডন সফর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের ‘লন্ডনমিলন’-এর ওপর নজরদারির জন্য। যেন কোনও পরিস্থিতির উদ্ভব হলে তার তথ্য সরাসরি পাওয়া যায়। পাশাপাশি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়াও যায়। আর দুই দুদলের নেতাদের মধ্যে লন্ডন বৈঠকের কথাও শোনা যাচ্ছে। তাই, দুদলের শীর্ষ নেতাদের লাইন দীর্ঘ হচ্ছে লন্ডনে। সেখানে কোনও সফল বৈঠক হলে, পরবর্তী সময়ে বিস্তারিত বৈঠক হবে দেশে ফিরে। সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিউইয়র্ক থেকে ঢাকা ফেরার আগে লন্ডনে যাওয়া কি কোনও তাৎপর্য বহন করে—এমন প্রশ্নও তুলছেন কেউ কেউ। তাই যদি হয়, তাহলে লন্ডনে যাত্রা করতে পারেন আরও বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা। সে সব জানতে আরও কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে ধারণা সূত্রের।
তবে তার আগে খবর হলো, মহাজোট এবং ১৪ দলের বেশ কয়েজন নেতাও লন্ডন যাওয়ার গ্রিন সিগন্যালের অপেক্ষায় রয়েছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।-বাংলা ট্রিবিউন
১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে