স্পোর্টস ডেস্ক: বিসিবি একাডেমি ভবনে গতকাল দুপুরে দেখা গেল জুবায়ের হোসেনকে। ‘নির্জন’ মিরপুরে বাংলাদেশ দলে খেলা একজনকে অন্তত পাওয়া গেল। অবশ্য জুবায়ের জানালেন, আছেন আরও একজন। তিনি ব্যাটিং অনুশীলন করছেন ইনডোরে।
এনামুল হক মাত্রই অনুশীলন সেরে দাঁড়িয়েছেন ইনডোরের দরজায়, এই সময় জুবায়েরের ফোন। এশিয়া কাপ ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সামনে রেখে শুরু হওয়া বাংলাদেশ দলের অনুশীলন ক্যাম্পে হঠাৎ ডাক পেয়েছেন বাংলাদেশ দলের লেগ স্পিনার। কাল রাতেই তাঁর খুলনায় রওনা হওয়ার কথা ছিল। এনামুলের কাছে জুবায়ের জানতে চাইলেন, তাঁকেও কিছু বলা হয়েছে কি না। দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল এনামুলের। শুকনো মুখে শুধু বললেন, ‘না রে...।’
রানিংয়ের জন্য ইনডোর থেকে চলে এলেন বিসিবি একাডেমি মাঠে। তার আগে জেনে নিলেন, এখানে কোন কোন সময়ে অনুশীলন করা যাবে। দুয়ারে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট। এখানে অনুশীলন করার সুযোগ তাই সব সময় মেলে না। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের কথা উঠতেই মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠল এনামুলের। ২০১২ অস্ট্রেলিয়া যুব বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সামনে থেকে। ২ সেঞ্চুরি ও ১ ফিফটিতে করেছিলেন টুনামেন্ট-সর্বোচ্চ ৩৬৫ রান। সেই দলের অনেকেই এখন খেলছেন বাংলাদেশ দলে। আঙুলের কর গুনে এনামুল বের করলেন কারা কারা বাংলাদেশ দলে আছেন, ‘আমাদের দলটা দুর্দান্ত ছিল। ওই দলের নুরুল হাসান, আবু হায়দার, লিটন দাস, মোসাদ্দেক হোসেন, সৌম্য সরকার, তাসকিন আহমেদ এশিয়া কাপ ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রাথমিক দলে রয়েছে।’
এশিয়া কাপ ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ প্রসঙ্গ উঠতেই মুখটা যেন তাঁর আঁধারে ডুবে গেল। ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত গত এশিয়া কাপে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রান করেছিলেন এনামুল। ৪ ম্যাচে ১ সেঞ্চুরি ও ১ ফিফটিতে ৫৬.৭৫ গড়ে রান ২২৭। আর এবার? জিম্বাবুয়ের সঙ্গে গত নভেম্বরে দুটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে দল থেকে বাদ পড়ে গেছেন। দূর থেকেই হয়তো দেখতে হবে দলের খেলা। এনামুলকে এশিয়া কাপে দর্শক হয়ে থাকতে হচ্ছে, এটি একরকম নিশ্চিত। একের পর এক ধাক্কায় বেশ বিপর্যস্তই দেখাল এনামুলকে।
‘ধাক্কা’ বলতে জাতীয় দল থেকে বাদ পড়া, তাঁর টেকনিক ও খেলার ধরন নিয়ে নানা প্রশ্ন, কুষ্টিয়ায় এক যুবককে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ, সর্বশেষ বোর্ডের চুক্তি থেকে নাম কাটা যাওয়া—একরাশ নেতিবাচক সংবাদ ঘিরে ধরেছে ২৩ বছর বয়সী ওপেনারকে।
এর মধ্যে সবচেয়ে বড় অভিযোগ তিনি ‘নিজের জন্য খেলেন’। এনামুল অবশ্য সপক্ষে যুক্তি তুলে ধরলেন, ‘ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টিতে আমার গড়, স্ট্রাইক রেট দেখুন। আমি তো শুরু থেকে এভাবেই খেলে আসছি। সাফল্যও পেয়েছি। একেকজনের খেলার ধরন একেক রকম। ম্যাথু হেইডেন যেভাবে খেলেছেন, মাইকেল বেভান কি সেভাবে খেলতেন?’
পরিসংখ্যান হয়তো তাঁকে উৎসাহ দিতে পারে। তবে ঘিরে ধরা সমস্যার জাল ফুঁড়ে বেরোতে খুব একটা সাহায্য করবে না। সেটা জানেন বলেই হতাশার ভেতর আশার আলো খুঁজছেন এনামুল, ‘ভালো খেললে নিশ্চয়ই সুযোগ আসবে। এখন আমার কাজ পারফর্ম করা। যেখানেই খেলি, ভালো করার চেষ্টা করব। এ জন্য আরও বেশি অনুশীলন করব। আগে চার ঘণ্টা করলে এখন করব ছয় ঘণ্টা।’
চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় ফাঁকা মাঠটায় রানিং শুরু করলেন এনামুল। তাঁর এ দৌড় যেন ‘হার্ডল’ পেরিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছানোর। সূত্র : প্রথম আলো
২৫ জানুয়ারি, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/আরিফুর রাজু/এআর