ঢাকা : বিএনপির মুখপাত্র ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন অভিযোগ করে বলেছেন, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুসহ সরকারের কিছু মন্ত্রী ও নেতা বিভিন্ন সময় জঙ্গিবাদের যে জিকির করেছে সেজন্য বাংলাদেশের নিরাপত্তা নিয়ে অস্ট্রেলিয়া প্রশ্ন তুলেছে।
তিনি বলেছেন, অস্ট্রেলিয়ার অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রী যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন তার সঙ্গে বিএনপি একমত পোষণ করছে। কিন্তু ইনুসহ সরকারের কিছু মন্ত্রী ও নেতা বিভিন্ন সময় জঙ্গিবাদের যে জিকির ও নেতিবাচক প্রচারণা চালিয়েছে তাতে বাংলাদেশের নিরাপত্তা নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার প্রশ্ন তোলাকে প্রভাবিত করেছে। তবে অস্ট্রেলিয়ার এই সিদ্ধান্ত বাস্তবতাবিবর্জিত। আমরা আশা করবো- অস্ট্রেলিয়া সরকার এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে।
সোমবার দুপুরে নয়াপল্টনস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. রিপন বলেন, বর্তমানে ক্ষমতাসীন বিনাভোটের সরকার তাদের শাসন ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করা এবং অনতিবিলম্বে জনগণের অবাধ ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেয়ার মধ্য দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি নতুন নির্বাচন দেয়ার দাবিকে অস্বীকার করার জন্য এবং ‘ধর্মীয় উগ্রপন্থাকে ঠেকানোর জন্য এ সরকার ব্যস্ত’- এমন ধারণা দিয়ে পশ্চিমাদের সহানুভূতি নেয়ার একটি অপচেষ্টা লক্ষ্য করা গেছে।
আমরা বরাবরই বলেছি- এ ধরনের প্রোপাগান্ডা এক পর্যায়ে দেশের ইমেজকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং বাস্তবে হয়েছেও তাই। বিএনপি মুখপাত্র বলেন, ভারত, পাকিস্তান, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর পর নতুন ইমেজে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল যখন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ছক কষছে এবং নিজেদের সর্বোত্তম পারফর্মেন্স প্রদর্শনে উজ্জীবিত এবং দিনক্ষণ, ভেন্যু সবকিছু যখন ঠিকঠাক তখন অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর নিরাপত্তার প্রশ্নে অনিশ্চিত হওয়ায় আমাদেরকে উদ্বিগ্ন করেছে এবং ক্রিকেট প্রেমী হিসেবে আমরা খুব দুঃখ পেয়েছি।
সরকারের উদ্দেশে ড. রিপন বলেন, বাংলাদেশ সম্পর্কে যে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হয়েছে এবং এর সুদূর প্রসারী প্রভাব সম্পর্ক সরকার সচেতন থাকবে এবং এর বিপরীতে ইতিবাচক ধারণা সৃষ্টিতে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নেবেন। তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ বিষয়ক পর্যবেক্ষণ যদিও আমরা বাস্তবতা বিবর্জিত বলে মনে করি, তারপরও দেশের মানুষের মধ্যেও এক ধরনের শঙ্কা সৃষ্টি হতে পারে। নিরাপত্তা নিয়ে শুধু বিদেশীদের নয়, দেশের মানুষকেও আশ্বস্ত করার দায়িত্ব সরকারের।
তিনি বলেন, অস্ট্রেলীয় সরকারের বাংলাদেশবিষয়ক এই পর্যবেক্ষণের কারণে ধর্মীয় সহনশীল রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের জন্য কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রশ্ন উঠে এসেছে। অবিলম্বে এ ধরনের নেতিবাচক ধারণার বাইরে বাংলাদেশকে নিয়ে এসে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে নতুন করে ব্রান্ডিং করা। এজন্য সরকার ও বিরোধী দলসমূহকে একযোগে কাজ করতে হবে। এটা সম্ভব বাংলাদেশে সুশাসন, আইনের শাসন ও মানবাধিকারের বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেয়া, দেশে শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রাজনীতির অবাধ চর্চায় বাধা না দেয়া, সরকারি দল, বিরোধীদলের মধ্যে গণতান্ত্রিক আচরণ, সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করা এবং অনতিবিলম্বে দেশে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সকল দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ নির্বাচনের আয়োজন করা।
গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় সুশাসন-আইনের শাসন-মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনকারী রাষ্ট্রে-কখনোই কোন ধরণের উগ্রপন্থা মাথাচাড়া দিতে পারে না। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. ইনাম আহমেদ চৌধুরী, গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক এড সানাউল্লাহ মিয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএম/ডিআরএ