প্রতিনিধি, দাউদকান্দি, কুমিল্লা: স্কুলছাত্র মুছা মিয়াকে কচি হাতেই ধরতে হয়েছে রিকশার হাতল। সম্প্রতি কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর বাজারে ঢাকা-হোমনা সড়কে।
স্কুলছাত্র মুছা মিয়াকে কচি হাতেই ধরতে হয়েছে রিকশার হাতল। সম্প্রতি কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর বাজারে ঢাকা-হোমনা সড়কে।
কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গোপচর গ্রামের খোরশেদ আলমের ছেলে মো. মুছা মিয়া (১৫) রিকশা চালিয়ে পড়াশোনা করছে। সে গৌরীপুর সুবল আফতাব উচ্চবিদ্যালয়ে কারিগরি শাখার দশম শ্রেণির ছাত্র। পরিবারের অসচ্ছলতার কারণে তাকে এ বয়সেই রিকশার হাতল ধরতে হয়েছে।
মুছার বাবা খোরশেদ আলম (৬৫) বলেন, তিনি এই বৃদ্ধ বয়সে শরীর সুস্থ থাকলে ইট ভাঙার কাজ করেন। এতে প্রতিদিন প্রায় তিন শ টাকা আয় করতে পারেন। এ টাকায় সংসারের ভরণপোষণ শেষে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ দিতে পারেন না। বসতভিটা ছাড়া তাঁর আবাদি জমিও নেই।
এক ভাই চার বোনের মধ্যে মো. মুছা মিয়া তৃতীয়। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করার কয়েক বছর পর গত জুনের প্রথম সপ্তাহে বড় বোনের বিয়ে হয়েছে। অষ্টম শ্রেণি পাস করার পর পারিবারিক আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে দ্বিতীয় বোনের লেখাপড়া বন্ধ করে দিতে হয়েছে। তৃতীয় বোন তৃতীয় শ্রেণিতে ও চতুর্থ বোন দ্বিতীয় শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে।
মুছা মিয়া বলে, প্রায় প্রতিদিনই সে রিকশা চালায়। মাঝেমধ্যে শরীর সায় দেয় না। সেদিন বিশ্রাম নেয়। স্কুল বন্ধের দিন সকাল আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত রিকশা চালালে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত আয় হয়। এর আগে অন্যের রিকশা চালাতে গিয়ে প্রতিদিন মালিককে ৩০০ টাকা দিতে হতো। যত কষ্টই হোক তার প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন রয়েছে।
মুছা এর আগে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় (পিইসি) ৩ দশমিক ৩৩ জিপিএ পেয়েছে। অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় (জেএসসি) সে ৩ দশমিক ৭৫ জিপিএ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। এরপর বিদ্যালয়ে সে কারিগরি শাখায় ভর্তি হয়েছে। তার ক্রমিক নম্বর ২৪।
মুছা মিয়া আরও বলে, ‘বাবা এ বয়সে সংসার চালাতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের দুমুঠো ভাতের টাকা সংগ্রহ করতেই হিমশিম খাচ্ছেন। তাঁর পক্ষে লেখাপড়ার খরচ দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বড় বোনকে বিয়ে দিতে ৪০ হাজার টাকা স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে ঋণ নিতে হয়েছে। ২০ হাজার টাকা স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে সুদে ধার নিতে হয়েছে। পরে ঋণের মাসিক কিস্তি ও সুদের টাকা দিতে গিয়ে, গত আগস্টে মা পেয়ারা বেগম আবার এনজিও থেকে ২৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে আমাকে একটি রিকশা কিনে দিয়েছেন। মাসে ঋণের কিস্তি ও সুদের জন্য দিতে হয় প্রায় সাড়ে ছয় হাজার টাকা। তার ওপর স্কুলে পড়াশোনার খরচ। বিশেষ করে সামনে এসএসসি পরীক্ষা। পরিবারের এমন পরিস্থিতিতে তাকে রিকশার হাতল ধরতে হয়েছে।’
মুছার মা পেয়ারা বেগম বলেন, মেয়েকে বিয়ে দিতে এবং সংসার চালাতে গিয়ে ধারদেনা হতে হয়েছে। নিরুপায় হয়ে একমাত্র ছেলেকে লেখাপড়া করা অবস্থায় রিকশা কিনে দিতে হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গৌরীপুর সুবল আফতাব উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সেলিম ও কারিগরি শাখার শিক্ষক রুহুল আমীন বলেন, মুছা মিয়ার লেখাপড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহ রয়েছে। পারিবারিক অভাব-অনটনে ছেলেটি রিকশা চালিয়ে লেখাপড়া করছে। বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব তাকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।-প্রথম আলো