কিশোরগঞ্জ: পাকুন্দিয়ার ৯ ইউনিয়নের ৭টিতেই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন ১২জন আওয়ামী লীগ নেতা। বিদ্রোহী প্রার্থীদের এই তালিকায় রয়েছেন দুই বর্তমান চেয়ারম্যানও। ফলে দলীয় প্রার্থীরা পড়েছেন চরম বেকায়দায়। বিদ্রোহীদের নিয়ে আওয়ামী লীগের এই গৃহবিবাদের কারণে বিএনপি প্রার্থীরা সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, পাকুন্দিয়া উপজেলার নয়টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে মোট ৪৯ জন প্রার্থীর মধ্যে ৪৮ জন প্রার্থী যাচাই-বাছাই শেষে বৈধ বলে ঘোষিত হয়েছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের নয়জন, বিএনপির নয়জন, জাতীয় পার্টির পাঁচজন ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের একজনসহ মোট ২৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বাকি ২৪ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের ১২ বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ নেতা বর্তমান চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আব্দুছ ছাত্তার ও বুলবুল আহমেদ বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন।
এখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সরকার শামীম আহাম্মদ। এই ইউনিয়নের অপর প্রার্থীরা হলেন- বিএনপির প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান তৌফিকুল আলম, জাতীয় পার্টির প্রার্থী মিনহাজ উদ্দিন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. খোকন মিয়া। একই ভাবে দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মো. জালাল উদ্দিন বাচ্চু। এই ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান বাচ্চু ছাড়াও আরেক আওয়ামী লীগ নেতা মো. জাহাঙ্গীর আলম বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। এখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা মো. সাহাব উদ্দিন।
এই ইউনিয়নের পাঁচ চেয়ারম্যান প্রার্থীর অন্যরা হলেন- বিএনপি প্রার্থী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. আরফান উদ্দিন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আল মামুন। চরফরাদী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান মো. সোহরাব উদ্দিন। এখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন মো. আবদুল মান্নান। এই ইউনিয়নে তিন প্রার্থীর মধ্যে বিএনপির প্রার্থী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব বর্তমান চেয়ারম্যান মো. কামাল উদ্দিন। বুরুদিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন তৃণমূলের ভোটে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনীত মো. নাজমুল হুদা রুবেল।
এখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা কামাল আকন্দ। এই ইউনিয়নের চার প্রার্থীর অন্যরা হলেন- বিএনপি প্রার্থী অধ্যক্ষ মো. আসাদুজ্জামান আসাদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. কুতুব উদ্দিন আকন্দ। চণ্ডিপাশা ইউনিয়নে সাবেক চেয়ারম্যান মো. মতিউর রহমানসহ তিন জন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। অন্য দুজন হলেন- মো. বোরহান আহম্মেদ ও মো. শামস উদ্দিন। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মো. মঈন উদ্দিন। এই ইউনিয়নের দশ চেয়ারম্যান প্রার্থীর অন্যরা হলেন- বিএনপি প্রার্থী ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সারোয়ার আলম বরকত, জাতীয় পার্টির এ.কে কামরুজ্জামান এবং চার স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. নূরুল ইসলাম, মো. জিল্লুর রহমান, মো. নাজমুল হুদা ও মো. বাহাউদ্দিন।
সুখিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুল হক ও মো. সাইফুল ইসলাম স্বপন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আবদুল হামিদ টিটু। এই ইউনিয়নের পাঁচ চেয়ারম্যান প্রার্থীর অন্যরা হলেন- বিএনপি প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মো. আফিল উদ্দিন ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. চান মিয়া।
নারান্দী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. মোতাহার হোসেন। এখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি পাকুন্দিয়া ডিগ্রি কলেজের সাবেক ভিপি মো. শফিকুল ইসলাম শফিক। এই ইউনিয়নের পাঁচ চেয়ারম্যান প্রার্থীর অন্যরা হলেন- বিএনপি প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মো. জহিরুল ইসলাম খোকন এবং দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আজিজুল হক ও মো. বোরহান। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীমুক্ত দুইটি ইউনিয়নের মধ্যে এগারসিন্দুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নূরুজ্জামান মিয়া বাবু। এই ইউনিয়নের পাঁচ চেয়ারম্যান প্রার্থীর অন্যরা হলেন- বিএনপি প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মো. বজলুল করিম বাবুল, জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. আবদুল কাইয়ুম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মো. জুলফিকার আলী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী তিন বারের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মতিউর রহমান সরকার।
এ ছাড়া হোসেন্দী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন মো. রফিকুল হক টিটু। এই ইউনিয়নের পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে অন্যরা হলেন, বিএনপির প্রার্থী মো. মোফাজ্জল হক মিটন, জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. মোবারক হোসেন এবং দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মজিবুর রহমান ও শহীদুল্লাহ। এদিকে কোনো ইউনিয়নেই বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকলেও দলীয় মনোনয়ন না চেয়ে এগারসিন্দুর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন উপজেলা বিএনপির সদস্য সাবেক চেয়ারম্যান মো. মতিউর রহমান সরকার। এই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীর সঙ্গে তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ভোটাররা জানিয়েছেন। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. নাজমুল ইসলাম জানান, পাকুন্দিয়া উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মোট ৪৯জন, সংরক্ষিত মহিলা আসনে ৯৮ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ৩৫৬ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেন।-মানবজমিন
১৪ মে, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ