সিম নিবন্ধনে আঙুলের ছাপ নিয়ে লংকা কান্ড
নিউজ ডেস্ক: মোবাইলফোনের সিম নিবন্ধন ও পুনর্নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় আঙুলের ছাপ (বায়োমেট্রিক) পদ্ধতির প্রয়োগ নিয়ে রীতিমতো তুঘলকিকাণ্ড শুরু হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে আঙুলের ছাপের ব্যবহার শুরুতেই দেখা গেছে জটিলতা। রবিবার এই কার্যক্রম শুরুর প্রথমদিনই মোবাইলফোন অপারেটরগুলোর কাস্টমার কেয়ারে রক্ষিত ডিভাইসে গ্রাহকরা আঙুলের ছাপ দিতে গেলে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জাতীয় পরিচয়পত্রের ডাটাবেজে রক্ষিত আঙুলের ছাপের সঙ্গে মিল পাওয়া যাচ্ছে না (ম্যাচ করেনি)। ফলে এখন সবার প্রশ্ন- আঙুলের ছাপ না মিললে কী হবে?
টেলিটক, বাংলালিংক, রবির কাস্টমার কেয়ারে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যায়। যদিও বলা হচ্ছে, এটা পরীক্ষামূলক কার্যক্রম। এই পরীক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনায় দেখা যাবে কী ধরনের সমস্যার উদ্ভব হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে এই কার্যক্রম শুরুর আগে উদ্ভূত সমস্যার সমাধান করা হবে।
প্রসঙ্গত, ১৫ নভেম্বর থেকে দেশে পরীক্ষামূলকভাবে মোবাইলফোনের সিম নিবন্ধন ও পুনর্নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় আঙুলের ছাপের ব্যবহার শুরু হয়েছে। আগামী ১৬ ডিসেম্বরে এই কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে। চলবে আগামী বছরের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত।
আঙুলের ছাপ ব্যবহার নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি সম্পর্কে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ১৬ ডিসেম্বরের আগে এর সমাধান করা না গেলে সমস্যাটি বড় ধরনের জটিলতা তৈরি করতে পারে এবং সেই জটিলতার শিকার হবেন ১৩ কোটি গ্রাহক। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তৈরি সময় আঙুলের ছাপ গ্রহণ, সংরক্ষণ ও বিন্যাসকরণ প্রক্রিয়ায় গলদ এবং গাফিলতি থাকায় গ্রাহকদের বড় ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হবে। তারা আরও বলেন, আঙুলের ছাপ গ্রহণকালে কিছু নিয়মকানুন মানতে হয়, কিছু পদ্ধতিও অবলম্বন করতে হয়। ইসি এনআইডি করার সময় সেসবের মান অনুসরণ ও পদ্ধতি অবলম্বন নিয়ে তারা সন্দেহ প্রকাশ করেন। সন্দেহটা যন্ত্রটির মাধ্যমে আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়েছে সেই যন্ত্রটি নিয়েও। তারা বলেন, ওই যন্ত্রটিও মানসম্মত ছিল না।
মোবাইলফোন অপারেটরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলাপের সময় তারা কেউই উদ্ধৃত হয়ে কথা বলতে রাজি হননি। নাম পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, আমরাও এ ধরনের জটিলতা আঁচ করতে পেরেছিলাম। তবে তারা এ-ও বলেন, এতে গ্রাহকের কিছুটা ভোগান্তি হলেও সুরক্ষিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা শতভাগ নিশ্চিত হবে। তারা জানালেন, তাদের কাছে নির্দেশনা রয়েছে- কোনও গ্রাহকের আঙুলের ছাপ না মিললে তাকে ইসিতে যোগাযোগ করতে হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্রাহকের আঙুলের ছাপ না মিললে সে দায় গ্রাহককেই নিতে হবে এবং সংশোধনও তাকে করতে হবে। তবে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, এ ধরনের জটিলতা এড়াতে শিগগিরই বিকল্প পথে হাঁটতে পারে সংশ্লিষ্টরা। একটি যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য উপায়ও তারা বাতলেছেন। বলেছেন, বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে যাদের আঙুলের ছাপ এনআইডির ডাটাবেজে রক্ষিত ছাপের সঙ্গে মিলবে না তাদেরকে কাস্টমার কেয়ারে মূল এনআইডি দেখাতে হবে। এটা দেখানোর পরে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আঙুলের ছাপ নিয়ে ডিভাইসের মাধ্যমে এনআইডি ডাটাবেজে পাঠিয়ে সংরক্ষণ করার বিষয়ে নির্দেশনা আসতে পারে। যদিও বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত নয়।
জানা যায়, এর আগে একবার বিটিআরসি, নির্বাচন কমিশন, সব মোবাইলফোন অপারেটর, অ্যামটব যৌথভাবে দৈবচয়ন পদ্ধতিতে আঙুলের ছাপ পরীক্ষা (এনআইডি ডাটাবেজে রক্ষিত ছাপের সঙ্গে) করে। ফলাফলে দেখা যায় মাত্র ১০ শতাংশের মিল রয়েছে ডাটাবেজের সঙ্গে। সেই থেকে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের ধারণা ইসির আঙুলের ছাপ সংগ্রহ পদ্ধতিতে ত্রুটি রয়েছে। ওই ফলাফলের ওপর ভিত্তি করেই সংশ্লিষ্টদের প্রশ্ন, ১৩ কোটি সিমের মধ্যে কতগুলোর সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে এবং আঙুলের ছাপের সঙ্গে মিলবে। সেক্ষেত্রে দেশের কত সংখ্যক মোবাইলফোনের গ্রাহককে ইসিতে যেতে হবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।
এদিকে জিএসএম (গ্লোবাল সিস্টেম ফর মোবাইল) জানাচ্ছে, দেশের মোট মোবাইল ব্যবহারকারীর মধ্যে (১৩ কোটি) ৮ কোটি ব্যবহারকারী ডুয়াল সিম ব্যবহার করেন। একটি সিম ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫ কোটি। অন্যদিকে ইসি সূত্রে জানা যায়, দেশে বর্তমানে এনআইডিধারীর সংখ্যা ১০ কোটি। এই সংখ্যক এনআইডিধারীর বিপরীতে কতগুলোর আঙুলের ছাপ সঠিক তা নিয়ে এরইমধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
মোবাইলফোন অপারেটর রবি আঙুলের ছাপ গ্রহণে একের ভেতরে তিনের ভূমিকা পালন করছে। জানা যায়, রবি যে ডিভাইসের মাধ্যমে আঙুলের ছাপ নিচ্ছে তাতে আরও দুটি অপারেটরের গ্রাহকের আঙুলের ছাপ নেওয়া হচ্ছে। অন্য দুই অপারেটর হলো এয়ারটেল ও টেলিটক। এ ব্যাপারে রবির রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্সের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কোম্পানি সেক্রেটারি মোহাম্মদ শাহেদুল আলম বলেন, একজন ব্যবসায়ীর (সিম বিক্রেতা) কাছে যদি ৬টি ডিভাইস থাকে তাহলে তিনি তার ব্যবসা সামলাবেন নাকি ডিভাইসগুলোই সামলাবেন? এ কারণে আমরা একটি ডিভাইসের মাধ্যমে সমন্বিতভাবে কাজ করতে চেয়েছি। তিনি আরও বলেন, আমরা সিটিসেলকেও প্রস্তাব দিয়েছি। সিটিসেল এখনও সাড়া দেয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এরইমধ্যে রবি তাদের এজেন্ট, খুচরা ব্যবসায়ীদের ডিভাইস পরিচালনার জন্য প্রশিক্ষণ দিয়েছে। রাজধানীর মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনের মোবাইল সিম বিক্রেতা মোহাম্মদ পলাশ জানালেন, রবি তাদের ৩ দিন হুয়াওয়ে ডিভাইস দিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। প্রশিক্ষণের ফলে কাজটি তার জন্য এখন খুবই সহজ হয়েছে বলে তিনি জানান। তাকে জানানো হয়েছে, ১৬ ডিসেম্বর থেকে এটির ব্যবহার শুরু হবে।
১৮ নভেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/পিবি/পিপি
�