এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : জুলাই-আগস্ট গণহত্যা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার আগামী মে মাসের শুরুতেই শুরু হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সম্প্রতি কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা জানান।
আল-জাজিরার বৈশ্বিক আলোচনাভিত্তিক অনুষ্ঠান ‘টক টু আল-জাজিরা’-তে সাক্ষাৎকারটি প্রচারিত হয়। অনুষ্ঠানটি প্রকাশিত হয় রোববার, ২৭ এপ্রিল। সেখানে শেখ হাসিনাসহ সাবেক সরকারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ধরেন ড. ইউনূস।
তিনি বলেন, ২০২৩ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় শেখ হাসিনার সংশ্লিষ্টতা জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। সেই ভিত্তিতেই মে মাসের শুরুতে আনুষ্ঠানিকভাবে তার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হতে যাচ্ছে। তিনি আরও জানান, শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের জন্য ভারতের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে। তবে ভারতের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক জবাব পাওয়া যায়নি।
সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তিনি জানান, নির্বাচন-পূর্ব সংস্কার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ হলে আগামী ডিসেম্বরেই ভোট অনুষ্ঠিত হতে পারে। আর যদি সংস্কারের তালিকা দীর্ঘ হয়, তাহলে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যেই নির্বাচন সম্পন্ন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও কথা বলেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, কেবল মানবিক সহায়তা নয়, এই সংকটের টেকসই সমাধান হলো রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে নিরাপদে প্রত্যাবর্তন। এজন্য বাংলাদেশ জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে। মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনাও অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ড. ইউনূস বলেন, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আংশিকভাবে দলের ওপরই নির্ভর করছে। আওয়ামী লীগ এখনো জানায়নি তারা নির্বাচনে অংশ নেবে কি না। একই সঙ্গে তিনি বলেন, রাজনৈতিক প্রক্রিয়া, নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।
সাক্ষাৎকারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ড. ইউনূসের সাম্প্রতিক বৈঠকের কথাও উঠে আসে। তিনি জানান, থাইল্যান্ডে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে মোদির সঙ্গে তার একান্ত বৈঠক হয়। সেখানে তিনি শেখ হাসিনাকে উসকানিমূলক মন্তব্য থেকে বিরত রাখার অনুরোধ জানান। তবে মোদি জবাবে বলেন, তিনি শেখ হাসিনার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না।
সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে উপস্থাপক জানতে চান, শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের গ্রহণযোগ্যতা কি কমে এসেছে? উত্তরে ড. ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ এখনো বিশ্বাস করে এই সরকারই তাদের জন্য সবচেয়ে ভালো সমাধান দিতে পারবে। তারা এখনো আমাদের সরিয়ে দেওয়ার কথা বলেনি। বরং একটি ভালো নির্বাচনের প্রত্যাশা করছে।’
চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ এখন আর কোনো নির্দিষ্ট বলয়ের রাজনীতি করে না। বরং, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে এগিয়ে যেতে চায়।