এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : তিন বছরের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে। দেশের বাজারে এই তেল বিক্রি হচ্ছে তুলনামূলক উচ্চ দামে। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন এবং যথাসময়ে ব্যাংকের সহায়তা না পাওয়ায় বিশ্ব বাজারে দর কমার সুফল পাচ্ছেন না দেশের ভোক্তারা।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ–ক্যাব আমদানি খরচের সঙ্গে যাবতীয় ব্যয় পর্যালোচনা করে বলছে, এটি ব্যবসায়ীদের অজুহাত মাত্র। তাদের হিসাবে সর্বশেষ বোতলজাত সয়াবিনের দাম ১৪ টাকা বাড়ানোর পর ব্যবসায়ীদের লাভ হচ্ছে লিটারে অন্তত ১২ টাকা।
দেশে প্রতিদিন গড়ে পাঁচ হাজার টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। সে হিসাবে মাসে এ চাহিদা দাঁড়ায় দেড় লাখ টন।
বিশ্বব্যাংকের নিয়মিত মাসিক প্রতিবেদনের (পিংক শিট) তথ্য অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাজারে ২০২২ সাল থেকে সয়াবিন, পাম অয়েল ও সয়াবিন বীজের দাম নিম্নমুখী। ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন সয়াবিন তেলের গড় দাম ছিল ১ হাজার ৬৬৭ ডলার। ২০২৩ সালে সে দর নেমে আসে ১ হাজার ১১৯ ডলারে। ২০২৪ সালে তা আরও কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ২২ ডলারে।
চলতি বছরের প্রথম তিন মাসেও সয়াবিনের দাম এর কাছাকাছি। গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সয়াবিনের গড় দাম ছিল ১ হাজার ৪০ ডলার। এপ্রিল মাসে দাম আরও কমতে শুরু করেছে।
একই চিত্র পাম অয়েলের ক্ষেত্রে। ২০২২ সালে বিশ্ব বাজারে পাম অয়েলের গড় দাম ছিল ১ হাজার ২৭৬ ডলার। ২০২৩ সালে ছিল মাত্র ৮৮৬ ডলার। ২০২৪ সালে দাঁড়ায় ৯৬৩ ডলার। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে পাম অয়েলের গড় দাম ১ হাজার ৬৮ ডলার। এপ্রিল মাসে আবার কমতে শুরু করেছে এর দাম।
সয়াবিন বীজের দাম কমেছে সবচেয়ে বেশি। ২০২২ সালে সয়াবিন বীজের গড় দাম ছিল ৬৭৫ ডলার। পরের বছর আরও কমে তা দাঁড়ায় ৫৯৮ ডলারে। ২০২৪ সালে আরও কমে বিক্রি হয়েছে ৪৬২ ডলারে। চলতি বছরের গত তিন মাসে আরও কমেছে সয়াবিন বীজের দাম। এই তিন মাসে গড় দাম ছিল ৪০৮ ডলার। সয়াবিন বীজ মাড়িয়ে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ভোজ্যতেল পাওয়া যায়।
কাস্টমসের শুল্কায়ন মূল্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত ৬ মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে অপরিশোধিত যে ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে, তার শুল্কায়ন মূল্য ছিল প্রতি কেজি গড়ে ১৩৬ টাকা। প্রতি কেজির পরিবহন ও পরিশোধন ব্যয় সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ বা ২০ টাকা। শুল্ক, কর ও ভ্যাট বাবদ আরও ২১ টাকা যুক্ত করলে খরচ দাঁড়ায় ১৭৭ টাকা প্রতিলিটার। ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে সরকার লিটারে ১৪ টাকা বাড়িয়ে সয়াবিন তেলের নতুন দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে ১৮৯ টাকা। এই হিসাবে, প্রতি লিটারে অন্তত ১২ টাকা লাভ করছেন ব্যবসায়ীরা।
এবার সবচেয়ে বেশি ভোজ্যতেল আমদানি করেছে টি কে গ্রুপ। এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক শফিউল আতহার তসলিম বলেন, ‘ভোজ্যতেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে এখন স্থিতিশীল। মাস কয়েক আগে দাম কিছুটা কমলেও এখন ১ হাজার ১০০ ডলারের কাছাকাছি।’
তাহলে দেশের বাজারে দাম বাড়ল কেন– জানতে চাইলে শফিউল আতহার তসলিম বলেন, ‘ট্যাক্স ও ভ্যাট পুনর্বহাল করার কারণে দাম বেড়েছে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও তার সুফল সেভাবে নিতে পারিনি আমরা। ডলারের দাম বৃদ্ধি ও ব্যাংক খাতের অস্থিরতার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি আমরা।’ ভোজ্যতেলে এখনও লোকসান হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘যে শুল্কহার সরকার পুনর্বহাল করেছে তাতে লিটারে ২১ টাকা বাড়ার কথা। কিন্তু বাড়ানো হয়েছে ১৪ টাকা।’
এ বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে ক্যাবের সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘আমাদের কাছে থাকা তথ্য বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে বেশ কয়েক মাস ধরে সর্বনিম্ন পর্যায়ে আছে ভোজ্যতেলের দাম। সেখানে দাম বাড়লে ব্যবসায়ীরা বাতাসের আগে তা কার্যকর করেন বাংলাদেশে। কিন্তু দাম কম থাকলে অজুহাত দেন ডলারের, ব্যাংকের, কাস্টমসের। এই অবস্থার পরিবর্তন দরকার।’ সয়াবিন তেলের দাম এক লাফে ১৪ টাকা বাড়ানোর বিষয়টি অযৌক্তিক বলে মনে করেন তিনি।