এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : চাহিদার অতিরিক্ত আলু উত্পাদন করে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। বর্তমান বাজারদরে আলু বিক্রি করে মুনাফাতো দূরের কথা উত্পাদন খরচই উঠছে না। রাজধানীর বাজারগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, খুচরায় প্রতি কেজি আলু ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ গত বছর এই সময় প্রতি কেজি আলুর দাম ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। অর্থাত্, কেজিতে আলুর দাম কমেছে ৬০ শতাংশের বেশি।
কৃষকরা জানিয়েছেন, গত বছর তারা আলু উত্পাদন করে ভালো মুনাফা পেয়েছেন। যে কারণে এ বছর তারা বেশি পরিমাণে আলু উত্পাদন করেছেন। আর তাতেই ভোক্তাদের প্রিয় এই সবজিটির এত দরপতন! এদিকে দাম পড়ে যাওয়ায় কৃষকরা হিমাগার থেকে আলু বের করছেন না। এতে বিপুল পরিমাণে আলু হিমাগারে আটকে গেছে।
কৃষি অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, প্রতি বছরই কৃষকরা কোনো না কোনো পণ্য বেশি পরিমাণে উত্পাদন করলে তাদের লোকসানে পড়তে হয়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে তারা দেশে কৃষিভিত্তিক ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলার প্রতি জোর দিয়েছেন। এছাড়া, তারা বড় লোকসান থেকে কৃষকদের বাঁচাতে সরকারকে মূল্য সহায়তা দেওয়ার কথা বলেছেন। যাতে কৃষকরা আলু চাষে আগ্রহ হারিয়ে না ফেলে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে আলু উত্পাদিত হয়েছে ১ কোটি ২৯ লাখ টন। বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএসএ) তথ্য অনুযায়ী, দেশে আলুর সর্বোচ্চ বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৯০ লাখ টন। এ হিসাবে এ বছর চাহিদা মিটিয়েও ৩৯ লাখ টন আলু বাড়তি থাকবে। এ বছর এখন পর্যন্ত হিমাগারগুলো থেকে ১১-১২ শতাংশ আলু বের হয়েছে। অথচ গত বছর এ সময় ৪০ শতাংশের বেশি আলু হিমাগার থেকে বিক্রি করেছিলেন কৃষক। আলু বিক্রি করে লোকসান হওয়ায় তারা হিমাগার থেকে আলু বের করছেন না। কৃষি অধিদপ্তর সূত্র বলেছে, প্রতি কেজি আলু উত্পাদনে কৃষকের খরচ পড়েছে ১৪ থেকে ১৫ টাকা। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে হিমাগার ভাড়া ছয় টাকা, বস্তা ও পরিবহনসহ অন্যান্য খরচসহ সব মিলিয়ে প্রতি কেজি আলু দর পড়ছে ২৬ থেকে ২৭ টাকা। কিন্তু সেই আলু হিমাগারে বিক্রি হচ্ছে ১২ থেকে ১৩ টাকায়। এ হিসাবে প্রতি কেজিতে লোকসান হচ্ছে ১৩ টাকার বেশি। এ বছর আলুর দাম কমে যাওয়ার তথ্য জানিয়েছে সরকারের দুই সংস্থা কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ও ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশও (টিসিবি)।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, বর্তমানে রাজধানীর পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি আলু ১৩ থেকে ১৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরায় তা বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা। অথচ গত বছর এই সময় খুচরায় প্রতি কেজির আলু দর ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রতি কেজিতে আলুর দর কমেছে ৬০ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
দেশে যে জেলাগুলোতে সবচেয়ে বেশি আলু উত্পাদন হয় তার মধ্যে অন্যতম মুন্সীগঞ্জ ও জয়পুরহাট। আমাদের মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি বাছির উদ্দিন জুয়েল জানান, দেশের অন্যতম শীর্ষ আলু উত্পাদন জেলা মুন্সীগঞ্জে আলুর দরপতনে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। আলু ব্যবসায়ী আলী আহাম্মেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কৃষকরা পুরোপুরি পুঁজি হারিয়ে পঙ্গু হয়ে গেছে। মুক্তার বেপারী নামে এক কৃষক আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘যদি সরকার দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে নভেম্বরের মধ্যে নতুন আলু বাজারে চলে আসবে। পুরোনো আলু নদীতে ফেলে দিতে হবে। আমরা চাই, সরকার আলু রপ্তানি করুক বা ভিজিএফের মাধ্যমে বিতরণ করুক, তাহলে কৃষকরা উপকৃত হবে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, ‘মুন্সীগঞ্জ আলু উত্পাদনে শীর্ষে থাকলেও বাজারজাতকরণে সমস্যা রয়েছে। এ বছর জেলায় ১০ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন আলু উত্পাদিত হয়েছে। বাজারদর কম হওয়ায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।’