আবুল খায়ের, কুমিল্লা থেকে : কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে বড় দুই দলের প্রার্থীই ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রতীক বরাদ্দ কিংবা আনুষ্ঠানিক প্রচার প্রচারণা শুরু না হলেও তারা নিচ্ছেন নির্বাচনের প্রস্তুতি। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী আওয়ামী লীগের প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা দলের বিপরীত মেরুতে অবস্থানকারী নেতাদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন।
কোন্দল নিরসন করে সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরুর জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি নিজেও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সীমা ও তার পরিবার। অন্যদিকে দলীয় ছোটখাটো বিভেদ স্বল্প সময়ের মধ্যে মিটিয়ে ভোটকেন্দ্রভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠনে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বিএনপি প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর অনুসারীরা। কেন্দ্রের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে সিনিয়র নেতাদের নির্দেশনাকে গুরুত্ব দিয়ে সব কার্যক্রম পরিচালনা করছেন সাক্কু।
এ ছাড়াও শনিবার দিনভর নগরীর বিভিন্ন ব্যবসায়ী নেতা, সুশীল সমাজের নেতাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছেন তিনি। এমনটাই জানিয়েছেন তার ঘনিষ্ঠজনরা। জানা যায়, কুসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ আফজাল খানের মেয়ে আঞ্জুম সুলতানা সীমাকে মনোনয়ন দেয়ার পর ক্ষুব্ধ হয়েছে দলের অপর অংশটি। এ বিভেদ ও কোন্দল নিরসন না করলে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া সম্ভব নয় বলে দাবি করছেন তৃণমূলের নেতারা।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে দলের হাইকমান্ড কুমিল্লা আওয়ামী লীগের দুই চির প্রতিদ্বন্দ্বী আফজল খান ও হাজী আকম বাহাউদ্দিন বাহারের কোন্দল নিরসনের উদ্যোগ নেয়। দলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম কুমিল্লায় এসে দুই গ্রুপকে নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করে কিছুটা নমনীয় করেন। দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনায় সীমা নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও এলাকায় গিয়ে অপর গ্রুপের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে শনিবারও একাধিক বৈঠক করেছেন। এদিন সন্ধ্যায় তিনি যুগান্তরকে বলেন, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে যাচ্ছি। যেসব ওয়ার্ডে কোন্দল বেশি, সেগুলোকে প্রাধান্য দিচ্ছি। কোন্দল মেটানোর চেষ্টা করছি। তবে কখন কোথায় যাচ্ছি, আচরণবিধি মেনে তা গণমাধ্যমকে এখন জানাতে চাচ্ছি না।
অপরদিকে প্রতিটি ওয়ার্ড ও কেন্দ্রভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন সাক্কু ও তার অনুসারীরা। প্রতিটি ওয়ার্ডে বিএনপির নেতাকর্মীরা তাদের নিজ উদ্যোগে কমিটি গঠনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। ২৭টি ওয়ার্ডে ১০৩টি ভোটকেন্দ্রকে টার্গেট করে প্রায় ১৫০টি কমিটি গঠনের কাজ চলছে। কমিটি গঠন করে মোবাইল নাম্বারসহ এ তালিকা বিএনপির কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেলের কাছে জমা দেয়া হবে। জানা গেছে, বিগত নির্বাচনগুলোতে সাক্কুর বারবার অংশগ্রহণ ও বিজয়ের মধ্য দিয়ে কেন্দ্রভিত্তিক তার অনেক বিশ্বস্ত লোকজন ও নেতাকর্মী সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে খুব সহজেই তিনি নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠনসহ প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যেতে পারছেন। এ বিষয়ে মনিরুল হক সাক্কু বলেন, বিএনপিতে কোনো বিরোধ নেই, আমাকে বিজয়ী করতে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী মাঠে নামতে প্রস্তুত হচ্ছেন।
সম্পদে এগিয়ে সাক্কু, শিক্ষায় সীমা : নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় প্রধান এ দুই দলের প্রার্থীর মধ্যে সাক্কু সম্পদে এগিয়ে থাকলেও সীমার তুলনায় শিক্ষায় পিছিয়ে রয়েছেন। শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত সীমার শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ/বিএড। অপর দিকে পেশায় ব্যবসায়ী সাক্কুর শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি। সাক্কুর সম্পদের চেয়ে তার স্ত্রী আফরোজা জেসমিন টিকলীর সম্পদের পরিমাণ বেশি। রিটার্নিং অফিসারের কাছে দাখিল করা মনোনয়নপত্রের হলফনামা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, বিএনপির মনিরুল হক সাক্কুর সম্পদ সব মেয়র প্রার্থীর চেয়ে বেশি। এ ছাড়াও সাক্কুর বিরুদ্ধে বর্তমানে ঢাকার রমনা থানায় একটি ও কুমিল্লায় একটি মামলা রয়েছে। অপর দিকে আওয়ামী লীগের সীমার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। সাক্কুর সম্পদ তার চেয়ে বেশি। সাক্কু বাড়িভাড়া থেকে পান ৭২ হাজার টাকা, ব্যাংক সুদ দুই লাখ ১২ হাজার টাকা ও সম্মানী ভাতা ১১ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে নগদ রয়েছে ৮৭ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। তার স্ত্রীর নামে নগদ আছে ৫৫ লাখ ৮৬ হাজার টাকা ও ব্যাংকে জমা ৮৭ হাজার টাকা। সঞ্চয়পত্র বাবদ সাক্কুর রয়েছে দুই লাখ টাকা।
তার স্ত্রীর এ খাতে আছে ২৯ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। তার গাড়ি আছে দুটি। দু’জনের স্বর্ণ আছে ১০ তোলা করে। সাক্কুর স্ত্রী ব্যবসায় পুঁজি খাটিয়েছেন দুই কোটি ১২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে সাক্কুর অকৃষি জমি আছে দশমিক ০৯২৩ একর। অন্যদিকে তার স্ত্রী আফরোজা জেসমিন টিকলীর রয়েছে দশমিক ০৫ একর জমি। তার স্ত্রীর আবাসিক ও বাণিজ্যিক সম্পদের মধ্যে কুমিল্লা নগরের রেসকোর্স এলাকায় সেল নিশা টাওয়ারে রয়েছে তিনটি বাণিজ্যিক দোকান, দ্বিতীয় তলায় ১২টি দোকান, তৃতীয় ও চতুর্থ তলার সাত হাজার ২৫৬ বর্গফুটের দুটি স্পেস, ফাতেমা জাহানারা টাওয়ারে ষষ্ঠ ও সপ্তম তলায় দুটি ফ্ল্যাট ও তিন হাজার ২২৯ বর্গফুটের স্পেস।
অপর দিকে আওয়ামী লীগের আঞ্জুম সুলতানার বাড়ি ও দোকান ভাড়া থেকে আয় ৫৪ হাজার টাকা। তিনি শিক্ষকতা পেশা থেকে আয় করেন আড়াই লাখ টাকা ও অন্যান্য খাত থেকে দুই লাখ ৪৫ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ ৫০ হাজার টাকা, ব্যাংকে জমা ৪৬ লাখ টাকা, সঞ্চয়পত্র বাবদ ২০ লাখ টাকা ও স্বর্ণ ৩০ তোলা। এ ছাড়া তার স্বামী নিসার উদ্দিন আহমেদের রয়েছে ৩০ তোলা সোনা। আঞ্জুম সুলতানার স্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে অকৃষি জমি ১০ শতক ও টিনশেড দালান। তার স্বামীর অকৃষি জমি আছে ২০ শতক, ২ হাজার বর্গফুটের দ্বিতলবিশিষ্ট আবাসিক দালান ও ১ হাজার ২০০ বর্গফুট তিনতলা আবাসিক দালান। যুগান্তর
০৫ মার্চ ২০১৭/এমটি নিউজ২৪/এসবি