নারায়ণগঞ্জ থেকে : নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের (এনসিসি) বাকি মাত্র ৯ দিন। ঘাম ঝরছে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের। বিশেষ করে প্রধান দুই দলের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী ও সাখাওয়াত হোসেন খানের নির্ঘুম রাত কাটছে কয়েক দিন ধরে। তাদের সঙ্গে ঘাম ঝরছে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের। প্রতীক বরাদ্দের পর প্রার্থীদের পাশাপাশি দুই দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।
আইভীর পক্ষে গতকাল আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে প্রচারণায় মাঠে ছিলেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত নন্দী রায়, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, কৃষি সম্পাদক ফরিদুন্নাহার নিখিল, যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল, যুগ্ম সম্পাদক কোহেলি কুদ্দুস মুক্তি, যুবলীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মাইনুল হোসেন খান নিখিল, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা, সাংগঠনিক সম্পাদক জি এম আরাফাত, শহর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলী আহম্মদ রেজা উজ্জ্বল, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আনিছুর রহমান দীপু প্রমুখ।
বিএনপি থেকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও প্রচারণায় মাঠে নেমেছেন। আজও বিকালে দলের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে নারায়ণগঞ্জ যাবেন তিনি। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এ নির্বাচনে দলের সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করছেন।
এ ছাড়া গতকালও বিভিন্ন স্থানে প্রচারণা চালিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, আবদুল আওয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে আমান উল্লাহ আমান, জয়নুল আবদিন ফারুক, মিজানুর রহমান মিনু, আবদুস সালাম, মজিবর রহমান সরোয়ার, লুত্ফুর রহমান আজাদ, ফজলুল হক মিলন, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, হাবিবুর রহমান হাবিব, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, শামা ওবায়েদ, বিলকিস ইসলাম শিরিন, কামরুজ্জামান রতন, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, নাজিম উদ্দিন আলম, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, শহীদুল ইসলাম বাবুল, সেলিমুজ্জামান সেলিম, তাবিথ আউয়াল, আফরোজা আব্বাস, সুলতানা আহমেদ, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, বাবুল আহমেদ, আবুল হোসেন খান, রফিক শিকদারসহ স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতারা।
বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগকালে আওয়ামী লীগের সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, ‘শীতলক্ষ্যা সেতু করে দেব এ ধরনের কোনো প্রতিশ্রুতি আমি কখনো দিইনি। বিগত পাঁচ বছর অনেক চেষ্টা করেছি সেতু করার জন্য। আমি সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে ৫ নম্বর খেয়াঘাট তৈরি করতে চাইছি। এর কাজও অনেক দূর এগিয়ে গেছে। আমি চেষ্টা করব, যাতে এ ব্রিজটা করা যায়। সাখাওয়াত হোসেন যে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন ব্রিজ করে দেবেন, তা তিনি কীভাবে করে দেবেন? উন্নয়নের এ ধারাবাহিকতা রাখতে হলে আইভীকেই প্রয়োজন আছে। এ সরকারের প্রয়োজন আছে। প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই এ সেতু করে দেবেন। ’
আইভী বলেন, ‘গ্যাস ও পানি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নয়। গ্যাসের একটা সমস্যা নারায়ণগঞ্জে আছে। ইতিমধ্যে আমি প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। এখন হয়তো কিছুটা গ্যাসের চাপ কমে গেছে। তবে গ্যাসের কাজ এখানে চলছে। তাই দয়া করে এ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াবেন না। পানির সমস্যা ঢাকা ওয়াসার কাজ। সেটা ওয়াসা দেখবে। কিন্তু এ কাজটা বাস্তবায়নে আমাদের যতটুকু সহযোগিতা প্রয়োজন তা করব। ’
সকালে সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগকালে সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের ২৭টি ওয়ার্ডের তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে বিএনপি আমাকে নমিনেশন দিয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ ২৭টি ওয়ার্ড থেকে তিনজন প্রার্থীকে মনোনীত করে কেন্দ্রে পাঠিয়েছিল। ওই তালিকায় আইভীর নাম ছিল না। তৃণমূল আইভীকে সমর্থন দেয়নি। কেন্দ্র আইভীকে নারায়ণগঞ্জে নৌকার প্রার্থী হিসেবে চাপিয়ে দিয়েছে। সুতরাং আমি মনে করি নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একাকার হয়েছে, ধানের শীষের প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ৬০ থেকে ৭০ ভাগ ভোট ধানের শীষ প্রতীকে পড়বে। ’
তিনি বলেন, ‘২০০৩ সালে মেয়র নির্বাচনের ১৫ দিন আগে আইভী নিউজিল্যান্ড থেকে এসে নির্বাচন করেছেন। তার স্বামী-সন্তান এখনো নিউজিল্যান্ড থাকেন। তিনি একা নারায়ণগঞ্জে থাকেন। ’ সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, ‘আইভী এখন গণসংযোগ করে বিভিন্ন উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। তিনি ১৩ বছর মেয়র ছিলেন। তিনি যদি সঠিকভাবে উন্নয়ন করেই থাকেন তাহলে এসব উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি এখন কেন দিচ্ছেন?’
এদিকে গতকাল বিকালে শহরের ডিআইটি এলাকায় দলের মেয়র প্রার্থী মুফতি মাসুম বিল্লাহকে হাতপাখায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান চরমোনাইর পীর মুফতি মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম। এ সময় তিনি বলেন, ভোটারদের অবস্থান পরিবর্তন হয়নি। কিন্তু ভোটাররা বিগত দিনে যাদের নির্বাচিত করেছেন, তারা দুর্নীতি করেছেন।
বাংলাদেশ দুর্নীতিতে পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। বিদেশে অনেকেই বাংলাদেশিদের পরিচয় পেলে অবজ্ঞা করে। বাংলাদেশ থেকে বছরে ৭০ ভাগ অর্থ বিদেশে পাচার হচ্ছে। নগর উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণের পথে বড় বাধা দুর্নীতি। দুর্নীতিকে পাকাপোক্ত করার জন্য সন্ত্রাস, স্বজনপ্রীতি ও দলীয়করণের আশ্রয় নেওয়া হয়। বিডি প্রতিদিন
১২ ডিসেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসবি