এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : ফের লাগামহীন হয়ে উঠছে ডিমের বাজার। গত এক মাসেরও কম সময়ে ডজনপ্রতি দাম বেড়েছে অন্তত ২৫-৩০ টাকা। এতে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাহিদার সঙ্গে সঙ্গে ডিমের দাম বেড়েছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্য বলছে, দেশে দৈনিক সাড়ে ৪ কোটি থেকে ৫ কোটি পিস ডিম উৎপাদিত হয়। ডিমের চাহিদাও ৫ কোটি পিসের আশপাশে। কোনো কারণে হঠাৎ ডিমের চাহিদা বেড়ে গেলে বা সরবরাহ কমে গেলে দামেও তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়ে।
যার প্রমাণ আগেও মিলেছে বারংবার। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাজারে ডিমের অস্বাভাবিক দামের লাগাম টানতে আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। পাশাপাশি বেঁধে দেয়া হয়েছিল প্রতি পিস ডিমের দাম। এতে নিয়ন্ত্রণে আসে বাজার। তবে গত বছরের মে মাসে এ বাজারে আবারও দেখা দেয় অস্থিরতা।
এরপর নানা নাটকীয়তায় রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ডিমের বাজারে লাগাম টানতে গত সেপ্টেম্বরে আরেফ দফা আমদানির অনুমতি এবং উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে ডিমের দাম বেঁধে দেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
সে সময় উৎপাদন পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের যৌক্তিক দাম ধরা হয় ১০ টাকা ৫৮ পয়সা। অর্থাৎ এ দামে উৎপাদনকারীরা পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে ডিম বিক্রি করবেন। একই সঙ্গে পাইকারি পর্যায়ে প্রতি পিস ডিমের যৌক্তিক দাম ১১ টাকা ১ পয়সা ও খুচরায় তা ১১ টাকা ৮৭ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। সেই হিসাবে খুচরা পর্যায়ে এক ডজন ডিমের দাম হওয়ার কথা ১৪২ টাকা ৪৪ পয়সা।
কিন্তু এতে হিতে বিপরীত হয়; আরও চড়া হয় ডিমের বাজার। ডজনপ্রতি দাম গিয়ে ঠেকে ১৮০ টাকায়। এরপর উৎপাদক ও ব্যবাসায়ীদের সঙ্গে নানা বৈঠক ও বাজারে অভিযান চালানোর পর নিয়ন্ত্রণে আসে ডিমের বাজার। তারপর থেকে কিছুটা ওঠানামার মধ্যে থাকলেও গত কয়েক মাসে অতোটা চড়া হয়নি বাজার। তবে চলতি আগস্টের শুরু থেকেই ফের বাড়তে শুরু করে ডিমের বাজার।
বর্তমানে ডজনে ২৫-৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে প্রতি ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪৫-১৫০ টাকায়। অর্থাৎ সর্বোচ্চ দাম ধরে প্রতি পিস ডিমের দাম পড়ছে ১২ টাকা ৫০ পয়সা; যা নির্ধারিত দামের চেয়ে ৬৩ পয়সা বেশি। তবে কোনো কোনো এলাকার দোকানগুলোতে ডজনপ্রতি ১৫৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতে দেখা গেছে।
আর বাজারে প্রতি ডজন সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩৫-১৪০ টাকায়। লাল ও সাদা ডিম ২০-২১ দিন আগেও যথাক্রমে বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা ও ১১০ টাকায়। এছাড়া প্রতি ডজন হাসের ডিম বিক্রি হচ্ছে ২৩০ টাকায়।
বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে হঠাৎ করে বেড়ে গেছে ডিমের চাহিদা। কিন্তু সেই তুলনায় বাড়েনি সরবরাহ; যা বাড়িয়ে দিচ্ছে ডিমের দাম। ডিম বিক্রেতা রায়হান বলেন, বাজারে সবজি, মাছ-মুরগিসহ প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এতে সাধারণ ভোক্তারা বেশি ঝুঁকছেন ডিমের প্রতি। ফলে চাহিদা বাড়ায় দাম বাড়ছে।
আর ক্রেতারা বলছেন, দামের ঊর্ধ্বমুখিতার কারণে ডিম কেনাই মুশকিল হয়ে গেছে। ডিম কিনতে আসা এক ক্রেতা ইকবাল বলেন, বাজারে লাগামহীন হয়ে উঠছে শাক-সবজির দাম। এতে ডিমের ওপর ভরসা করা যেত। কিন্তু ডিমের বাজারের বর্তমান অবস্থায় সেই ভরসার জায়গাটুকুও থাকছে না। এক মাসের ব্যবধানে ডজনে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে দাম, যা রীতিমতো ভোক্তার জন্য কষ্টদায়ক।’
তবে উৎপাদকরা বলছেন, ডিমের উৎপাদন কমায় ও অনেক খামারি খামার বন্ধ করে দেয়ায় প্রভাব পড়ছে বাজারে। প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি সুমন হাওলাদার সময় সংবাদকে বলেন, ‘চাহিদা বাড়ায় দাম বেড়েছে। লোকসানের কারণে প্রান্তিক পর্যায়ে অনেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে। সরকারের কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নেই। প্রান্তিক খামারিদের রক্ষায় সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।’
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সিনিয়র সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন সময় সংবাদকে বলেন, 'ডিমের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অস্বাভাবিকভাবে দাম বাড়ানো পুরোপুরি কারসাজি। কারণ স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে দাম ধীরে ধীরে বাড়ার কথা, কিন্তু করপোরেট গ্রুপগুলো ইচ্ছামতো একবার দাম বাড়ায়, আবার একবার কমায়। এতে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে অনেক ছোট খামারি খামার বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন। ছোট খামার যত বন্ধ হবে, বাজার ততটাই ভোক্তার নাগালের বাইরে চলে যাবে।'
কারসাজি রোধে সরকারকে নজরদারি বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, 'হঠাৎ বিনা কারণেই যারা অস্বাভাবিকভাবে দাম বাড়াচ্ছে, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। প্রকৃত খরচ কত-তা তৃতীয় পক্ষ দিয়ে যাচাই করে বাজারে প্রকাশ করতে হবে। খামারিরা যেন ন্যায্য মূল্য পান, তবে তা যেন ভোক্তার পকেট কেটে না হয়-এটি সরকারকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে।'