মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৪, ১২:১৩:৫৪

‘আমাকে ইলেকট্রিক শক, হাত-পা-চোখ বেঁধে উল্টো করে ঝুলিয়ে নির্যাতন করা হয়’

‘আমাকে ইলেকট্রিক শক, হাত-পা-চোখ বেঁধে উল্টো করে ঝুলিয়ে নির্যাতন করা হয়’

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : দিনটি ছিল ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। উত্তরার দিয়াবাড়ী তুরাগ থেকে একটি গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন তুলে নেন আইনজীবী ড. জাহিদুল হককে। সেখান থেকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে চারদিন তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়। এ সময় ড. জাহিদকে ক্রসফায়ার দিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেয় তারা। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার চিফ প্রসিকিউটরের দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি 

শুধু জাহিদুল হক নন, অপহরণ করে আয়নাঘরে নিয়ে নির্যাতনের ঘটনায় গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করেছেন রাজধানীর গ্রিন রোড এলাকার বাসিন্দা হুমায়ুন কবির। ২০১৮ সালের ২৭ অক্টোবর পিরোজপুর যাওয়ার পথে সদরঘাট টার্মিনালের ঢাকা-হুলারহাটগামী স্টিমার থেকে সন্ধ্যা ৬টার দিকে সাদা পোশাকের অস্ত্রধারী ৫ ব্যক্তি তাকে তুলে নেয়। এরপর ১১ দিন আয়নাঘরে বন্দি রেখে অমানসিক নির্যাতন চালায় তার ওপর। হুমায়ুন কবির তার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানসহ ৪২ জনের নাম উল্লেখ করেছেন।

ড. জাহিদ অভিযোগ করে বলেন, ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি একটি গোয়েন্দা সংস্থা আমাকে দিয়াবাড়ী তুরাগ থেকে হাত-চোখ বেঁধে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায়। আমাকে ক্রসফায়ার দিয়ে হত্যার হুমকি দেয় তারা। এ সময় তারা আমার মালিকানায় থাকা আশুলিয়ার একটি পাঁচতলা বাড়ি আইপিডির কাছে মর্টগেজ দলিলে জোরপূর্বক স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। এ ছাড়া ব্লাঙ্ক নন-জুডিশিয়াল খালি স্ট্যাম্পে ও আইপিডিসির লোগো প্রিন্টেড কাগজে জোরপূর্বক স্বাক্ষর করিয়ে নেয় তারা।

অপহরণের পর নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে হুমায়ুন কবির বলেন, ২০১৮ সালের ২৭ অক্টোবর সদরঘাট থেকে আমাকে তুলে নিয়ে ১১ দিন ‘আয়নাঘরে’ বন্দি করে রাখা হয়। এ সময় আমাকে ইলেকট্রিক শক, হাত-পা-চোখ বেঁধে উল্টো করে ঝুলিয়ে নির্যাতন করা হয়েছিল। সরকারের বিরুদ্ধে ব্লগে লেখালেখির কারণে আমাকে বন্দি করে নির্যাতন করা হয়।

এদিকে ১৭ বছর আগে ছাত্রশিবিরের ছয় কর্মীকে গুমের অভিযোগে র‍্যাব-ডিবির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গতকাল অভিযোগ দাখিল করেছে ভুক্তভোগীদের পরিবার। ছাত্রশিবিরের আইন সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান ও আইনজীবী আমানুল্লাহ আদিব সাংবাদিকদের কাছে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।

তারা জানান,‌ গত ১৫ বছর শিবির নেতাকর্মীর ওপর নির্যাতনের স্টিমরোলার চালিয়েছে শেখ হাসিনা সরকার। মামলা-হামলা, হত্যাসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ছয় শিবিরকর্মী এখনও গুম আছেন। তাদের খুঁজতে গত ৬ আগস্ট র‍্যাব সদরদপ্তরে গিয়েছিলেন পরিবারের সদস্যরা। কর্তৃপক্ষ তাদের সহযোগিতা করবে বলে জানালেও এখনও কোনো তথ্য দিতে পারেনি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গুম হওয়া ছয় নেতাকর্মীর সন্ধান ও র‍্যাব-ডিবির বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল করেছে তাদের পরিবার। 

নিখোঁজ ছয় শিবিরকর্মী হলেন– মোকাদ্দেস উল্লাহ, মো. ওয়ালিউল্লাহ, জাকির হোসেন, রিজওয়ান হোসেন, জয়নাল আবেদীন ও মো. কামরুজ্জামান। 

অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই রাজধানীর রামপুরায় সোহান শাহ নিহতের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ৫৭ জনের বিরুদ্ধে গতকাল সোমবার আরেকটি মামলা হয়েছে। ঢাকা মহানগর হাকিম আরবিয়া খানমের আদালতে গতকাল এ মামলা করেন নিহতের মা সুফিয়া বেগম। শুনানি শেষে আদালত রামপুরা থানার ওসিকে এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। 

গত ১৫ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় এদিন শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাতসহ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের ৩৯১ জনের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহিন সরকার শাহবাগ থানায় মামলাটি করেন। 

গত ৫ আগস্ট গণআন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এখন ২২৬টি মামলা আছে। এর মধ্যে ১৯৪টিই হত্যা মামলা।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে