বুধবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৫, ০৭:৩২:৫৪

সারাদেশে রেলপথ ব্লকেডের ঘোষণা, একইসঙ্গে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক

সারাদেশে রেলপথ ব্লকেডের ঘোষণা, একইসঙ্গে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : ছয় দফা দাবিতে দিনভর রাজধানীর তেজগাঁও এলাকার সাতরাস্তা অবরোধ করে রেখেছেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। কর্মসূচিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলা ও ছয় দফা দাবি আদায়ে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে এবার ঢাকাসহ সারাদেশে রেলপথ ব্লকেডের ঘোষণা দিয়েছেন সরকারি ও বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে তারা অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন।

বুধবার (১৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় রাজধানীর তেজগাঁও সাতরাস্তা মোড়ে এ ঘোষণা দেন কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি জুবায়ের পাটোয়ারী।

জুবায়ের পাটোয়ারী বলেন, আজকের মতো সড়ক অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়েছে, তবে আন্দোলন থেমে নেই। এবার সারাদেশব্যাপী রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা অবরোধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

এই আন্দোলনকারী বলেন, কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক শোয়াইব আহমাদ খান, ঢাকা পলিটেকনিকের অধ্যক্ষ মো. মোস্তাফিজুর রহমানসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। তবে বৈঠকে আমরা একমত হতে পারিনি। তারা লিখিতভাবে আমাদের দাবিগুলো মেনে নেয়নি। তাই আমরা আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) রেলপথ ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা করছি।

এসময় তিনি সারা দেশের পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের এ কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানান।

এর আগে, সকাল সাড়ে দশটা থেকে তেজগাঁওয়ের সাত রাস্তা অবরোধ করে তারা। তাদের অবরোধে কার্যত অচল হয়ে পড়ে উত্তরা ও গুলিস্তান সায়েদাবাদ মুখী সকল যানবাহন। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন হাজারো মানুষজন। পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা গিয়ে তাদের নানাভাবে বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করেন কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসেন। পরে ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে নগরবাসীকে বিকল্প সড়ক ব্যবহারের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়। সন্ধ্যা পর্যন্ত সাত রাস্তা সড়কে সকল যান চলাচল বন্ধ ছিল। তবে অবরোধ প্রত্যাহারের পর স্বাভাবিক হয়েছে বলে জানা গেছে।

শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবির মধ্যে রয়েছে—

১. জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ প্রমোশন কোটা বাতিল করতে হবে। জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কর্তৃক বাতিল করতে হবে। ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদবি পরিবর্তন, মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের চাকরিচ্যুত করতে হবে। ২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।

২. ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যে কোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিল করতে হবে। উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম চালু করতে হবে এবং একাডেমিক কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে ইংরেজি মাধ্যমে করতে হবে।

৩. উপসহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (১০ম গ্রেড) থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও যেসব সরকারি, রাষ্ট্রীয়, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্ন পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৪. কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপসচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব পদে কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তা আইনানুগভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এই পদগুলোয় অনতিবিলম্বে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ ও সব শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।

৫. স্বতন্ত্র ‘কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা’ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা ও ‘কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠন করতে হবে।

৬. পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে একটি উন্নত মানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (নড়াইল, নাটোর, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও) পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস ও ডুয়েটের আওতাভুক্ত একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আগামী সেশন থেকে শতভাগ সিটে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে