রবিবার, ৩০ মার্চ, ২০২৫, ১২:২২:১৬

৭ বছর পর জিয়া পরিবারে অন্যরকম ঈদ

৭ বছর পর জিয়া পরিবারে অন্যরকম ঈদ

বোরহান উদ্দিন : সাত বছর পর এবার অন্যরকম ঈদ পালন করবেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের পরিবারের সদস্যরা। ২০১৭ সালের পর জিয়াউর রহমানের সহধর্মিনী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার এবারের ঈদ কাটবে বড় ছেলে, পুত্রবধূ ও আদরের নাতনিদের সঙ্গে। ২০১৮ সালের পর কারাগারে ঈদ কেটেছে বেগম জিয়ার। পরের ঈদগুলোতে শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে গুলশানের বাসায় কেটেছে। দেশে থাকা স্বজনদের পাশে পেয়েছেন কিন্তু পুরো পরিবারকে এতদিন কাছে পাননি তিনি। 

এবারের ঈদকে কেন্দ্র করে জিয়া পরিবারের উচ্ছ্বাস নেতাকর্মীদের মাঝেও ছড়িয়েছে। তারা বলছেন, এক-এগারোর মঈন-ফখরুদ্দিনের সময় জিয়া পরিবারের ওপর নির্যাতনের মধ্য দিয়ে তাদের একত্রে থাকার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে শারীরিক অসুস্থতার জন্য দীর্ঘ সময় ধরে বিদেশে থাকতে হয়েছে জিয়া পরিবারের ভবিষ্যৎ কান্ডারি তারেক রহমানকে।

অন্যদিকে এক-এগারোর সময়ের ‘মিথ্যা’ মামলায় সাজা দেওয়ার মাধ্যমে চেয়ারপারসনকে পরিবার থেকে আরও দূরে রাখার চেষ্টা হয়েছে বিগত সরকারের সময়। শর্তের বেড়াজালে আটকে দিয়ে কারাগার থেকে মুক্তি মিললেও আগের মতো আর ঈদ কাটাতে পারেননি বেগম খালেদা জিয়া।

আমরা খুবই উচ্ছ্বসিত, আমাদের নেত্রীর জন্য আন্দোলন করে ওনাকে দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য আনতে সক্ষম হয়েছি। নেত্রীর সঙ্গে সবাইকে নিয়ে আমরা ঈদ করতে পারব, সেজন্য আমরা আনন্দিত।
—এম এ মালেক, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা

নেতাকর্মীরা বলছেন, ঈদের দিন নেতাকর্মীদের সঙ্গে দলীয় চেয়ারপারসনের শুভেচ্ছা বিনিময়ের একটি রীতি ছিল। সারা বছর সবাই এই দিনটির জন্য উম্মুখ হয়ে থাকতেন। কিন্তু ২০১৮ সালের পর থেকে সেই সুযোগ পাচ্ছেন না নেতাকর্মীরা। তবু ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর প্রায় পাঁচ হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যাওয়ায় সুযোগ পেয়েছেন, তাতে তারা খুশি। পাশাপাশি এবার জিয়া পরিবারের সবাই মিলে ঈদ করার সুযোগ পাচ্ছেন, এটাও তাদের জন্য বাড়তি আনন্দের।

তবে দেশের নেতাকর্মীরা চেয়ারপারসনকে কাছে না পেলেও এবার লন্ডনে থাকা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বেশ উচ্ছ্বসিত। ঈদের সময়টি দলীয়প্রধানের সঙ্গে কাটবে এমন প্রত্যাশা করছেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সভাপতি এম এ মালেক বলেন, ‘আমরা খুবই উচ্ছ্বসিত, আমাদের নেত্রীর জন্য আন্দোলন করে ওনাকে দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য আনতে সক্ষম হয়েছি। নেত্রীর সঙ্গে সবাইকে নিয়ে আমরা ঈদ করতে পারব, সেজন্য আমরা আনন্দিত।’

২০১৭ সালে চিকিৎসার জন্য চেয়ারপারসন যুক্তরাজ্য গিয়েছিলেন তখন প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকো ছাড়া পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে ম্যাডাম (বেগম খালেদা জিয়া) ঈদ করেছিলেন। এরপর ভোটারবিহীন, একতরফা নির্বাচন, পরবর্তী সময়ে মিথ্যা মামলায় অন্যায়ভাবে সাজা দেওয়ায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তার ঈদ করার সুযোগ হয়নি। এবার সেই সুযোগটি এসেছে। ফলে এবারের ঈদের বৈশিষ্ট্য ভিন্ন। একটা স্বস্তির সময়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে চেয়ারপারসন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ সবাই ঈদ করবেন এটা আমাদের জন্য অনেক আনন্দের।
—শায়রুল কবির খান, সদস্য, বিএনপির মিডিয়া সেল

তথ্যমতে, এর আগে চিকিৎসার জন্য ২০১৭ সালের ১৬ জুলাই আরেকবার লন্ডনে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। তখন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঈদ করেছিলেন তিনি। পরের বছর দুর্নীতির মামলায় দণ্ড পেয়ে কারাগারে যেতে হয় তাকে। এরপর কোভিড মহামারি দেখা দিলে আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাহী আদেশে তাকে মুক্তি দিয়ে বাড়িতে থাকার সুযোগ করে দেয়। যদিও এই সময়ের মধ্যে হাসপাতাল থেকে বাসা, আবার অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে যাওয়া এভাবেই কেটেছে তার সময়। লিভার সিরোসিসহ নানা শারীরিক জটিলতা নিয়ে দিন কাটানো বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেয়নি পতিত সরকার।

পুরো সময় দলের শীর্ষ নেতাদের সৌজন্য সাক্ষাৎ আর দেশে থাকা স্বজনদের সঙ্গে সময় কাটানোর মধ্যে ঈদ পার করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘২০১৭ সালে চিকিৎসার জন্য চেয়ারপারসন যুক্তরাজ্য গিয়েছিলেন তখন প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকো ছাড়া পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে ম্যাডাম (বেগম খালেদা জিয়া) ঈদ করেছিলেন। এরপর ভোটারবিহীন, একতরফা নির্বাচন, পরবর্তী সময়ে মিথ্যা মামলায় অন্যায়ভাবে সাজা দেওয়ায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তার ঈদ করার সুযোগ হয়নি। এবার সেই সুযোগটি এসেছে। ফলে এবারের ঈদের বৈশিষ্ট্য ভিন্ন। একটা স্বস্তির সময়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে চেয়ারপারসন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ সবাই ঈদ করবেন এটা আমাদের জন্য অনেক আনন্দের।’

কেমন আছেন খালেদা জিয়া
৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসের জটিলতাসহ একাধিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। দলের পক্ষ থেকে দীর্ঘ চেষ্টা-তদবির করেও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তাকে বিদেশে পাঠানো যায়নি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর মুক্তি পান খালেদা জিয়া। চলতি বছরের শুরুতে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে যান তিনি।

কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে গত ৭ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে যান বিএনপির চেয়ারপারসন। সেখানে তাকে লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। গত ২৪ জানুয়ারি সেখান থেকে বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসায় ওঠেন খালেদা জিয়া। সেখানে তার মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে চিকিৎসা চলছে।

খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থা প্রসঙ্গে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া আগের চেয়ে ভালো আছেন। ঘরের ভেতরে তিনি নিজে নিজে হাঁটাচলা করছেন। নিজ হাতে খাবারও খাচ্ছেন।

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে খালেদা জিয়ার দিন আনন্দেই কাটছে বলে জানান জাহিদ হোসেন।

বেগম খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার বিষয়টি চিকিৎসকদের সিদ্ধান্তের ওপরই নির্ভর করছে। লন্ডন ক্লিনিকের চিকিৎসকেরা যেদিন উপযুক্ত মনে করবেন, সেদিন বিএনপির চেয়ারপারসন দেশে ফিরবেন।

কবে দেশে ফিরতে পারেন খালেদা জিয়া
চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়া বেগম খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার বিষয়টি নিয়ে রাজনীতির ভেতরে-বাইরে বেশ আলোচনা চলছে। তার অপেক্ষায় আছেন দলের নেতাকর্মীরাও। তবে তার দেশে ফেরার ব্যাপারে এখনো সুনির্দিষ্ট কিছু বলতে পারছেন না কেউ।

অবশ্য বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক জানিয়েছেন লন্ডন ক্লিনিকের চিকিৎসকরা যেদিন উপযুক্ত মনে করবেন সেদিন তিনি দেশে ফিরবেন।

ডা. জাহিদ হোসেন বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার বিষয়টি চিকিৎসকদের সিদ্ধান্তের ওপরই নির্ভর করছে। লন্ডন ক্লিনিকের চিকিৎসকেরা যেদিন উপযুক্ত মনে করবেন, সেদিন বিএনপির চেয়ারপারসন দেশে ফিরবেন।-বাংলা মেইল

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে