এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : এবার এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষক-কর্মচারী রাজনৈতিক দলের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় নেমেছেন। পরে আবার তারাই ভোটের দায়িত্বও পালন করবেন।
সুষ্ঠু ভোট গ্রহণের স্বার্থে তাদের নির্বাচনী প্রচারে যাওয়ার সুযোগ বন্ধ চেয়েছেন জেলা প্রশাসকরা (ডিসি)। সোমবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ৬৪ জেলার ডিসি ও আট বিভাগীয় কমিশনারের মতবিনিময় সভায় এ দাবি জানানো হয়। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে বৈঠক সূত্রে জানা যায়, সভায় রাজশাহী বিভাগের এক ডিসি জানিয়েছেন, এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা এখন মূল বেতনের পুরোটা সরকার থেকে পান। এর সঙ্গে সামান্য কিছু ভাতা দেওয়া হয় তাদের। জাতীয় নির্বাচনে তারা প্রিসাইডিং ও সহকারী প্রিসাইডিং এবং পোলিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এসব কর্মকর্তা কেন্দ্র ও কক্ষের পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। তাই কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থান থাকলে সুষ্ঠু ভোট গ্রহণে প্রতিবন্ধকতার শঙ্কা রয়েছে।
এর আগে ২০২৩ সালের জেলা প্রশাসক সম্মেলনে ডিসিরা প্রস্তাব দিয়েছিলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা বেসরকারি হওয়ায় তারা সরাসরি রাজনীতি করার সুযোগ পান। এই সুযোগ বন্ধ হওয়া উচিত। তাই সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালার মতো এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর জন্যও সুনির্দিষ্ট বিধিমালা করার প্রস্তাব এসেছিল। তবে সরকারের তরফে এ বিষয়ে এখনও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য সরকারি কর্মচারীর মতো একটি বিধিমালা করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন ঝিনাইদহের তৎকালীন ডিসি মনিরা বেগম।
প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলা হয়েছিল, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সরাসরি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এতে পাঠদান কার্যক্রমে তাদের দায়সারা আচরণ দেখা যায়। বিধিমালা হলে শিক্ষকতার পাশাপাশি ঠিকাদারি, সাংবাদিকতাসহ একাধিক পেশায় যুক্ত থাকার প্রবণতা ঠেকিয়ে শিক্ষকদের পাঠদানে আন্তরিক করা যাবে। বিধিমালা বা নীতিমালা থাকলে শিক্ষকতা পেশায় থেকে রাজনৈতিক সুবিধা গ্রহণে নিরুৎসাহিত করাও সম্ভব।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব শেখ আব্দুর রশীদের সঞ্চালনায় বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। মন্ত্রিপরিষদ সচিব, জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং নির্বাচন কমিশনের জ্যেষ্ঠ সচিব এ সময় জাতীয় নির্বাচন-সংক্রান্ত বিষয়ে ডিসিদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন।
ওয়াজ মাহফিলে রাজনৈতিক বক্তব্য বন্ধের পরামর্শ- সভায় দুজন ডিসি জানিয়েছেন, ধর্মীয় ওয়াজ মাহফিলে রাজনৈতিক বক্তব্য না দেওয়ার বিধান জাতীয় সংসদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালায় যুক্ত করা উচিত। কারণ, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এ নিয়ে দ্বন্দ্ব বাড়ছে। জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ গতকাল বলেন, ডিসিদের প্রস্তাবটি ভালো। নির্বাচন কমিশন এখন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। তারা কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে প্রচার চালাতে পারবেন কিনা– এটা আমরা পর্যালোচনা করব।
এ বিষয়ে কন্ট্রাক্ট রুলে নিষেধ থাকলে সেটা মনে করিয়ে দেওয়া হবে। যদি কন্ট্রাক্ট রুলে না থাকে তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ধর্মীয় ওয়াজের মধ্যে রাজনৈতিক আলোচনা ঢোকালে তো সমস্যা। এ জন্য ওয়াজের অনুমতি দেওয়ার সময় রাজনৈতিক আলোচনা করা যাবে না– এ ব্যাপারে শর্ত জুড়ে দেওয়া উচিত।
প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা- প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এবারের নির্বাচন গতানুগতিক নির্বাচন নয়, এটি দেশ রক্ষার নির্বাচন। আগামী নির্বাচন ও গণভোটে শতভাগ সততা, নিরপেক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। ডিসি ও কমিশনারদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আগামী নির্বাচন শুধু পাঁচ বছরের সরকার গঠনের একটি নির্বাচন নয়, গণভোট যুক্ত হওয়ায় এটি আরও তাৎপর্যপূর্ণ। এটি সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী একটি নির্বাচন। জাতি বহু প্রহসনের নির্বাচন দেখেছে, সেই স্মৃতি ছাপিয়ে যেতে আমাদের ভূমিকা রাখতে হবে।
তিনি বলেন, এই নির্বাচন গণঅভ্যুত্থানকে পূর্ণতা দেওয়ার নির্বাচন। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জাতির জন্য নির্ধারিত হবে শতাব্দীর গতিপথ। এই নির্বাচনে জেলা প্রশাসকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোনোভাবেই ব্যর্থ হওয়ার সুযোগ নেই।
নির্বাচনের মাধ্যমে জাতি নবজন্ম লাভ করবে এবং জেলা প্রশাসকরা থাকবেন ধাত্রীর ভূমিকায়। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আপনাদের যা যা জানা প্রয়োজন সব জেনে নেবেন। নির্বাচন উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, বিপুল সংখ্যক তরুণ ও নারী ভোটার রয়েছেন, যারা ভোট দেওয়ার উপযুক্ত হলেও গত ১৫ বছর ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা ইতোমধ্যে আগামী নির্বাচনের বিষয়ে গভীর উৎসাহ দেখাচ্ছেন। তারা দেখতে চান কেমন নির্বাচন হচ্ছে।