বুধবার, ০৭ মে, ২০২৫, ০৮:২৬:৪২

সৌদি আরব এবার বাংলাদেশের দিকে নজর দিয়েছে, জানুন সুখবরটি

সৌদি আরব এবার বাংলাদেশের দিকে নজর দিয়েছে, জানুন সুখবরটি

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : বিশ্বজুড়ে তেল রাজনীতির বড় খেলোয়াড় সৌদি আরব এবার বাংলাদেশের দিকে নজর দিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের এই মরুর দেশটি বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার তেল রপ্তানি ও ম্যানুফ্যাকচারিং হাব হিসেবে গড়ে তুলতে চায়। আর সেই লক্ষ্যে তাদের রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি কোম্পানি আরামকো বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দরকেন্দ্রিক একটি বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করছে।

ভৌগলিক অবস্থান, সমুদ্রবন্দর এবং দক্ষ মানবসম্পদ—এই তিনটি কারণে বাংলাদেশ বর্তমানে তেল রপ্তানির আদর্শ গন্তব্যে পরিণত হচ্ছে। বিশ্ববাজারে তেল সরবরাহ বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে ২০২৭ সালের মধ্যে সৌদি আরব দৈনিক ১ কোটি ৩০ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে।

কিন্তু দেশটির নিজস্ব পরিশোধনাগারগুলো অতিরিক্ত উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত নয়। তাই তারা বাংলাদেশে তেল রিফাইন কারখানা স্থাপন করে এখান থেকেই দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে তেল রপ্তানির পরিকল্পনা করছে।

এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ পাবে:

বিনিয়োগ: আরামকোর নেতৃত্বে বিপুল অর্থের সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ।

কর্মসংস্থান: হাজার হাজার নতুন চাকরি তৈরি হবে।

শুল্ক ও কর: পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে কর ও শুল্ক থেকে রাষ্ট্রীয় রাজস্ব বৃদ্ধি।

জ্বালানি সুবিধা: দেশীয় বাজারে স্বল্পমূল্যে জ্বালানি সরবরাহের সুযোগ।

আন্তর্জাতিক পরিচিতি: দক্ষিণ এশিয়ার একটি শক্তিশালী রপ্তানি হাবে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা।

সমুদ্রবন্দর ঘিরে কৌশলগত অবস্থান
চট্টগ্রাম ও পায়রা বন্দরের সক্ষমতা এবং উন্নত পানিপথ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শক্তি। প্রতিবছর এই বন্দর দুটির মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি ১২ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই আফগানিস্তান, ভারত, নেপাল, ভুটান ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলোর জন্য এটি একটি লাভজনক ট্রান্সশিপমেন্ট রুটে পরিণত হচ্ছে।

সৌদি আরব ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে তিনবার এ ধরনের প্রস্তাব দিলেও তৎকালীন সরকার সাড়া দেয়নি। একইভাবে দক্ষিণ কোরিয়ার ‘Samsung’ ও ‘Aqua Power’ এরও বাংলাদেশে বিনিয়োগের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়া হয়েছিল। এসব ব্যর্থতার পর এবার নতুন সরকারের অধীনে পরিস্থিতি বদলাচ্ছে।

২০২৫ সালের জানুয়ারিতে সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দোহাইলাম বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির কথা জানান এবং এ প্রকল্পে আগ্রহ পুনর্ব্যক্ত করেন।

পরিকল্পনা বাস্তবায়নের রূপরেখা
সামুদ্রিক রুট স্থাপন: চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সৌদির জেদ্দা বা দাম্মামের মধ্যে সরাসরি একটি নৌরুট চালু হবে। তেল রিফাইন কারখানা স্থাপন: বাংলাদেশে স্থাপিত হবে আধুনিক রিফাইনারি, যার মালিকানা ও পরিচালনা করবে আরামকো।

রপ্তানি কার্যক্রম: রিফাইনকৃত তেল ভারত, চীন, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমারসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে রপ্তানি হবে।
কার্গো, শিপমেন্ট, কর সুবিধা: বাংলাদেশের কার্গো পরিবহন, কর ও শুল্কের সুবিধা পাবে সৌদি আরবসহ সংশ্লিষ্ট দেশগুলো।

এই প্রকল্প শুধু তেল বাণিজ্য নয়, বাংলাদেশের জন্য এটি হতে পারে অর্থনৈতিক রূপান্তরের এক ঐতিহাসিক সুযোগ। সফল বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ কেবল একটি মধ্যস্থতাকারী দেশ নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার জ্বালানি নেটওয়ার্কে একটি অবিচ্ছেদ্য শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে