শুক্রবার, ১৭ জুন, ২০১৬, ১০:৫৮:৪৫

তনুর ময়নাতদন্ত নিয়ে প্রশ্ন, তালিকা নিয়ে মাঠে নামছে সিআইডি

তনুর ময়নাতদন্ত নিয়ে প্রশ্ন, তালিকা নিয়ে মাঠে নামছে সিআইডি

কাজী এনামুল হক : দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্তেও সোহাগী জাহান তনুর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কিছু বেরিয়ে না আসায় চিকিৎসকদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে মামলা তদন্তের দায়িত্বে থাকা সিআইডি।

এই হত্যাকাণ্ডের সুরাহা করতে এখন নিজেদের ল্যাবে তনুর আলামতের ডিএনএ টেস্টে ‘যাদের বীর্যের’ উপস্থিতি পাওয়া গেছে তাদের সনাক্ত করতে সন্দেহভাজনদের তালিকা করার কথা জানিয়েছেন সিআইডির এক কর্মকর্তা।

কুমিল্লায় সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার নাজমুল করিম খান বৃহস্পতিবার বলেন, সন্দেহভাজনদের একটি তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। যা নিয়ে কয়েকবার সভা করে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত মিলিয়ে দেখা হয়েছে। আমাদের আগামী সপ্তাহের বৈঠকে তনু নিয়ে প্রাপ্ত সব তথ্য-উপাত্ত আবার পর্যালোচনা করা হবে। সেখানেই সন্দেহভাজনদের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি চাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে।

গত ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে কলেজছাত্রী তনুর লাশ উদ্ধার করা হয়। তাকে (প্রকাশের অযোগ্য)র পর হত্যা করা হয়েছে বলে সে সময় পুলিশের সন্দেহ হলেও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে ময়নাতদন্তে পর বলা হয়, তনুর মৃত্যুর কারণ অজ্ঞাত। (প্রকাশের অযোগ্য)রও কোনো আলামত মেলেনি।

এরপর আদালতের আদেশে কবর থেকে লাশ তুলে তনুর দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত হয়, যার প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে গত ১২ জুন। আড়াই মাস পর দেওয়া ওই প্রতিবেদনে তনুর মৃত্যুর কারণ ও (প্রকাশের অযোগ্য) প্রশ্নে অস্পষ্টতা রয়ে গেছে।

প্রতিবেদনে মৃত্যুর আগে তনুর ‘(প্রকাশের অযোগ্য) ইন্টারকোর্স’ হওয়ার কথা বলেছেন চিকিৎসকরা। এর মাধ্যমে তারা ‘ধর্ষণ’ বোঝাচ্ছেন কি না- এড়িয়ে গেছেন সেই প্রশ্ন।

ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক দলের প্রধান কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান কামদা প্রসাদ সাহা বলেন, তনুর দ্বিতীয় ময়নাতদন্তে দেখা গেছে, মৃত্যুর পূর্বে তার (প্রকাশের অযোগ্য) ইন্টারকোর্স হয়েছে। যেহেতু দশ দিন পর ময়নাতদন্ত করা হয়েছে, মৃতদেহ পচা ছিল, দশ দিন পর পচা গলা মৃতদেহ থেকে নতুন করে কোনো ইনজুরি বোঝা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলে সিআইডি কর্মকর্তা নাজমুল করিম বলেন, শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পাননি চিকিৎসকরা, তাহলে ‘(প্রকাশের অযোগ্য) ইন্টারকোর্স’ দেখলেন কীভাবে?

দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে তনুর পরিবার বলেছে, বানানো প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। এই প্রতিবেদনে হতাশা প্রকাশ করেন কুমিল্লার নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা, যারা তনু হত্যার বিচারের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন।  

দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আসার মাসখানেক আগে সিআইডির ল্যাবে তনুর আলামতের ডিএনএ পরীক্ষার ফলের কথা জানা যায়। খুন হওয়ার আগে তনু ধর্ষিত হয়েছিলেন বলে ওই পরীক্ষার ভিত্তিতে বলেন সিআইডি কর্মকর্তারা।

সে সময় নাজমুল করিম বলেছিলেন, ডিএনএ পরীক্ষায় কয়েকজন পুরুষের বীর্যের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এখন এই তিনজন পুরুষকে সনাক্ত করতে পারলেও খুনি বেরিয়ে আসবে বলে মনে করেন এই সিআইডি কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, তনুর কাপড়ে সিআইডির ডিএনএ টেস্টে পাওয়া তিন পুরুষের শুক্রানুর সঙ্গে সন্দেহভাজনদের ডিএনএ ও ঘটনাস্থল, পারিপার্শ্বিক থেকে প্রাপ্ত আলামত মিললে হত্যারহস্য উন্মোচিত হবে। এক প্রশ্নের জবাবে নাজমুল করিম বলেন, ঘটনাস্থলটি একটি স্পর্শকাতর জায়গা, যার সঙ্গে জাতীয় বিষয়ও জড়িত।

তিনি বলেন, হুট করে কিছু করা যাবে না। সব তথ্য উপাত্ত মিলিয়ে কাজটি এগিয়ে নিতে হচ্ছে। হত্যারহস্য ‘শিগগরিই’ বের করতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি। -বিডিনিউজ
১৭ জুন, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে