এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : বাঙালি বিয়ে দেখতে আমেরিকা থেকে পাবনায় এসেছেন ভিক্টোরিয়া নামের রাশিয়ান এক তরুণী। শাড়ি পড়ে পুরো বিয়ের অনুষ্ঠানজুড়ে ছিলেন তিনি। বাঙালি খাবার খেয়ে নেচে-গেয়ে আনন্দে মেতেছেন তিনি।
আমেরিকা প্রবাসী তানভীর ইসলাম ও মেহেজাবীন মতিন মৌয়ের বিয়েতে অংশ নিতে গত ৭ এপ্রিল বাংলাদেশে আসেন তিনি।
তানভীর পাবনার শিবরামপুরের রফিকুল ইসলামের ছেলে। পাবনার জনপ্রিয় ব্যান্ড দল বিহঙ্গ এর লিড গিটারিস্ট ও ভোকালিস্ট। সংগীত পরিচালক হিসেবেও তার পরিচিতি রয়েছে।
অন্যদিকে ভিক্টোরিয়ার পুরো নাম ভিক্টোরিয়া ডেগতারেভা (৩৫)। তিনি জন্মসূত্রে রাশিয়ান। আমেরিকায় বিউটিশিয়ানের পেশায় নিয়োজিত। বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ ও কালচার উপভোগ তার প্রধান শখ।
আয়োজকরা জানান, ভিক্টোরিয়ার বাবা ও মা রাশিয়াতে থাকেন। কাজের জন্য ১২ বছর ধরে তিনি থাকেন আমেরিকায়। বেড়াতে তার ভালো লাগে। বিভিন্ন দেশের খাবার ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে ইচ্ছা করে। তাই সুযোগ পেলে অন্য দেশে বেড়াতে যান। তার সহকর্মী তনিমা ইসলাম আখির ভাই তানভীরের বিয়ে হচ্ছে জেনে তার আমন্ত্রণে বাংলাদেশে আসার সিদ্ধান্ত নেন। দেশে এসে বিয়ের কেনাকাটা থেকে শুরু করে এনগেজমেন্ট, মেহেদী উৎসবসহ সব আয়োজনে মিশে ছিলেন পরিবারের সদস্যের মতো।
বুধবার (৯ এপ্রিল) কনের গায়ে হলুদ, বৃহস্পতিবার বরের গায়ে হলুদ, শুক্রবার বিয়ের অনুষ্ঠান ও শনিবার বৌভাত অনুষ্ঠানে যোগ দেন ভিক্টোরিয়া।
স্থানীয়রা জানান, ভিক্টোরিয়া দেখতে আলাদা হলেও অন্যদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কনের গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানে তিনি নীল রঙের শাড়ি পরেছিলেন। শুক্রবার বিয়ের অনুষ্ঠানে বরযাত্রীতে হলুদ শাড়ি পরে বরণডালা হাতে অনুষ্ঠানে গেছেন। বৌভাতের দিনেও তিনি শাড়ি পরেছেন। বাঙালি খাবার খেয়েছেন। চামচ দিলেও সেটি ব্যবহার করেননি। ঘুমিয়েছেন সবার সঙ্গে বিয়ে বাড়ির খোলামেলা পরিবেশে। শিশু বাচ্চা দেখলে কোলে তুলে নিয়েছেন আপন মমতায়। দীর্ঘ সময় কোলে নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন। ভিক্টোরিয়া সবার সঙ্গে একদম মিশে ছিলেন।
তানভীরের বড়বোন তনিমা ইসলাম আখি বলেন, হুট করে ভিক্টোরিয়া আসায় আমরা একটু চিন্তায় পড়েছিলাম। কারণ আমেরিকার পরিবেশ ও কালচার এক নয়। এখানে তাও আবার মফস্বল শহুরে কালচার। তবে এসব চিন্তা বেশিক্ষণ থাকলো না। দেখলাম মুহূর্তে সবার সঙ্গে ভিক্টোরিয়া মিশে গেছে। বাড়িতে যা রান্না হচ্ছে, তা–ই খাচ্ছে। চামচের দরকার হচ্ছে না, দিলেও চামচ ব্যবহার করছে না।
তানভির ইসলাম বলেন, আমার বাবা-মাও আমেরিকায় থাকেন। অসুস্থতার জন্য তারা আসতে পারেননি। এজন্য মন কিছুটা খারাপ ছিল। মনে হচ্ছিল বিয়ের আয়োজনটা তেমন জমবে না। কিন্তু সেই জায়গাটুকু উনি (ভিক্টোরিয়া) অনেকটা ফিলআপ করেছে। তার দ্রুত সবার সঙ্গে মিশে যাওয়া ও হই-হুল্লোড় বিয়ের আনন্দ বাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি এভাবে সবার সঙ্গে মিশতে পারবেন এটা ভাবতে অবাক লেগেছে।
তানভীরের বন্ধু নুজহাত তুষ্টি বলেন, উনাকে আমরা আলাদা করে ভাবতে পারিনি। কেননা সবার সঙ্গে একদম মিশেছিলেন। আমার সাতমাস বয়সী ছেলে রাজ্যকে উনি দেখে কোলে তুলে নিলেন। এরপর টানা দুই ঘণ্টা কোলে নিয়ে ঘুরেছেন।
এ বিষয়ে ভিক্টোরিয়া বলেন, রাশিয়াতেও বিয়ে বাড়িতে গেট ধরে বরের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার ঐতিহ্য আছে। তবে বাংলাদেশেরটা তার কাছে বেশি উপভোগ্য মনে হয়েছে। বর ও কনের গায়ে হলুদ থেকে শুরু করে পুরো আনুষ্ঠানিকতা বেশ রঙিন ছিল। আমেরিকায় বাঙালি খাবার পাওয়া গেলেও কখনো খাওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, মিসর, গ্রিসসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গেলেও বাঙালি বা ইন্ডিয়ান কালচার সম্পর্কে তার কোনো ধারণা ছিল না। তাই বাংলাদেশে আসার সুযোগ হাতছাড়া করেননি। এখানে এসে এবং বিয়ের এমন দীর্ঘ ও বর্ণিল আয়োজন দেখে তিনি অসম্ভব আনন্দিত বলে জানান।