তারেক : কোন্দলের কারণে বিভিন্ন নির্বাচনে দলসমর্থিত প্রার্থীর পরাজয় এড়াতে কঠোর হচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনজুম সুলতানা সীমার পরাজয়ের নেপথ্যে কুমিল্লার প্রভাবশালী যেসব নেতা রয়েছেন তাদের বহিষ্কারের বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া আসন্ন ৭০টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রাথমিকভাবে বহিষ্কারের হুশিয়ারিও জানাবে দলটি।
গতকাল রোববার সকালে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানম-ির রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলটির সম্পাদকম-লীর এক বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা আমাদের সময়কে তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এতে দলটির সম্পাদকম-লীর বেশিরভাগ নেতা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, কুসিক নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর কাছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনজুম সুলতানা সীমার পরাজয়ের বিষয়টি সহজভাবে মেনে নিতে পারেনি ক্ষমতাসীন দলের হাইকমান্ড। খোদ আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজয়ের কারণ জানতে চান দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে। এ বিষয়ে কুসিক নির্বাচনী পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ওই বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীমের কাছে বৈঠকে জানতে চান ওবায়দুল কাদের। জবাবে শামীম বলেন, জেলার সংসদ সদস্য আ ক ম বাহারউদ্দীন বাহারের নেতাকর্মীরা ভোটের আগের দিন ভোটারদের ধানের শীষে ভোট দিতে বলেছেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি করতে শামীমকে নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। ওই সময় বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা কুসিকের পরাজয়ের নেপথ্যের মন্ত্রী-এমপিদের দল থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান। ওবায়দুল কাদের বলেন, দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় তিনি বিষয়টি উপস্থাপন করবেন। আজকের বৈঠকে এ বিষয়ে তিনি সম্পাদকম-লীর সবার মতামত নিয়ে রাখলেন। সাংগঠনিক রিপোর্ট অনুযায়ী কার্যনির্বাহী কমিটির উপস্থিতিতে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
এ ছাড়া কুসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা নন, সাবেক ছাত্রনেতাদের অনেককেই নির্বাচনী প্রচারে দেখা গেছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের শামীমের কাছে জানতে চান তারা কার নির্দেশে কুমিল্লায় নির্বাচনী প্রচারে ছিল? জবাবে শামীম বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই।
বৈঠক সূত্রে আরও জানা গেছে, আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দল সমর্থিত প্রার্থীর বিপক্ষে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে দাঁড়াচ্ছেন তাদের কেন দল থেকে বহিষ্কার করা হবে না এই মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদককে। দলটির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন আগামী ১৬ এপ্রিল ৮টি বিভাগের ৭০টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে রংপুর বিভাগে ৭টি, রাজশাহী বিভাগে ৬টি, খুলনা বিভাগে ২টি, বরিশাল বিভাগে ১৫টি, ঢাকা বিভাগে ২৩টি, ময়মনসিংহ বিভাগে ৬টি, সিলেট বিভাগে ৩টি এবং চট্টগ্রাম বিভাগে ৮টি ইউনিয়নে নির্বাচন হবে। নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন গত ২৮ মার্চ পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, ৭০টি ইউনিয়নের মধ্যে ২৪টিতে চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী রয়েছে আওয়ামী লীগের। বাকি ৪৬টি ইউনিয়নে রয়েছে বিদ্রোহী প্রার্থী। এসব বিদ্রোহী প্রার্থীকে দল থেকে বহিষ্কারের হুশিয়ারি দিয়ে চিঠি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আজকালের মধ্যেই বিদ্রোহীদের ঠিকানায় চিঠি পৌঁছে যাবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ বিষয়ে বলেন, সম্পাদকম-লীর বৈঠকে আমরা দলের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। সুনামগঞ্জ-২ উপনির্বাচন ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং আগামীতে আরও কিছু নির্বাচন রয়েছেÑ তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের বিষয়ে করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কারণ দলের বড় সিদ্ধান্ত কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে গ্রহণ করা হয়। সাংগঠনিক রিপোর্ট অনুযায়ী কার্যনির্বাহী কমিটির উপস্থিতিতে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা এ সিদ্ধান্ত নেবেন। এক প্রশ্নে তিনি বলেন, আগামী ১২ এপ্রিল দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক কুমিল্লার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লীর বৈঠক শেষে দলের নেতাদের সঙ্গে আসন্ন পহেলা বৈশাখ ও মুজিবনগর দিবস পালনের প্রস্তুতির বিষয়ে আরও একটি বৈঠক করেন ওবায়দুল কাদের। বৈঠক শেষে তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও সব ধরনের অরাজকতাকে প্রতিহত করার অভিপ্রায়ে আগামী ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস পালন ও ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখের শোভাযাত্রার প্রস্তুতির বিষয়ে কথা হয়েছে। ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার উদযাপন কমিটি গঠন করা হয়েছে। দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুুর রহমান ও সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে।
বৈঠকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, এনামুল হক শামীম, কৃষিবিষয়ক সম্পদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, উপ-দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়-য়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।-দৈনিক আমাদেরসময়
৩ এপ্রিল ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস