কুমিল্লা : যেকোনো খুনের ঘটনায় খুনিকে গ্রেফতার করে আইনি প্রক্রিয়ায় শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে না পারলে দেশে অশান্তি বিরাজ করে। দেশে সাম্প্রতিক হামলা ও খুনের ঘটনায় উদ্বিগ্ন দেশের মানুষ। বাংলাদেশ নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে আন্তর্জাতিক মহলও।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যার ঘটনা দেশবাসীকে দারুণভাবে নাড়া দিয়েছে। খুনিদের গ্রেফতারে কোনো অগ্রগতি না থাকা এবং মামলা ধীরগতিতে চলায় সন্দেহ আরো ঘনীভূত হচ্ছে।
তদন্তের প্রয়োজনে সিআইডির চাহিদা অনুযায়ী কুমিল্লা সেনানিবাসে কর্মরত সেনা সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে না পারায় তদন্তকাজ থেমে আছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, সিআইডির তদন্তদল কুমিল্লা সেনানিবাসের গাড়িচালক ও ভ্রাম্যমাণ টহলদলে দায়িত্বরত (তনু হত্যার দিন যারা দায়িত্বে ছিলেন) ১০-১২ জনের নামের তালিকা দিয়ে তাদের সাক্ষ্য নেয়ার জন্য কুমিল্লা সিআইডি কার্যালয়ে প্রেরণের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে।
কিন্তু কুমিল্লা সেনানিবাস কর্তৃপক্ষ সে অনুরোধে সাড়া দেয়নি। তারা পাল্টা চিঠি দিয়ে বলেছে, সিআইডি তদন্তদল যেন কুমিল্লা সেনানিবাসে গিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। সেনাবাহিনীর এ প্রস্তাবে চলতি সপ্তাহে পাল্টা চিঠি দিয়ে সিআইডি তদন্ত কর্মকর্তা বলেছেন, সিআইডি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তদন্ত সহায়ক হবে।
সিআইডি সূত্র জানায়, সিআইডি প্রেরিত সর্বশেষ চিঠির জবাব বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে আসেনি। আগামী সপ্তাহে আসতে পারে বলে ধারণা করছে সিআইডি।
অন্যদিকে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন নিয়েও চলছে চিঠি চালাচালি। সিআইডির কাছে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ডা. কামদা প্রসাদ সাহা তনুর কাপড়, দাঁত ও নখের ডিএনএ ও ফিঙ্গারপ্রিন্টের প্রতিবেদন চাইলে বলা হয়, আদালতের নির্দেশে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিএনএ ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট পরীক্ষা করে প্রতিবেদন নিয়েছেন। এ প্রতিবেদন নিতে চাইলে আদালতের মাধ্যমে নিতে হবে।
আদালত সূত্র জানায়, গতকাল পর্যন্ত কোনো পক্ষই আদালতে কোনো আবেদন জানায়নি। ময়নাতদন্তকারী দলের প্রধান ডা. কামদা প্রসাদ সাহা বলেন, শনিবার বা রোববার মেডিক্যাল বোর্ড বৈঠকে বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা আদালতের নির্দেশনা চাইব, আদালত যেভাবে বলে সেভাবে হবে।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহ্হার আকন্দের নেতৃত্বে সিআইডির তদন্ত সহায়ক দল বুধবার কুমিল্লা সেনানিবাস পরিদর্শন করে। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন সিআইডির পরিদর্শক গোলাম মাওলা, সিআইডি-কুমিল্লার বিশেষ পুলিশ সুপার ড. নাজমুল করিম খান, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিন আহমেদ, সহকারী পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হক ও মামলার বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম।
সিআইডির তদন্ত দল সেনানিবাসের বিভিন্ন সড়ক গাড়িতে করে পরিদর্শন করেছে। কোনো নির্দিষ্ট স্থানে না নামলেও তারা পুরো সেনানিবাস ঘুরে দেখেছে। নিহত তনুর বাবা এয়ার হোসেন সিআইডির তদন্ত সহায়ক দলের সঙ্গে ছিলেন। তিনি জানান, সিআইডির দল তাকে নিয়ে পুরো সেনানিবাস ঘুরেছে।
মামলার তদন্ত কত দূর এমন প্রশ্নে সিআইডির কুমিল্লার বিশেষ পুলিশ সুপার ড. নাজমুল করিম খান বলেন, আমাদের হাতে নিশ্চিত অনেক তথ্য-প্রমাণ আছে। এগুলো এখন মেলানোর অপেক্ষায়। আমরা সবকিছু সুনিশ্চিত হতে চাই।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার বা রিমান্ডে নেয়া যায়নি; যদিও মামলার তদন্তের মূলকাজ এটি। তথ্যসূত্র : কালেরকণ্ঠ
১৩ মে,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম