কুমিল্লা : কুমিল্লা নয় ময়নামতি নামে বিভাগ হবে- এমন খবরে উত্তাল হয়ে উঠেছে কুমিল্লা নগরী। খবর জানাজানি হওয়ার পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন কর্মসূচি চলছে প্রতিবাদে। ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন কুমিল্লার সুশীল সমাজ। তবে ‘ময়নামতি’ নামের পক্ষেও জনমত রয়েছে। এই নামে বিভাগ হলে ঐতিহ্য রক্ষা পাবে এবং মানুষ এই এলাকায় আসতে আগ্রহী হবে বলে মনে করছেন সমর্থকরা।
মঙ্গলবার রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের জানান, কুমিল্লা বিভাগের নাম হবে ‘ময়নামতি’। তিনি আরও জানান, এখন থেকে আর কোনও জেলার নামে বিভাগের নামকরণ করা হবে না। নতুন বিভাগের নাম ভিন্ন নামে হবে।
এই খবর জানার পরপরই কুমিল্লার প্রায় সর্বস্তরের মানুষ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
প্রবীণ আইনজীবী অ্যাডভোকেট আহম্মদ আলী বলেন, ‘আধুনিক সভ্যতার রূপ হলো কুমিল্লা। সমৃদ্ধ কুমিল্লা জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের শেকড় অনেক গভীরে। কুমিল্লাকে বাদ দিয়ে ময়নামতি নামে বিভাগের নামকরণের কোনও যৌক্তিকতা নেই।’
কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার বলেন, ‘বাংলাদেশের সব বিভাগের নাম ওই বিভাগের সদর দফতর যে জেলায় অবস্থিত, সেই জেলার নামে হয়েছে। যেমন ঢাকা বিভাগের নাম ঢাকা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিভাগের নাম চট্টগ্রাম বিভাগ। কুমিল্লার নামে বিভাগ না হলে কুমিল্লার এক কোটি মানুষের সঙ্গে অবিচার করা হবে।’
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাজী আমিন-উর রশীদ ইয়াছিন বলেন, ‘আমরা কুমিল্লাবাসী আলাদা রাজনৈতিক মতাদর্শে আলাদা ধর্মীয় অনুশাসনে চললেও জেলার বৃহত্তর স্বার্থে সব সময় ঐক্যবদ্ধ ছিলাম, আছি ও থাকবো। কুমিল্লা নামেই কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়ন চাই, অন্য নামে নয়।’
কুমিল্লা জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক ও কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সহ-সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, ‘অন্য কোনও নাম আমরা কুমিল্লাবাসী গ্রহণ করবো না।’
বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. ইকবাল আনোয়ার বলেন, ‘অতীতে দেশে যত বিভাগ গঠন করা হয়েছে ওই জেলার কোনও বিশেষ নামকে প্রাধান্য দেওয়া হয়নি। যদি প্রাধান্য দেওয়া হতো তাহলে সিলেট বিভাগের নামকরণ হতো শাহজালাল বিভাগ। আসলে এমন প্রস্তাবনা কেন করা হলো আমার বোধগম্য নয়।’
দেশের প্রাচীন পত্রিকা আমোদ’র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক বাকীন রাব্বী বলেন, ‘কুমিল্লাবাসী হিসেবে আমি তীব্র অপমানবোধ করবো- যদি কুমিল্লা নাম বাদ দিয়ে অন্য নামে বিভাগ ঘোষণা করা হয়। ’
নারী নেত্রী ও কুমিল্লা সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বায়ক পাপড়ি বসু বলেন, ‘একজন কুমিল্লাবাসী হিসেবে এমন প্রস্তাবের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই।’
কুমিল্লার বদলে ময়নামতি নামে বিভাগের নাম প্রস্তাবনার বিষয়টিকে সহজে মেনে নিতে পারছেন না কুমিল্লার সাধারণ মানুষ। আন্দোলন, মানববন্ধন শুরু হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই নগরীর টাউন হলসহ বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে মানববন্ধন করা হচ্ছে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও ময়নামতি নামকরণের প্রতিবাদে ঝড় উঠেছে।
জহিরুল ইসলাম রিন্টু লিখেছেন, ‘কুমিল্লা বিভাগকে কুমিল্লা ছাড়া, অন্যও কোনও নাম মানি না। ...কুমিল্লাবাসী কি নিশ্চুপ ?’
সালেহ আহমেদ লিখেছেন, 'কুমিল্লার নাম নিয়া পলিটিক্স কইরেন্না!!! এটা আমরা কখনও হতে দেবো না। পারলে আপনার বাড়ির নাম ময়নামতি ভিলা রাখেন।’
শাহিন রবি নামে আরেকজনের স্ট্যাটাস, ‘পরিবর্তন করতে হলে খন্দকার মোস্তাকের দাউদকান্দি, কর্নেল রশিদের চান্দিনার নাম পরিবর্তন করা যায়, কিন্তু কুমিল্লার নাম পরিবর্তন করে ময়নামতি রাখা যায় না। কুমিল্লায় থাকতে চাই, ময়নামতিতে নয়। ’
তৈয়বুর রহমান সোহেল নামে একজন ফেসবুকে লেখেন, ‘মনে হচ্ছে কুমিল্লাকে বিভাগ করার প্রক্রিয়াকে মন্থর করে দেওয়ার দুর্বল ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।’
তোফায়েল আহমেদ তানিম নামে একটি আইডি থেকে স্ট্যাটাস দেওয়া হয়, ‘বিভাগ নিয়া চুদুর বুদুর বন্ধ করেন, মাঠে নামতে বাধ্য করবেন না।’
সূচনা তাহসিন নামের একজন স্ট্যাটাসে লেখেন 'কুমিল্লা বিভাগ' কুমিল্লার নামেই হতে হবে। ...কুমিল্লার নামেই ময়নামতির পরিচয়, ময়নামতি কখনও কুমিল্লার পরিচয় হতে পারে না।’
ময়নামতি নামের পক্ষে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মোতালেব হোসেন বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। ময়নামতি বিভাগের সদর দফতর কুমিল্লায় চাই।’
বরুড়া উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘ময়নামতি একটি ঐতিহাসিক নাম। ময়নামতি নাম নিয়ে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। আমরা কুমিল্লায় বিভাগ চাই।’
গোমেতি সংবাদ নামের স্থানীয় সংবাদপত্রের সম্পাদক মোবারক হোসেন বলেন, ‘ময়নামতি নামটি কুমিল্লার গুরুত্ব অনেক বাড়িয়ে দেবে। এতে এ বিভাগে আসতে অন্য জেলার লোকজনের আপত্তিও থাকবে না। ময়নামতি রানীর বাংলো ঘিরে ময়নামতি বিভাগের সদর দফতর করা হোক।’ -বাংলা ট্রিবিউন।
১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম