শুক্রবার, ১৫ আগস্ট, ২০২৫, ১১:৫৫:২৬

অবশেষে এক লাফে যত কমলো কেজি প্রতি পেঁয়াজের দাম

অবশেষে এক লাফে যত কমলো কেজি প্রতি পেঁয়াজের দাম

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : তরতরিয়ে বাড়তে থাকা পেঁয়াজের দাম কমতির দিকে। তিনদিনের ব্যবধানে পাইকারিতে কমেছে অন্তত ১০ টাকা। তবে এখনও দাম কমতির খবর নেই খুচরা বাজারে।

সরবরাহ ঘাটতির কারণ দেখিয়ে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ঊর্ধ্বমুখী দেশের পেঁয়াজের বাজার। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, এক মাসে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৩৩ শতাংশের বেশি। এতে নাভিশ্বাস বাড়ছে ভোক্তার।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সিনিয়র সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন সময় সংবাদকে বলেন, 'পেয়াঁজ নিয়ে প্রতিবছর এই সময়ে সংকট তৈরি করেন আড়তদার, ব্যাপারী ও কমিশন এজেন্টরা। এবারও তাই করেছেন। কৃষকের হাত থেকে যখনই পেঁয়াজ হাতছাড়া হলো, তখন থেকেই এই মধ্যস্বত্বভোগীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। যেহেতু পেঁয়াজের বাজারে সরকারের কোনো কর্তৃপক্ষের তেমন নজরদারি নেই, সেকারণে ব্যবসায়ীরাই দাম নির্ধারণে মূল নিয়ামক হয়ে আছে। সরবরাহ কম এটা একটা অজুহাত। প্রকৃত কারণ হচ্ছে, এখন কৃষকের হাতে পেঁয়াজ নেই। সব ব্যাপারী, আড়তদারের হাতে চলে গেছে।'

অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকটের সৃষ্টি করেছে এবং ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, 'প্রশাসনও বাজার তদারকি করছে না।।সরকারের সঠিক মনিটরিং না থাকায় অনেক ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফা করছে। হুট করেই তারা সবাই মিলে সিন্ডিকেটে নেমে পড়ে। যে কারণে অল্প সময়ের মধ্যে অনেক পণ্যের দামে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। তাই আমদানির পাশাপাশি মনিটরিং বাড়াতে হবে।'

তবে গত মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণা দেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি বলেন, 'পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে শিগগিরই পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। আমদানি উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। যে দেশে সস্তায় পাওয়া যাবে সেখান থেকেই পেঁয়াজ আমদানি করা হবে।'

এরপরই পাল্টে যেতে থাকে পেঁয়াজের পাইকারি বাজারের চিত্র। গত ২-৩ দিনে পাইকারিতে দাম কমেছে অন্তত ১০ টাকা। বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৬৬ টাকা। যা তিনদিন আগেও বিক্রি হয়েছে ৭৬ টাকায়।

ঢাকার অন্যতম বৃহৎ পাইকারি বাজার শ্যামবাজারের মেসার্স সেতু বাণিজ্যালয়ের ব্যবসায়ী শংকর সাহা বলেন, 'পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এতে দাম কমতে শুরু করেছে। আমদানি করা পেঁয়াজ বাজারে ঢুকলে দাম আরও কমে যাবে।'

শ্যামবাজারের মেসার্স বন্ধন বাণিজ্যালয়ের ব্যবসায়ী সমর সাহা বলেন, 'গত কয়েকদিন পেঁয়াজ ৭৬ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। তবে আমদানির খবরে সেটি কমে এখন ৬৬-৬৭ টাকায় নেমে এসেছে।'

শ্যামবাজার পেঁয়াজ আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল মাজেদ বলেন সময় সংবাদকে বলেন, আমদানির ঘোষণা দেয়ার পর থেকেই আড়তগুলো ক্রেতা সংকটে ভুগছে। বাজারে একদমই ক্রেতা নেই। মূলত আমদানির খবরে খুচরা ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ কেনা বন্ধ করে দিয়েছে।

তবে পাইকারিতে দাম কমলেও এর প্রভাব এখনও পড়েনি খুচরা বাজারে। ফলে ভোক্তাদের বাড়তি দামেই কিনতে হচ্ছে পেঁয়াজ। সীমান্ত নামে এক ক্রেতা বলেন, প্রতি কেজি পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে ৮৫-৯০ টাকায়। যা এক ধরনের জুলুম। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারকে আমদানির পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে তদারকি বাড়াতে হবে।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি দাম কমতে শুরু করেছে। শিগগিরই খুচরায়ও কমবে। খুচরা ব্যবসায়ী ফরিদ বলেন, 'বেশি দামে পেঁয়াজ কিনেছি, তবে এখন আমদানির খবরে দাম পড়ে গেছে। তাই এখন আগের কেনা পেঁয়াজ দাম কমিয়ে বিক্রি করলে লোকসান গুনতে হবে। আমদানির পেঁয়াজ দেশে আসতে শুরু করলে খুচরায় খুব শিগগিরই দাম কমে আসবে।'

এদিকে, বাজার নিয়ন্ত্রণে মাঠ পর্যায়ে অভিযান শুরু করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। প্রতিষ্ঠানটির উপপরিচালক (প্রশিক্ষণ ও প্রচার) আফরোজা রহমান জানান, পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সারাদেশে বাজার তদারকি কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে