স্পোর্টস ডেস্ক: অনন্য, অতিমানবীয় এবি ডি ভিলিয়ার্স। ‘ভিন্ন গ্রহের খেলোয়াড়’বাক্যটি সাধারনত ফুটবলে ব্যবহার করা হয় লিওনেল মেসি এবং ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে উদ্দেশ্য করে। সাথে এবার ‘এবি ডি ভিলিয়ার্স’নামটিও যোগ করে নিন, ক্রিকেটে তার ব্যাটিংটাও ঠিক এই প্ল্যানেট ক্যাটাগরির নয়!
এই যেমন গত পরশু ম্যাচের কথাই ধরুন, কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের বিপক্ষে নিজ দল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে এমন একটা ইনিংস খেললেন যা কিনা শুধুমাত্র এবি'র পক্ষেই খেলা সম্ভব। ৪৬ বল মোকাবেলায় অপরাজিত ৮৯ রান, যেখানে তার সতীর্থ অন্য ব্যাটসম্যানরা
ব্যাটেই বল ছোঁয়াতে পারছিলেন না! ব্যাপারটা সেখানেও না, কারন ৪৬ বল মোকাবেলায় সেঞ্চুরিও তো করেছেন অনেকেই, তাহলে ‘মিস্টার থ্রি সিক্সটি ডিগ্রি’ এতটা আলাদা কিভাবে! তিনি আলাদা, তিনি বিচিত্র, তিনি অভূতপূর্ব শুধু তার খেলার ধরনের কারনে। তিনি আলাদা তার শট মেকিং ভিন্নতার কারনে।
ইয়র্কার লেন্থের বলে যখন একজন ব্যাটসম্যানের স্ত্রাইক রেট প্রায় ২০০ ছুঁই ছুঁই, তখন তো তাকে স্পেশাল বলতেই হয়! ছোট্ট একটা উদাহরন দেই গত পরশু ম্যাচের, মোহিত শর্মা বল করছিলেন, বিশতম ওভারের পঞ্চম বল, হালকা স্টেপ আউট করে এগিয়ে আসলেন এবি, চতুর মোহিত এটা খেয়াল করে বলটা ওয়াইডের দাগ বরাবর ইয়র্কার লেন্থে ছাড়লেন, পারফেক্ট ডেথ বোলিং!
কিন্তু ব্যাটসম্যান তো আর এই গ্রহের না, এবি হাঁটু গাড়লেন, শরীরের সমস্ত শিরা যথাসম্ভব টানটান করে বলের লাইনে ঠিকই নিয়ে গেলেন ব্যাটটাকে, এবং মিড অফের উপর দিয়ে বুম! বিস্মিত মোহিতের চোখ শুধু বলটিকে গ্যালারীতে আছড়ে পড়তে দেখল।
ইনিংসের শেষ বল, আগের বল অফস্ট্যাম্পের দুই হাত বাইরে করেও রেহায় পাননি, তাই এবার স্ট্যাম্পের ভেতরেই রাখলেন মোহিত, আধা ফুটের জন্য মিস হয়ে গেল ইয়র্কার লেন্থ, কিন্তু এবি'র জন্য ওইটুকুই কাফি! ট্রেডমার্ক স্টাইলে হাঁটু গাড়লেন, বলের সাথে ব্যাটের মিলনের পরিচিত শব্দ হল এবং বল স্টেডিয়ামের বাইরে, ছক্কার দৈর্ঘ্য ১০২ মিটার!
ক্রিকেট ব্যাকরণের সকল শট তার ঝুলিতে থাকায় এমনিতেই তিনি অনন্য, কিন্তু ব্যাকরণের বাইরেও এমন কিছু শট আছে, যা ক্রিকেট বিশ্ব শুধু তার ব্যাটেই দেখতে পায়।
সাবেক দক্ষিন আফ্রিকান অ্যানাল ডোনাল্ড (সাদা বিদ্যুৎ) এর চোখে এবি ডি ভিলিয়ার্স পৃথিবীর ভয়ংকরতম ব্যাটসম্যান। তিনি টুইট করেন, ‘আমি আমার জীবনে অনেক কঠিনতম ব্যাটসম্যানের মোকাবেলা করেছি, কিন্তু এবি আমার দেখা সবথেকে ভয় জাগানো ব্যাটসম্যান।’
ম্যাচ টাইমে সেদিন ধারাভাষ্যকার সঞ্জয় মাঞ্জেকার বলছিলেন, ‘এবি, তুমি কি দিয়ে তৈরি?' ধারাভাষ্য কক্ষে সেদিন লক্ষন শিভারামাকৃষ্ণানও বলেন, ‘সে সবমিলিয়েই আলাদা ধারার।’
‘স্ট্যান্ড অ্যান্ড ডেলিভার’ টার্ম'টা অনেক ব্যাটসম্যানের সাথেই যায়, কিন্তু এবি আলাদা তার সাবলীলতায়। শুধু তাকে ব্যাট করতে দেখলেই মনে হয়, ব্যাটিং করাটা দুনিয়ার সবথেকে সহজ কাজ। আবার টি-টোয়েন্টির এই ভয়ংকরতম ব্যাটসম্যানটিই ফরম্যাটের বদলে পিচে দাঁড়িয়ে যান পাহাড় হয়ে।
সারাদিন ব্যাট করে মাত্র ৪০ রানে অপরাজিত থাকতে পারেন দলের প্রয়োজনে। এবি আলাদা এই জায়গাগুলোতেই, পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেবার এই অস্বাভাবিক ক্ষমতাই তাকে এনে দিয়েছে ভিন্ন গ্রহের তকমা। আমার চোখে আব্রাহাম বেঞ্জামিন ডি ভিলিয়ার্স, ‘অর্থোডক্স উইথ অ্যা আনঅর্থোডক্স স্টাইল’!
১২ এপ্রিল ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/হাবিব/এইচআর