সোমবার, ০১ জুন, ২০২০, ০৯:২৬:১৪

হাত নেই, অদম্য ইচ্ছাশক্তিতে মুখ দিয়ে লিখেই এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ

  হাত নেই, অদম্য ইচ্ছাশক্তিতে মুখ দিয়ে লিখেই এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ

নেত্রকোনা: মুখ দিয়ে লিখেই মাধ্যমিকের গন্ডি পার হলো লাদেন। অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর পরিবারের অনুপ্রেরণায় শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করলো নেত্রকোনার দুর্গাপুরের মাসুদুর রহমান লাদেন। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় উপজেলার নবারুণ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অংশ নিয়ে ৩.৬৭ গ্রেড পেয়ে উত্তীর্ণ হলো সে।

সীমান্ত উপজেলা দুর্গাপুরের চন্ডিগড় ইউনিয়নের নাগেরগাতী গ্রামের সাহেব আলীর দ্বিতীয় পুত্র লাদেন। জন্ম থেকেই তার দুই হাতের কব্জি দুটো নেই । ফলে আর পাঁচটা ছেলে মেয়ে থেকে কিছুটা ভিন্ন সে।

তবে ছোটকাল থেকেই পড়াশোনার প্রতি ছিল তার প্রবল আগ্রহ। হাত নেই তাই অন্য শিক্ষার্থীদের সাথে পড়ালেখা করতে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে তার। তবে শেষ পর্যন্ত ইচ্ছাশক্তির উপর ভর করেই বিদ্যালয়ে ভর্তি হয় লাদেন। শুরুতে পা দিয়ে লেখার চেষ্টা করলেও বড় হওয়ার সাথে সাথে পা এর পরিবর্তে মুখ দিয়ে লেখা শুরু করে সে। 
একটু একটু করে প্রাথমিকের গণ্ডি পার হয়ে ভর্তি হয় মাধ্যমিকে। এ বছর উপজেলার নবারুণ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়।

নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সাথে তাল মিলিয়ে মানবিক বিভাগ থেকে প্রতিটি পরীক্ষায় আত্মনির্ভরশীলতা ও ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগায়।  শুধু পড়ালেখা নয়, খেলাধুলায়ও নাম রয়েছে তার। পাড়ার ছেলেদের সাথে বিকেল হলেই মাঠে ছুটে ফুটবল খেলতে। তার এই জয়ে মা-বাবাসহ আনন্দের বন্যা বইছে পুরো গ্রাম জুরে। দূর দূরান্ত থেকে অনেকেই আসছেন তাকে শুভকামনা জানাতে। এমন কি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরা'ল হয়েছে তার পথ চলার এই গল্প।

রেজাল্ট প্রকাশের পর থেকেই উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী পুলিশ সুপার দুর্গাপুর সার্কেল, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, দুর্গাপুর প্রেসক্লাবসহ অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে অভিনন্দন ও শুভকামনা জানিয়েছেন ।

মাসুদুর রহমান লাদেন জানায়, মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ মেহেরবানীতে সুন্দরভাবে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলাম। তারই ফলশ্রুতিতে আজ এরকম একটি ভাল রেজাল্ট করতে পেরেছি। আর এই পথ চলায় প্রতিনিয়ত বাবা-মা ও বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সহপাঠীরা সাহস জুগিয়েছেন। তাদের সার্বিক সহযোগিতা ও উৎসাহের ফলে আমি আজ এতদূর আসতে পেরেছি। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন আমি যেন ভবিষ্যতে আরো ভালো কিছু করতে পারি।

লাদেনের পিতা সাহেব আলী জানান, আমার দুই ছেলের মধ্যে লাদেন ছোট। সেই সাথে তার শরীরের এমন একটি সমস্যা জন্ম থেকেই। তারপরও ছোট থেকেই পড়াশোনার প্রতি অনেক আগ্রহ ছিল লাদেনের। কিন্তু তার দু'টি হাতের কব্জি না থাকায় আমরা অনেকটা চিন্তিত ছিলাম তাকে নিয়ে। অনেকেই অনেক কিছু বলেছে আমার ছেলে নাকি পড়াশোনা করতে পারবে না। তারপরও নিজের আত্মবিশ্বাসের উপর নির্ভর করেই আজ এতদূর আসতে পেরেছে সে। তার বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাকে সার্বিক সহযোগিতা করেছে তার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে। আমি সবার কাছে দোয়া চাই আমার ছেলে যেন ভবিষ্যতে আরও ভালো কিছু আপনাদের উপহার দিতে পারে।

লাদেনকে নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা খানম জানান, তার এই ফলাফলে পুরো উপজেলাবাসী অনেক খুশি হয়েছেন। আমরা তাকে অনেক শুভকামনা জানাচ্ছি যেন আগামীর পথ চলা আরো সুন্দর হয়। সেই সাথে তার ও তার পরিবারের জন্য সরকারি অর্থায়নে একটি ঘর বরাদ্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসন তাকে সব সময় সার্বিক সহযোগিতা করবে বলেও আশ্বাস প্রদান করেন তিনি।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে