শুক্রবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৩:২৭:১৫

অপহরণকারীদের হাত থেকে ফিরে এসে যা বললেন সিজার

অপহরণকারীদের হাত থেকে ফিরে এসে যা বললেন সিজার

নিউজ ডেস্ক:  ফিরে আসা মুবাশ্বার হাসান সিজার তার বন্দি দিনগুলোর কথা জানিয়ে বলেছেন, ‘অপহরণ না হলে রিয়ালাইজ করা যায় না, কী ঘটে? কী হয়েছে, না হয়েছে? আমার পরিবারের উপর দিয়ে এই এক মাস ১৪ দিন একটি সাইক্লোন বয়ে গেছে।’

জীবন সংশয় নিয়ে বন্দি থাকা সেই সময়টি তার জন্য, তার পরিবারের জন্য কতটা ভয়াবহ ছিলো, দুঃসহ ছিলো তাই ধ্বনিত হয় তার কন্ঠে।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মুবাশ্বার হাসান সিজার। নিখোঁজের একমাস ১৪ দিন পর বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত একটায় তিনি পরিবারের কাছে ফিরে আসেন।

গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে সাবেক সাংবাদিক সিজার কথা বলার সময় তার সঙ্গে ছিলেন তার বাবা মোতাহের হোসেন এবং বোন তামান্না তাসমিন। কথা বলতে গিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন সিজার। তিনি গণমাধ্যমকর্মী, বন্ধুবান্ধব ও শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সিজার বলেন, ‘অনেক দিন পর দিনের আলো দেখলাম।’

‘একে ছাড়বো, না মারবো,’ সিজারের অপহরণকারীরা এ নিয়ে বাহাস করতো বলে জানান তিনি। সিজারকে গতরাতে বিমানবন্দর এলাকায় নামিয়ে দেয়ার সময়ও তাকে হুমকি দিয়ে তারা বলে, পেছনে তাকালেই মেরে ফেলবো। এর আগের প্রায় দেড় মাস অন্ধকার একটি ঘরে আটকে রাখা হয় তাকে।

সিজার বলেন, কে বা কারা আমাকে অজ্ঞান করে নিয়ে যায়। প্রায় চুয়াল্লিশ দিন অন্ধকার ঘরে আমাকে আটকে রাখে। চল্লিশদিন পর আলোর মুখ দেখলাম। গতকাল রাতে হাত বাঁধা অবস্থায় আমাকে এয়ারপোর্ট রোডে ফেলে রেখে যায়। আমাকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে বলে, পেছনে তাকাবি না। তাকালে মেরে ফেলবো। আমি একটা সিএনজি নিয়ে বাড়ি আসি। রাস্তায় থাকতে সিএনজিওয়ালার মোবাইল দিয়ে বাবাকে ফোন দেই। বাবা সিএনজি ভাড়া দিয়ে দেন।

সিজারের বাবা মোতাহের হোসেন সিজারের ফিরে আসার কথা জানিয়ে বলেন, সিজার বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে দক্ষিণ বনশ্রীর বাসায় ফিরেন।

দুপুরের দিকে সিজারের বোন তামান্না সংবাদকর্মীদের জানান, সিজারের রেস্টের প্রয়োজন। তিনি এখন ঘুমাচ্ছেন।

এর আগে সিজার জানান: অপহরণকারীরা আমার প্রোফাইল বুঝতে পারেনি। তারা বলছিলো, ‘তুইতো বিভিন্ন জায়গায় কাজ-টাজ করোস, তোর অনেক টাকা পয়সা আছে। বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে এমন কেউ আছে কিনা, যে বড় অ্যামাউন্টের টাকা দিতে পারবো?’

মুবাশ্বার জানান, অপহরণের সময় তার কাছে ২৭ হাজার টাকা ছিলো। এই টাকা অপহরণকারীরা রেখে দিয়েছে।

অপহরণকারীদের মধ্যে কোন একটা কিছু নিয়ে বাকবিতণ্ডা হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি জানান, অপহরণকারীদের মধ্যে কেউ মে বি মিসিং ছিলো। এইটা নিয়ে ওদের বাকবিতণ্ডা হয়েছিল।

তিনি বলেন: ‘কিছুদিন ধরে অপহরণকারীদের মধ্যে বিতণ্ডা চলছিল। একে ছাড়বো, না মেরে ফেলব- এ রকম কথাবার্তা হচ্ছিল।’

তিনি বলেন, আমরা খুব নরমাল ফ্যামিলি। আমাদের জন্য দোয়া করবেন।

মিডিয়া কাভারেজ, বন্ধু-বান্ধব, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

সিজার জানান, যে ঘরটিতে এত দিন বন্দী ছিলেন সেখানে একটি জানালা ছিল। কিন্তু সেটি সিল করে বন্ধ করে দেওয়া। ফলে ঘর অন্ধকার থাকত। ময়লা তোশক ছিল। সেখানেই ঘুমাতেন। পাশেই আরেকটা ঘর ছিল। সেখান থেকে অন্য মানুষের কথাবার্তা শুনতে পেতেন তিনি। তাকে খেতে দেয়া হতো হোটেলের ঠাণ্ডা খাবার।

ছেলেকে ফিরে পেয়ে সিজারের বাবা মোতাহার হোসেন বলেন, ‘আমাদের মনে হচ্ছে আমরা নতুন জীবন ফিরে পেয়েছি। আমরা খুব খুশি।’

কয়েকদিন আগে ফিরে আসা সাংবাদিক উৎপলের মতো তার কাছেও অপহরণকারীরা পত্যক্ষভাবে যোগাযোগ করে টাকা চাইতো বলে তিনি জানান।

তবে কে বা কারা সিজারকে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে এ ব্যাপারে তিনি কিছু বলতে পারেন নি। মোতাহের হোসেন জানিয়েছেন, সাংবাদিক উৎপল দাস যেভাবে ফিরে এসেছেন ঠিক একইভাবে সিজার ফিরেছেন।

খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সিজার রাতে বাসায় ফিরেছেন বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদের জানানো হয়েছে। তবে তিনি এতদিন কোথায় ছিলেন এ বিষয়ে কিছুই জানা যায়নি।

গত ৮ নভেম্বর রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বেগম রোকেয়া সরনি থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মুবাশ্বার হাসান সিজার।

সিজার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতক করার পর যুক্তরাজ্যে মাস্টার্স ও অস্ট্রেলিয়ায় পিএইচডি করেন। একসময় সাংবাদিকতাও করেছেন তিনি।

আলোচনা ডটকম নামে একটি সাময়িকীর সম্পাদক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সিজার বাংলাদেশের কয়েকটি সংবাদমাধ্যম ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও সাংবাদিকতা করেছেন।

এদিকে সিজারের বাড়ি ফেরার আগে ‘নিখোঁজ’ হওয়ার দুই মাস ১০ দিন পর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক উৎপল দাসের খোঁজও মিলেছে।

মঙ্গলবার ( ১৯ ডিসেম্বর) রাতে অপহরণকারীরা নারায়ণগঞ্জের ভুলতায় শাহজালাল সিএনজি ফিলিং স্টেশনের সামনে উৎপল দাসকে রেখে যায়। পুলিশ তাকে ফাঁড়িতে নিয়ে আসে। পরে তার পরিবারের লোকজন গিয়ে পুলিশের সহযোগিতায় বুধবার ভোরে তাকে নিজ বাড়ি রায়পুরায় নিয়ে আসেন।
২২ ডিসেম্বর ২০১৭/এমটিনিউজ২৪.কম/হাবিব/এইচআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে