মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর, ২০১৯, ০৫:২০:৪৮

জন্ম থেকেই দুই হাত নেই, তারপরও সবকিছুতেই এগিয়ে এই বিস্ময়বালক

জন্ম থেকেই দুই হাত নেই, তারপরও সবকিছুতেই এগিয়ে এই বিস্ময়বালক

কামাল হোসাইন : প্র'ব'ল ইচ্ছা শক্তি ও আত্মবিশ্বাসের জোরে শা'রী'রি'ক প্রতিব'ন্ধক'তাকে জয় করে খেলাধুলাসহ পড়াশোনায় এগিয়ে যাচ্ছে নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার নাগেরগাতি গ্রামের মাসুদুর রহমান লাদেন।

জন্ম থেকেই দুটি হাত নেই তার। কিন্তু তার পরও সবকিছুতেই এগিয়ে চলেছে এই বিস্ময়বালক। দুটি হাত না থাকলেও ক্রিকেট কিংবা ফুটবলের মতো কঠিন খেলায়ও ভালো খেলছে সে।

উপজেলার বিভিন্ন স্থানে টিমের পক্ষ হয়ে খেলে ইতিমধ্যে সুনাম অর্জন করছে এই প্র'তিব'ন্ধী কিশোর। তার স্বপ্ন প্র'তিব'ন্ধী কোটায় কোনো ক্লাবে খেলে প্রতিষ্ঠিত খেলোয়াড় হওয়ার। আগামী বছর সে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে।

মাসুদুর রহমান লাদেনের মা হামেদা খাতুন জানান, শা'রী'রি'ক প্র'তিব'ন্ধী লাদেন জন্মের পর প্রতিবেশীরা বলেছিল গ'লাটি'পে শিশুটিকে মে'রে ফেলতে। এরপর প্রতিবেশীরা পরার্মশ দেয় ঢাকা গিয়ে শিশুটিকে নিয়ে ভিক্ষা করতে। তার পর ৭০ হাজার টাকায় শিশুটিকে বি'ক্রি করে দিতে প্রস্তাব আসে। সব প্রস্তাবই প্র'ত্যাখ্যা'ন করেন তিনি। বর্তমানে ওই সন্তানের খেলাধুলাসহ পড়ালেখায় পারদর্শিতা দেখে মুগ্ধ মা-বাবা। কিন্তু দারিদ্র্যতার ক'শাঘা'তে সন্তানের মুখ দেখে শ'ঙ্কি'তও লাদেনের মা-বাবা।

মাসুদুর রহমান লাদেনের বাবা সাহেব আলী জানান, প্রাইভেট পড়ানো ক্ষ'ম'তা না থাকলেও নিজে নিজেই পড়াশোনা করে লাদেন। এবার সে এসএসসি পরীক্ষা দেবে। খেলাধুলার বেশি আগ্রহ তার। এরই মধ্যে দুর্গাপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে টিমের পক্ষ হয়ে খেলেছে। তার ইচ্ছে বড় কোনো দলে প্র'তিব'ন্ধী কোটায় খেলবে। আমার অর্থ সম্পদ ক্ষ'ম'তা কোনোটাই নাই। আমার ছেলেকে যদি কেউ অর্থনৈতিক সহযোগিতা করত, তা হলে সে অনেক দূর যেতে পারত।

লাদেনের বন্ধুরা জানায়, হাত না থাকার বিষয়টি জীবনের কোনো কাজে লাদেনকে পিছিয়ে রাখতে পারেনি! অন্যান্য ছেলেমেয়ের মতোই সেও খেলাধুলাসহ সব প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে। এ ছাড়া ব্যক্তিগত জীবনের দৈনন্দিন কাজগুলো সারছে কারও কোনো সহযোগিতা ছাড়াই! খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে প্রাকৃতিক কাজগুলোও একাই সারতে পারে। হাত না থাকার বিষয়টিকে লাদেন কোনো প্র'তিব'ন্ধক'তা বলেই মনে করে না। এ জন্য তার মনে বিন্দুমাত্র দুঃখও নেই।

নবারুণ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অশোক কুমার ভাদুরী জানান, জন্ম থেকেই দুটি হাত নেই। তবু সবার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ক্রিকেট, ফুটবলসহ বিভিন্ন ধরনের ঝুঁ'কিপূ'র্ণ খেলা। তার সঙ্গে খেলায় সহপাঠীরা পারে না। পড়াশোনায়ও খুব ভালো সে। কিন্তু তার বাবা খুব দ্ররিদ্র মানুষ। তাকে পড়াশোনা করাতেই হিমশিম খাচ্ছে। সরকার বা সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এলে এই ছেলে একদিন দেশের দৃ'ষ্টা'ন্ত স্থা'প'ন করতে পারবে।

লাদেনের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ফজলুল হক ফয়েজ জানান, অনেকেরই হাত আছে কিন্তু কাজে লাগে না। ভালো কোনো কাজ করে না। কিন্তু লাদেনের দুটি হাত না থাকলেও সে সবার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ক্রিকেট খেলছে, বিভিন্ন স্থানে গিয়ে ফুটবল খেলছে। তার শিক্ষকরা লাদেরকে বি'স্ম'য়বা'ল'ক হিসেবেও আখ্যা দেন।

বিশেষ শিশু মাসুদুর রহমান লাদেন জানায়, জন্ম থেকেই নিজের শারীরিক অ'ক্ষ'মতাকে শ'ক্তিতে রূপান্তর করে জীবনের পথে এগিয়ে যাচ্ছি আমি। হাত না থাকলেও লেখা পড়া কিংবা খেলাধুলায় কোনোটাতেই পিছিয়ে নেই। বড় হয়ে কোনো ফুটবল ক্লাবে প্র'তিব'ন্ধী কোটায় খেলার স্বপ দেখি। মা-বাবা খুব গরিব। তারা কষ্ট করে আমাকে মানুষ করছেন।

ছোটবেলা থেকে নিজের ইচ্ছাশক্তি, চেষ্টা ও সার্বক্ষণিক মায়ের সহযোগিতা পেয়ে হাত না থেকেও সব কাজ শেখা সম্ভব হয়েছে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে লাদেন বলেন, পড়াশোনা শেষ করে একটি সরকারি চাকরি করতে চায় সে। সূত্র : যুগান্তর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে