সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫, ১০:২৯:০৭

এক দিনের ব্যবধানে হঠাৎ পেঁয়াজের কেজি কত হলো জানেন?

এক দিনের ব্যবধানে হঠাৎ পেঁয়াজের কেজি কত হলো জানেন?

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : পেঁয়াজের মৌসুম এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। তার আগেই বাজারে বাড়তে শুরু করেছে দাম। দেশের বিভিন্ন মোকামে কৃষক, ফড়িয়া ও ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ মজুত করে রাখছেন। তারা মনে করছেন, সামনে আরও দাম বাড়বে। তাই তারা চাহিদার তুলনায় কম পেঁয়াজ বাজারে ছাড়ছেন।

এ কারণে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে, যার প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজারেও। রাজধানীর মানিকনগর বাজারে ১২ এপ্রিল দেশি পেঁয়াজ কেজি প্রতি ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। কিন্তু গতকাল (২১ এপ্রিল) সেই বাজারেই পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে।

বিক্রেতা ইউসুফ আলী বলেন, “ঘাটে হঠাৎ করেই পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। কাস্টমারদের বোঝাতে গিয়ে বিপাকে পড়ছি।”

পেঁয়াজের দাম শুধু মানিকনগরেই নয়, বেড়েছে রাজধানীর অন্যান্য পাইকারি ও খুচরা বাজারেও। কারওয়ান বাজারে গতকাল দেশি পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা কেজিতে। কৃষি বিপণন অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, দেশের বিভিন্ন পাইকারি বাজারে কেজিপ্রতি দাম উঠেছে ৪০ থেকে ৫৩ টাকা পর্যন্ত। এক সপ্তাহ আগে এ দাম ছিল ২৭ থেকে ৪৬ টাকা।

এই হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধির কারণ খুঁজতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালিয়েছে। ছয়টি টিম বাজারে ঘুরে দেখেছে, আসলে সরবরাহে বড় কোনো সংকট নেই। মূলত পেঁয়াজ উৎপাদনকারী অঞ্চলে দাম বেড়ে যাওয়াতেই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফরিদপুর, পাবনাসহ কিছু এলাকায় কৃষক, ফড়িয়া এবং মজুতদাররা পেঁয়াজ ধরে রেখে সুবিধামতো বাজারে ছাড়ছেন। এতে মোকামে দাম বাড়ছে, যা শহরের বাজারেও প্রভাব ফেলছে।

ঢাকা বিভাগীয় ভোক্তা অধিকার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুস সালাম বলেন, ‘মিরপুর শাহ আলী বাজারে গিয়ে আমি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেছি। বাজারে কোনো অসাধু চক্রের তৎপরতা পাইনি। শুধু এক দোকানে মূল্যতালিকা না থাকায় তাকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’

পেঁয়াজ চাষি ও ব্যবসায়ীরাও জানিয়েছেন, মাঠে এখন আর পেঁয়াজ নেই। সব কৃষকের ঘরে বা মজুতদারদের কাছে চলে গেছে। অনেকে দাম বাড়ার আশায় পেঁয়াজ ধরে রাখছেন। ফলে বাজারে সরবরাহ কমেছে।

কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী মো. সেলিম বলেন, ‘ঢাকায় এখন সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ আসে ফরিদপুর থেকে। ভারতের পেঁয়াজ আসা বন্ধ থাকায় সবাই ধরেই নিচ্ছেন, সামনে দাম আরও বাড়বে। তাই ফরিদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় কৃষক ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ মাচায় তুলে রাখছেন। ফলে পাইকারি বাজারেই দাম বেশি।’

তথ্য বলছে, গত ১৫ দিনে ফরিদপুরের পাইকারি বাজারে প্রতি মণে (৪০ কেজি) পেঁয়াজের দাম প্রায় ৫০০ টাকা বেড়েছে। বোয়ালমারী উপজেলার ময়েনদিয়া বাজারে গত শনিবার প্রতি মণ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৮৫০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকায়। মানিকগঞ্জে গত শনিবার প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়।

তবে পেঁয়াজের দাম বাড়ায় খুশি অনেক কৃষক। ফরিদপুরের চাষি ইমরান হোসেন বলেন, ‘আমি ১০০ শতকে পেঁয়াজ চাষ করেছিলাম। মৌসুমের শুরুতে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হয়েছিল ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে। এতে কেজি পড়ে ২৬-২৭ টাকা। এতে লোকসান হচ্ছিল। এখন দাম বাড়ায় কিছুটা লাভ হচ্ছে। যদিও বেশিরভাগ পেঁয়াজ আগেই বিক্রি করে দিয়েছি।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, কৃষকের স্বার্থ রক্ষায় সরকার পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি (আইপি) আপাতত বন্ধ রেখেছে। সর্বশেষ ৩১ মার্চ পর্যন্ত অনুমতি দেওয়া হয়।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, দেশে প্রতিবছর প্রায় ৩৫ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়। এর ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ উৎপাদন হয় মার্চ ও এপ্রিল মাসে। তবে সংরক্ষণ সমস্যার কারণে প্রায় ২৫ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়। ফলে বছরে শেষে ঘাটতি মেটাতে ৬-৭ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে