মাহমুদ আজহার : শেষ পর্যন্ত সুষ্ঠু পরিবেশ (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) থাকলে আগামী ৩০ মার্চ কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মনিরুল হক সাক্কু টানা দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র হবেন— এমনটাই প্রত্যাশা বিএনপির। নারায়ণগঞ্জ থেকে কুমিল্লায় একটু ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছে দলটি। সেখানে ২৭টি ওয়ার্ডভিত্তিক কেন্দ্রীয় নেতাদের পরিবর্তে স্থানীয় নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর আগে নারায়ণগঞ্জে প্রতি ওয়ার্ডে কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন সমন্বয়ক।
বিএনপি নেতাদের দাবি, কুমিল্লায় বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা শক্তিশালী। তাই স্থানীয় নেতাদের সমন্বয়ে নির্বাচনী কমিটি করা হয়েছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা এরই মধ্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বিভিন্ন স্থানে প্রচারে বাধা পাওয়ার কথাও বলেছেন তারা। কুমিল্লার নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাও পর্যবেক্ষণ করছেন দলের নীতি নির্ধারকরা। এরই মধ্যে নতুন ইসির কাছে বেশকিছু অভিযোগও তুলে ধরা হয়েছে। ইসি এগুলো আমলে নেয় কি না তাও খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। কুমিল্লা সিটিতে দলের প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। সদস্য সচিব হিসেবে রয়েছেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী।
কুমিল্লা সিটিতে বিএনপি প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা কতটুকু— এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে আমাদের জয়ের সম্ভাবনাই বেশি। আমাদের পজিশন খুবই ভালো। তবে সব কিছুই নির্ভর করবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশের ওপর। যিনি প্রার্থী হয়েছেন, তিনি সর্বশেষ মেয়র ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি কুমিল্লার জনপ্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন। তবে কুমিল্লায় এখনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। সরকারি দলের লোকেরা বিভিন্ন স্থানে প্রচারে বাধা দিচ্ছে। এটা নির্বাচন কমিশনকেও জানানো হয়েছে।
কুমিল্লার নির্বাচনে দলের প্রধান সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান বলেন, সর্বস্তরেই আমাদের প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর অবস্থা ভালো। বিশেষ গরিব মানুষ ও নারী ভোটারের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা। আবার সংখ্যালঘু সমাজের মধ্যেও তার জনপ্রিয়তা রয়েছে। শেষ পর্যন্ত লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকলে সাক্কু বিপুল ভোটে জয়ী হবে। জানা যায়, কুমিল্লা সিটি নির্বাচনকে ঘিরে কয়েকটি সেল করেছে বিএনপি। এর মধ্যে রয়েছে, কেন্দ্রীয় নির্বাচনী সেল, স্থানীয় নির্বাচন সমন্বয় সেল, মিডিয়া সেল ও ২০ দলীয় জোটের সমন্বয় সেল। নগরীর ধর্মসাগর পাড় এলাকায় কেন্দ্রীয় নির্বাচনী সেলের অফিস করা হয়েছে। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সের নেতৃত্বে সেলে রয়েছেন কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল, শেখ মোহাম্মদ শামীম, চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শামসুদ্দিন দিদার ও সারোয়ার জাহান দোলন।
দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বলেন, মিডিয়া সেলের প্রধান করা হয়েছে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদকে। স্থানীয় সমন্বয়ক সেলের দায়িত্বে রয়েছেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক হাজী আমিনুর রশীদ। তার সঙ্গে রয়েছেন কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল আওয়াল খান ও মোস্তাক মিয়া। ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়কের দায়িত্বে রয়েছেন এলডিপি মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ। জোটের নেতা-কর্মীরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করে মনিরুল হক সাক্কুর পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন।
জানা যায়, গতকালও বৃষ্টি উপেক্ষা করে কেন্দ্রীয় নেতাদের নেতৃত্বে বিএনপির ৮টি টিম কুমিল্লা নগরীর বিভিন্ন স্থানে প্রচার চালিয়েছে। এর মধ্যে ২১ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচার চালাতে গিয়ে দলটি বাধার সম্মুখীন হয় বলে অভিযোগ করেছেন নজরুল ইসলাম খান। তিনি জানান, আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বহর এসে আমাদের প্রার্থীর টেম্পোতে হামলা করে। এক পর্যায়ে মাইক খুলে ছুড়ে দেওয়া হয়। টেম্পো উল্টে দেওয়া হয়। অন্য স্থানেও কমবেশি বাধা আসছে। এটা ভালো লক্ষণ নয়। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে প্রচারে অংশ নেন, ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, মাহবুবুর রহমান শামিম, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, কর্নেল (অব.) আনোয়ারুল আজিম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া, আবদুল আউয়াল খান, সহ-দফতর সম্পাদক বেলাল আহমেদ, সালাউদ্দিন ভূইয়া শিশির, একরামুল হক বিপ্লব, সাবেরা আলাউদ্দিন, আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ। তারা স্থানীয় নেতাদের সমন্বয়ে টিম করে নগরীর ১০, ১৫, ১৬, ১৯, ২১ ও ২৩ ওয়ার্ডে প্রচার চালান। -বিডি প্রতিদিন
২১ মার্চ ২০১৭/এমটি নিউজ২৪/এসবি