কুমিল্লা : কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুর দ্বিতীয় দফা ময়না–তদন্তের প্রতিবেদন না দেওয়ার নতুন অজুহাত দাঁড় করিয়েছে ময়নাতদন্তকারী মেডিকেল বোর্ড। তারা বলছে, তনুর মরদেহের নমুনার ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আছে। এ জন্য তারা সিআইডির সঙ্গে চিঠি চালাচালি করছে। আর সিআইডি বলছে, ডিএনএ প্রতিবেদনের অজুহাত দেখিয়ে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন নিয়ে কালক্ষেপণ অযৌক্তিক।
দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের ৪৯ দিনের মাথায় গতকাল বুধবার মেডিকেল বোর্ডের প্রধান কামদা প্রসাদ সাহা বলেছেন, তাঁদের ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন দেওয়া হবে কি না, তা জানিয়ে দিলে দু-তিন দিনের মধ্যে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দেওয়া সম্ভব। তাঁদের অন্যান্য প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, ডিএনএ প্রতিবেদন চেয়ে তাঁরা এরই মধ্যে একাধিকবার সিআইডিকে চিঠি দিয়েছেন।
আদালতের নির্দেশে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কামদা প্রসাদের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গত ৩০ মার্চ তনুর দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত করে।
মামলার তদন্ত-তদারক কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মো. নাজমুল করিম খান বলেন, ডিএনএ প্রতিবেদনের কথা বলে মেডিকেল বোর্ডের সময়ক্ষেপণ করা উচিত নয়। কারণ, ময়নাতদন্ত করা হয় মৃত্যুর কারণ নির্ণয় করতে। এ জন্য ডিএনএ পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। ডিএনএ মানুষ শনাক্ত করার কাজে লাগে। তিনি বলেন, ‘ডিএনএ পরীক্ষার ফল আমরা বিজ্ঞ আদালতে জমা দিয়েছি। আদালত এ বিষয়ে যে নির্দেশনা দেবেন, সেটাই মেনে নেওয়া হবে।’
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপারের এ বক্তব্য জানিয়ে পরে কামদা প্রসাদের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’
সিআইডি সূত্র জানায়, কামদা প্রসাদ সাহা ডিএনএ প্রতিবেদন চেয়ে ঢাকায় সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডিএনএ অ্যানালিস্টের কাছে গত ১৬ এপ্রিল চিঠি দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সিআইডির প্রধান ডিএনএ অ্যানালিস্ট নাসিমা বেগম ২১ এপ্রিল পাল্টা চিঠিতে জানান, মামলার তদন্ত কর্তৃপক্ষ ব্যতীত অন্য কাউকে ডিএনএ প্রতিবেদন দেওয়ার নিয়ম বা সুযোগ নেই।
এরপর কামদা প্রসাদ সাহা ২ মে তনু হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীমের কাছে ডিএনএ প্রতিবেদন চেয়ে চিঠি দেন। গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম ৪ মে পাল্টা চিঠি দিয়ে জানান, তাঁর হাতে তখন পর্যন্ত ডিএনএ প্রতিবেদন আসেনি। এরপর ১৪ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে আবার চিঠি দেন ডা. কামদা প্রসাদ সাহা। এ চিঠির জবাব এখনো পাননি তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম বলেন, ‘ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়ার জন্য দ্বিতীয় ময়নাতদন্তকারী মেডিকেল বোর্ডের প্রধান চিঠি দিয়েছেন। আমরা বিষয়টি আদালতকে জানিয়েছি। আদালতের নির্দেশে আমরা ডিএনএ পরীক্ষা করেছি।’
সোহাগী জাহান তনু গত ২০ মার্চ খুন হন। ওই রাতে ময়নামতি সেনানিবাসের ভেতর একটি ঝোপ থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করেন বাবা ইয়ার হোসেন। কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহকারী ইয়ার হোসেন পরদিন এই ঘটনায় কুমিল্লা কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা করেন।
একই দিন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে তনুর লাশের প্রথম ময়নাতদন্ত হয়। ওই ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে তনুর মাথার পেছনের জখমের কথা গোপন করার অভিযোগ ওঠে। তাতে বলা হয়, তনুর মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হয়নি।
ওই প্রতিবেদন নিয়ে বিতর্ক ওঠার পর পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মেডিকেল বোর্ড গঠন করে দ্বিতীয় দফা লাশের ময়নাতদন্ত করার নির্দেশ দেন আদালত। এরপর গত ৩০ মার্চ দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত হয়। তখন সিআইডি তনুর শরীরের কিছু নমুনা ও পরনের কাপড় ডিএনএ ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠায়। গত সোমবার সিআইডি জানায়, ডিএনএ পরীক্ষায় তনুকে ধর্ষণের আলামত মিলেছে। -প্রথম আলো
১৯ মে, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএম