নিউজ ডেস্ক: রাতের অন্ধকারে সক্রিয় ভয়ঙ্কর ‘রড পার্টি’! রাতের অন্ধকারে চলন্ত গাড়িতে হঠাৎ বিকট শব্দ। যান্ত্রিক ত্রুটি ভেবে চালক দ্রুত গাড়ি থামান সমস্যা খোঁজে দেখতে। আর ততক্ষণে গাড়ির চারপাশ ঘিরে ফেলে স্বশস্ত্র ডাকাতদল! অস্ত্রের মুখে ভয় দেখিয়ে লুটে নেন সর্বস্ব। কখনও কখনও ডাকাতদের অস্ত্রের আঘাতে আহত হয় অনেক যাত্রী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ডাকাতদল মহাসড়কের ডাকাতির করার জন্য বেঁছে নেন একটি উপযুক্ত স্থান। নির্ধারিত স্থানে অস্ত্র হাতে থাকেন ৮-১০ জন ডাকাত। তার অন্তত ১০০ গজ আগে রড ও পাথর হাতে থাকেন ২জন। তাদের কাজ হলো প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট পরিবহনগুলোকে লক্ষ্য করে দূর থেকে চলন্ত গাড়িতে রড বা পাথর ছুড়ে মারা। আর চলন্ত গাড়িতে রড বা পাথরের আঘাতে ঘটে বিকট শব্দ। আর চালক গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ করে থামাতে থামাতে চলে যান সংঘবদ্ধ ওই ডাকাতদলের অবস্থানের কাছাকাছি স্থানে। আর মুহুর্তের মধ্যে শুরু হয় ওই গাড়িতে ডাকাতি।
চলন্ত গাড়িতে রড ও পাথর ছুড়ে ডাকাতির ঘটনা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার তীরচর থেকে বুড়িচং উপজেলার কাবিলা এলাকা পর্যন্ত নতুন নয়। হরহামেশা ঘটে থাকে এমন ঘটনা। ঈদকে সামনে রেখে সম্প্রতি সক্রিয় হয়ে উঠেছে ওই ডাকাতচক্র। সম্প্রতি কয়েকটি স্থানে চলন্ত গাড়িতে রড ছুড়ে ডাকাতির চেষ্টা চলে। এমনকি রবিবার (২৬ মে) রাতে মহাসড়কের কোরপাই এলাকায় পুলিশের প্রাইভেটকারে রড ছুড়ে ডাকাতির চেষ্টাকালে এক ডাকাতকে আটক করেছে পুলিশ।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৩ মে) মহাসড়কের চান্দিনার কুটুম্বপুর এলাকায় বিদেশ থেকে আসা নোয়াখালীগামী একটি মাইক্রোবাসে রড ছুড়ে ডাকাতচক্র। ওই মুহুর্তের গাড়ি চালক বিষয়টি বুঝতে পেরে ঘটনাস্থলে গাড়ি না থামিয়ে কুটুম্বপুর বাস স্টেশন সংলগ্ন একটি সিএনজি পাম্পে গাড়ি থামান। তাতেই কোন রকমে বেঁচে যান তারা।
কিন্তু এর আগে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে তীরচর এলাকায় ওই রড পার্টির কবলে পড়েন সাতজন ভারতীয় নাগরিক। তারা কলকাতা থেকে বাংলাদেশে বেড়াতে এসে মাইক্রোবাস যোগে চান্দিনায় আসার পথে ডাকাতদের কবলে পড়ে সর্বস্ব খোয়ান। এমনকি ডাকাতদের ছুড়িকাঘাতে মারাত্মক আহত হন তিনজন।
ওই ডাকাত চক্রকে রড পার্টি হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। কারণ তাদের হাতে থাকে লোহার বাঁকা এ্যাঙ্গেল। চলন্ত গাড়ির নিচে এমন রডের বাঁকা এ্যাঙ্গেল দিয়ে আঘাত করলে বিকট শব্দ ঘটবে এটাই স্বাভাবিক। ওই ডাকাত চক্রের মূল হাতিয়ার রড। তাই তাদেরকে রড পার্টি নামে উল্লেখ করছেন প্রশাসন।
এ ব্যাপারে হাইওয়ে পুলিশ ইলিয়টগঞ্জ ফাঁড়ির ইনচার্জ (ইন্সপেক্টর) মনিরুল ইসলাম জানান, গত ঈদের ওই রড পার্টির আক্রমণ অনেক বেশি ছিল। এ বছর এখনও তেমনভাবে শুরু করতে পারেনি। কারণ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, মহাসড়কের পাশের সকল ঝোপ-ঝাড় পরিস্কার করেছি আমরা। এছাড়া রাতে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আমাদের টিম অবস্থানের পাশাপাশি নিয়মিত টহল টিম কাজ করছে।
এ ব্যাপারে হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা অঞ্চলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রহমত উল্লাহ অপু জানান, মহাসড়কের ডাকাতি রোধে আমাদের পুলিশ সক্রিয় ভাবে কাজ করছে। ঈদকে সামনে রেখে মহাসড়কে বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া কুমিল্লা অংশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আমাদের দুটি সার্ভিস স্টপেজ এবং কয়েকটি কুইক রেসপন্স টিম কাজ করবে।