এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : বাংলাদেশের শ্রমিকদের জন্য আবারও খুলতে যাচ্ছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। আগামী ৬ বছরে মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে ১২ লাখ শ্রমিক নিতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অন্তর্বর্তী সরকার। এর মধ্যে প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক বিনা খরচে নেওয়া হবে।
মালয়েশিয়ার পুত্রজয়ায় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান এবং আইন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুশন ইসমাইল ও মানবসম্পদ মন্ত্রী স্টিভেন সিম চি কেও’র সঙ্গে যৌথ বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে মালয়েশিয়া শ্রমিক নেওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে শ্রমিক নেওয়ার আগে মালয়েশিয়া কিছু শর্ত জুড়ে দিয়েছে। নেপাল, মালদ্বীপসহ আরও পাঁচটি দেশ থেকেও মালয়েশিয়া শ্রমিক নেওয়ার পরিকল্পনা করছে বলে জানা গেছে।
মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে এবং শ্রমবাজার খোলার বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত এসেছে। ২১ মে ঢাকায় যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।’
অবৈধ শ্রমিকদের নিয়মিতকরণ বিষয়ে তিনি জানান, ‘আমরা আশাবাদী এবং সন্ধ্যায় মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এই বিষয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।’
গত বছর ৪ অক্টোবর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড. আনোয়ার ইব্রাহিম বাংলাদেশে সংক্ষিপ্ত সফরে আসেন। ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়। বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ড. ইউনূস জানান, ‘মালয়েশিয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে দুই দেশই আগ্রহী। অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বাণিজ্য, বিনিয়োগ, শিক্ষা, প্রযুক্তি, মানবসম্পদ উন্নয়ন, জনশক্তি রপ্তানি, যোগাযোগ, অবকাঠামো উন্নয়ন ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি ভিসা সহজীকরণ নিয়েও আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে।’
যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড. আনোয়ার ইব্রাহিম ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘মানুষের মর্যাদা রক্ষায় তার ভূমিকা আমরা চিনি। বাংলাদেশকে আমরা বন্ধু হিসেবে সম্মান করি এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন জানাচ্ছি।’
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের শ্রমিকরা আধুনিক দাস নয়। তাদের সুরক্ষায় আমরা কাজ করছি। বন্ধ শ্রমবাজার পুনরায় খুলে বন্ধুকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখার চেষ্টা করছি।’ মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অপরদিকে জানা গেছে, মালয়েশিয়া আগামী কয়েক বছরে প্রায় ১২ লাখ শ্রমিক নেবে। বাংলাদেশের শ্রমিকদের জন্য এটি বড় সুখবর। শ্রমবাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, মালয়েশিয়ায় সাধারণ শ্রমিকের বেতন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর চেয়ে দ্বিগুণ বা তারও বেশি। এক বছর ধরে কিছু জটিলতায় আটকে থাকা শ্রমবাজার ধীরে ধীরে খুলে যাচ্ছে। এখন মালয়েশিয়ায় লাখ লাখ শ্রমিক বৈধভাবে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন।
গত ১৪ মে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, সিনিয়র সচিব ড. নেয়ামত উল্লাহ ভূঁইয়া ও উপসচিব মো. সারওয়ার আলম সরকারি সফরে মালয়েশিয়া যান।
বৃহৎ এই শ্রমবাজার খুললে বৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক যাওয়ার সুযোগ বৃদ্ধি পাবে। এতে দেশের অর্থনীতিও উপকৃত হবে এবং অভিবাসী কর্মীদের জন্যও সুবিধা সৃষ্টি হবে। রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের আর্থিক উন্নয়নে সহায়ক হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করছেন।