মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৫, ১২:২৩:২৭

বিশ্বের ১৯৫ টি দেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞায় ওবায়দুল কাদের?

বিশ্বের ১৯৫ টি দেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞায় ওবায়দুল কাদের?

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : “জেলে যাব, পালাবার পথ নেই—এই দেশ ছেড়ে যাব না”, এমন দৃপ্ত ঘোষণা দিয়ে গণমাধ্যমে আলোড়ন তুলেছিলেন সাবেক সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। অথচ ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর পালাবেন না বলেই তিনি আজ দেশের বাইরে।

জুলাই বিপ্লবের পর দেশ ছেড়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ সরকারের ১২ জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তাঁদের সবার বিরুদ্ধেই বর্তমানে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি করার প্রক্রিয়া চলছে। অভিযুক্তদের তালিকায় আছেন ওবায়দুল কাদের, শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আ ক ম মোজাম্মেল হক, তারেক আহমেদ সিদ্দিকী, হাসান মাহমুদ, আরাফাত রহমান, নসরুল হামিদ বিপু, বেনজীর আহমেদ, মুহিবুল হাসান চৌধুরী ও শেখ ফজলে নূর তাপস।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, ওবায়দুল কাদের বর্তমানে স্ত্রীসহ কলকাতার রাজারহাট নিউটাউনের একটি অভিজাত ফ্ল্যাটে অবস্থান করছেন। তিনি এখন ডিএলএফ নিউটাউন হাইটস প্লাজায় অবস্থান করছেন বলে খবর। নিজের নিরাপত্তার স্বার্থে গণমাধ্যম বা সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় নেই তিনি। অথচ দেশে রেখে গেছেন অনেক দলের কর্মী-সমর্থকদের, যারা বর্তমানে মামলায়, জেলে কিংবা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্ট বা রেড নোটিশ হচ্ছে এমন একটি আন্তর্জাতিক সতর্কবার্তা, যার মাধ্যমে কোনো দেশের অনুরোধে ফৌজদারি মামলার আসামিকে ধরতে বিশ্বের ১৯৫টি সদস্য রাষ্ট্রকে জানানো হয়। সেই ব্যক্তি যেখানে লুকিয়ে থাকুক না কেন, সংশ্লিষ্ট দেশের কর্তৃপক্ষ তাকে গ্রেফতার করে নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে সহায়তা করে।

ইন্টারপোলের ১৯৫টি সদস্য দেশের নাম : আফগানিস্তান, আলবেনিয়া, আলজেরিয়া, অ্যান্ডোরা, অ্যাঙ্গোলা, অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডা, আর্জেন্টিনা, আর্মেনিয়া, অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, আজারবাইজান, বাহামা, বাহরাইন, বাংলাদেশ, বার্বাডোস, বেলারুশ, বেলজিয়াম, বেলিজ, বেনিন, ভূটান, বলিভিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, বোতসোয়ানা, ব্রাজিল, ব্রুনেই, বুলগেরিয়া, বুরকিনা ফাসো, বুরুন্ডি, কাবো ভার্দে, কম্বোডিয়া, ক্যামেরুন, কানাডা, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, চাদ, চিলি, চীন, কলম্বিয়া, কোমোরোস, কঙ্গো (ব্রাজাভিল), কঙ্গো (কিনশাসা – ডিআরসি), কুক দ্বীপপুঞ্জ, কোস্টারিকা, ক্রোয়েশিয়া, কিউবা, সাইপ্রাস, চেক প্রজাতন্ত্র, ডেনমার্ক, জিবুতি, ডোমিনিকা, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র, ইকুয়েডর, মিসর, এল সালভাদোর, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, ইরিত্রিয়া, এস্তোনিয়া, ইসওয়াতিনি (সাবেক সোয়াজিল্যান্ড), ইথিওপিয়া, ফিজি, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, গ্যাবন, গাম্বিয়া, জর্জিয়া, জার্মানি, ঘানা, গ্রিস, গ্রেনাডা, গুয়াতেমালা, গিনি, গিনি বিসাউ, গায়ানা, হাইতি, হন্ডুরাস, হাঙ্গেরি, আইসল্যান্ড, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইরাক, আয়ারল্যান্ড, ইসরায়েল, ইতালি, আইভরি কোস্ট (কোত দিভোয়ার), জ্যামাইকা, জাপান, জর্ডান, কাজাখস্তান, কেনিয়া, কিরিবাতি, কুয়েত, কিরগিজস্তান, লাওস, লাটভিয়া, লেবানন, লেসোথো, লাইবেরিয়া, লিবিয়া, লিচেনস্টেইন, লিথুয়ানিয়া, লুক্সেমবার্গ, মাদাগাস্কার, মালাওয়ি, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মালি, মাল্টা, মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ, মৌরিতানিয়া, মরিশাস, মেক্সিকো, মাইক্রোনেশিয়া, মোলডোভা, মোনাকো, মঙ্গোলিয়া, মন্টেনেগ্রো, মরোক্কো, মোজাম্বিক, মিয়ানমার, নামিবিয়া, নাউরু, নেপাল, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড, নিকারাগুয়া, নাইজার, নাইজেরিয়া, উত্তর কোরিয়া, উত্তর ম্যাসেডোনিয়া, নরওয়ে, ওমান, পাকিস্তান, পালাউ, পানামা, পাপুয়া নিউ গিনি, প্যারাগুয়ে, পেরু, ফিলিপাইন, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, কাতার, দক্ষিণ কোরিয়া, রোমানিয়া, রাশিয়া, রুয়ান্ডা, সেন্ট কিটস ও নেভিস, সেন্ট লুসিয়া, সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রেনাডাইনস, সামোয়া, সান মারিনো, সাও টোমে ও প্রিন্সিপে, সৌদি আরব, সেনেগাল, সার্বিয়া, সিশেলস, সিয়েরা লিওন, সিঙ্গাপুর, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, সোমালিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ সুদান, স্পেন, শ্রীলঙ্কা, সুদান, সুরিনাম, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, সিরিয়া, তাইওয়ান, তাজিকিস্তান, তানজানিয়া, থাইল্যান্ড, তোগো, টোঙ্গা, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, তিউনিসিয়া, তুরস্ক, তুর্কমেনিস্তান, টুভালু, উগান্ডা, ইউক্রেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, উরুগুয়ে, উজবেকিস্তান, ভানুয়াতু, ভ্যাটিকান সিটি, ভেনেজুয়েলা, ভিয়েতনাম, ইয়েমেন, জাম্বিয়া ও জিম্বাবুয়ে।

বাংলাদেশ পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (NCB) ইতোমধ্যে শেখ হাসিনাসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ইন্টারপোল সদর দপ্তরে তিন ধাপে আবেদন করেছে। আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানাসহ প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রমাণ ইন্টারপোল সদর দপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে রেড নোটিশ জারি হলে বিশ্বের প্রতিটি দেশে তা কার্যকর হবে।

ওবায়দুল কাদের এক সময় বলেছিলেন, “পালাবো না, প্রয়োজনে ফখরুল সাহেবের বাসায় গিয়ে উঠবো। জায়গা না পেলে ঠাকুরগাঁওয়ে আমাদের বাড়ি আছে।” অথচ বাস্তবে ঘটেছে উল্টো। তিনি নিজেই দেশ ছেড়ে গেছেন, আর বাকিরা রয়েছেন জেলে কিংবা পালিয়ে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা এখন একে একে আন্তর্জাতিক নজরদারির আওতায় আসছেন। রেড নোটিশ জারি হলে আশ্রয় নেওয়ার দেশগুলোতেও তাদের অবস্থান সংকটের মুখে পড়বে। বিশেষত, যেসব দেশে বাংলাদেশের সঙ্গে অপরাধী প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে, সেসব দেশ থেকে গ্রেফতার হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে।

গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বিরুদ্ধে দেশ ও আন্তর্জাতিক মহলে বিচার দাবি দিন দিন জোরালো হচ্ছে। পালিয়ে গেলেও ইন্টারপোলের লাল সংকেত তাদের পেছনে ছায়ার মতো লেগে থাকছে।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে