এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : রাজশাহীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এক দিনে বছরের সর্বোচ্চ ১৬৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর মধ্যে আট ঘণ্টায় হয়েছে ১৬১ মিলিমিটার। যা চলতি বছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত বলে জানিয়েছে রাজশাহীর আবহাওয়া অফিস।
এই রেকর্ড বৃষ্টিপাতের কারণে নগরজুড়ে দেখা দেয় ব্যাপক জলাবদ্ধতা। অফিস-আদালত, বাড়িঘর, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নিচতলায় দেখা দেয় হাঁটুপানি। এমনকি নগরীর কাদিরগঞ্জ-হেতেম খাঁ, সিঅ্যান্ডবি-কোর্ট, উপশহর-তেরোখাদিয়া, বহরমপুর, লক্ষ্মীপুরসহ ২৫-৩০টি রাস্তার কোথায় কোথাও কোমর ছুঁয়েছে পানি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরের কয়েকটি সড়কেও দেখা দেয় হাঁটুপানি। এতে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়ে নগরবাসী। পানি সরাতে কোথাও কোথাও শ্যালো মেশিন চালাতেও দেখা গেছে।
সচেতন নগরবাসী বলছেন, নগরীতে অবাধে পুকুর ভরাট এবং ড্রেনগুলো ময়লা-আবর্জনায় পরিপূর্ণ থাকার কারণে এক দিনের বৃষ্টিতে ডুবে গেছে নগরীর নিম্নাঞ্চলগুলো।
রাজশাহীর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসের বেশ কয়েক দিন থেকে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। তবে সামান্য। কখনো হালকা, কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে চলতি মৌসুমে ২৪ ঘণ্টায় ১৬৬ মিলিমিটার বৃষ্টির রেকর্ড এই প্রথম।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক আব্দুস সালাম জানান, বুধবার (৪ অক্টোবর) রাত ১০টার আগে রাজশাহীতে বৃষ্টিপাত হয়েছে পাঁচ মিলিমিটার। একই দিন রাত ১০টা থেকে বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) সকাল ৬টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে ১৬১ মিলিমিটার। এখনো বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে।
নগরীর তেরোখাদিয়া এলাকার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা তৈয়বুর রহমান আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুরে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বুধবার রাত ১১টার দিকে রাজশাহীতে ব্যাপক বৃষ্টিপাত শুরু হয়। এরপর রাত ৩টার দিকে ঘরে পানি উঠতে শুরু করে। ভোরের দিকে পানি খাটের কাছাকাছি চলে আসে। উপায়ান্তর না পেয়ে ঘরের জিনসপত্র খাটের ওপরে রেখে বসে আছি। বাড়ির বাইরেও কোমর পর্যন্ত পানি। পানির কারণে ঘরবন্দি হয়ে আছি আমরা। আমাদের মতো এই এলাকার শত শত পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছে।’
একই অবস্থা নগরীর নতুন বিলশিমলা এলাকার আরিফুল ইসলামের বাড়িতেও। আজ বেলা ১২টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির ভেতরের নিচতলায় হাঁটুপানিতে সয়লাব। পানি সরানোর জন্য তিনি একটি শ্যালো মেশিন ভাড়া করে নিয়ে এসে পানি সেচ দিচ্ছিলেন।
আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বাড়িসহ আশপাশের শত শত বাড়ির নিচতলা ডুবে গেছে। রাস্তায় কোমর পর্যন্ত পানি উঠে গেছে। মানুষ ঘরের বাইরে যেতে পারছে না। আমরা রাজশাহীর স্থানীয় বাসিন্দা। কিন্তু এর আগে কখনোই এমন জলাবদ্ধতা দেখিনি।’
নগরীর অভিজাত এলাকা উপশহরের সব রাস্তা হাঁটুপানিতে ডুবে গেছে। ওই এলাকার শত শত বাড়ির নিচতলা ডুবে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দা আকবর হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘শহরজুড়ে এত উন্নয়ন হয়েছে, কিন্তু ড্রেনগুলো পরিষ্কার করা হয়নি। ড্রেনের পানি উপচে রাস্তা ডুবে গেছে। রাস্তার পানি বাড়িতে ঢুকছে।’
এদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ডিআইজি অফিস, বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, রুয়েট, কোর্ট চত্বরসহ নগরীতে শতাধিক অফিস চত্বর ডুবে গেছে। জলাবদ্ধতার কারণে আজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিত খুবই কম ছিল। রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল খালেক বলেন, ‘বৃষ্টি আর জলাবদ্ধতার কারণে আজ শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি অর্ধেকের নিচে ছিল।’
বেসরকারি সংস্থা পরিবর্তনের রাজশাহী নির্বাহী পরিচালক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রাশেদ ইবনে ওবায়েদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নগরীতে যাচ্ছেতাইভাবে শত শত পুকুর ভরাট হয়েছে গত কয়েক বছরে। এখনো পুকুর ভরাট থামেনি। এ কারণে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার কোনো জায়গা নেই। আর সেই পানি এখন ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। আবার ড্রেনগুলো সময়মতো পরিষ্কার করা হয় না। ময়লা-আবর্জনায় ভর্তি ড্রেনগুলো দিয়ে ঠিকমতো পানি নামছে না। এর ফলে এক রাতের বৃষ্টিতে নগরজুড়ে যে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে তাতে ব্যাপক ভোগান্তি নেমে এসেছে সাধারণ মানুষের মাঝে।’
নগরীর প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা শেখ মামুন ডলার বলেন, ‘ব্যাপক বৃষ্টির কারণে নগরীতে জলাবদ্ধতা হয়েছে। তবে পানি দ্রুত নেমে যাবে। অধিকাংশ ড্রেনের মুখ বন্ধ হয়ে গেছে ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে। পুকুর ভরাটও জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ।’