অসম বিয়ে, অতঃপর..!
পাঠকই লেখক ডেস্ক : হঠাৎ একটা হাত প্রান্তির গায়ের ওপর এসে পড়ে ৷ চমকে যায় প্রান্তি , চুপচাপ শুয়ে থাকে সে ৷ অত্যান্ত বিরক্তের সাথে হাতটা সরিয়ে দেয় ৷ এখন রাত ৩টে হবে হয়তো ৷ গত ১ বছর হলো প্রান্তি আর নাহিদ সাহেবের বিয়ে হয়েছে ৷
তবুও নাহিদ সাহেবের সাথে ঘুমুতে প্রান্তির অত্যান্ত অসস্তি লাগে৷ প্রায় রাতেই ঘুম আসেনা ৷ তখন রাত জেগে নানা ধরনের উদ্ভট সব কথা ঘুরপাক খায় তার মনে ৷
১ টা বছরেও প্রান্তি নাহিদ সাহেব কে একটুও ভালবাসতে পারেনি ৷
সাহেব ই বলা চলে নাহিদ সাহেবের বয়স ৩০ এর ওপরে কলেজের প্রফেসর ৷ প্রান্তি সবে ইন্টারমেডিয়েট পাস করেছে বয়স ১৮ হবে ৷
বিয়ের পর থেকে অনেক মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে প্রান্তি কিন্তু পারে না৷ দিন দিন অধৈর্য্য হয়ে পড়ে ৷
চঞ্চল প্রান্তি বৃষ্টিতে ভিজতে পছন্দ করে ৷ পছন্দ করে জোছনা রাতে খোলা আকাশের নিচে শুয়ে থাকতে ৷ সুন্দর করে সেজে রাস্তার ধারে ফুচকা খেতে ভিষন ভালোলাগে তার ৷যখন আকাশ ভেংগে মুষল ধারে বৃষ্টি নামে , তখন প্রান্তি স্বামির কাছে গিয়ে বলে , চল না ছাদে গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজি ৷
নাহিদ সাহেব হাসি হাসি মুখ করে বলে এখন কি আর বৃষ্টিতে ভেজার বয়স আমাদের আছে ? এই বয়সে বৃষ্টিতে ভিজলেই অসুখ বাঁধবে ৷
তুমি যাও না বৃষ্টিতে ভেজো ৷ প্রান্তি জানে নাহিদ অত্যান্ত ভালোমানুষ , তাকে খুব ভালবাসে , কিন্তু ভালবাসাটাকে প্রকাশ করতে পারে না ৷
প্রান্তি একা একায় ছাদে যায় বৃষ্টিতে নেমে পড়ে ভিজতে ৷ প্রান্তি কিছু একটা অনুভব করে, মনে হয়, নাহিদ যদি তার হাতটি ধরে তার সাথে বৃষ্টিতে ভিজতো তাহলে তার চেয়ে বেশি কেও আনন্দিত হতো না ৷ এসব ভাবতে ভাবতেই, প্রান্তির চোখে পানি এসে যায় ৷
বয়স বেশি দেখেও প্রান্তি বিয়েতে রাজি হয়েছিল ৷
নিঃস্ব একটা মানুষ বাবা -মা ছোটো বেলায় মারা যায় ৷
মামার কাছে মানুষ ৷
প্রথমবার দেখেই লোকটির প্রতি প্রচন্ড মায়া জন্মে প্রান্তির ৷
ভেবেছিলো বিয়ের পর স্বামিকে খুব ভালবাসবে ৷ দুজন মিলে খুব মজা করে বৃষ্টিতে ভিজবে, রাস্তায় দাড়িয়ে ফুচকা খাবে ৷
কিন্তু কল্পনা কল্পনায় থেকে গেছে , বাস্তব রুপ লাভ করেনি ৷
প্রান্তি প্রেগনেন্ট , নাহিদকে এখনো কিছু জানায় নি ৷
এসব ভাবতে ভাবতেই প্রান্তির মনে একধরনের জেদ চাপে, মুক্তি পেতে হবে মুক্তি ৷
প্রান্তি এর থেকে মুক্তির পথ খোজে ৷
তার বিয়ের আগে একটা ছেলে তাকে খুব ভালবাসতো কিন্তু প্রান্তি ছেলেটিকে ভালবাসতে পারে নি ৷
ছেলেটি অনেক আগে আমেরিকা চলে গেছে ৷
প্রান্তির বিয়ের কথা জেনেও সেই ছেলে প্রান্তিকে এখনো ফোন করে , চিঠি পাঠায় ৷
প্রান্তি ঠিক করে সে আমেরিকা ছেলেটির কাছে চলে যাবে ৷ ছেলেটি ফোন করলে সব খুলে বলে প্রান্তি৷
ছেলেটি প্রান্তিকে ওর কাছে চলে আসতে বলে ৷ , কিছুদিনের মধ্যে ভিষা পাঠিয়ে দেবে বলে জানায় ৷ ৷
এর মধ্যে প্রান্তির কোলে ফুটফুটে এক মেয়ে হয় ৷
মেয়ের কথা ভেবেও সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে না প্রান্তি ৷ সে ভালবাসার কাংগাল৷ সাত সুমুদ্র পাড়ি দিয়ে হলেও ভালবাসা খুজতে যাবে সে ৷
কিছুদিন পর ভিষা চলে আসে ৷ চলে যাবে প্রান্তি মাস খানেক পরেই ৷
সব কিছু কেনাকাটা শেষ করে ফেলে , মেয়েকে বাবার কাছে রেখেই চলে যাবে সে ৷
১ সপ্তাহ আগে বড় করে একটা চিঠি লেখে প্রান্তি , তার স্বপ্নের কথা, নাহিদের ভালবাসতে না পারার অনুভুতির কথা ,
আমেরিকা চলে যাবার কথা ৷ চিঠি লিখে বিছানার নিচে রেখে দেয় ৷
প্রান্তির চলে যাবার ২ দিন আগে মানিব্যাগ খুজতে গিয়ে চিঠিটি খুজে পায় নাহিদ ৷
এই কয়টা দিন প্রান্তির আর রাতে ঘুম আসে না ৷তাদের মেয়ে মীরার মুখের দিকে চেয়ে সারারাত জেগে বসে থাকে ৷
মাঝরাতে নাহিদ ঘুম থেকে জেগে দেখে প্রান্তি উঠে বসে আছে ৷
নাহিদ উঠে কপালে হাত রাখে প্রান্তির , চমকে উঠে প্রান্তি, কি ঠান্ডা হাত,, জিগ্গেস করে নাহিদ কি ঘুম আসছে না ?
অসুস্থ ? প্রান্তি কথা বলে না ৷
আজ কেনো জানি নাহিদের হাতটা কে অসস্তি লাগছে না তার কাছে , নাহিদ কে তার কাছে কেনো জানি আজ খুব আপন মনে হচ্ছে ৷
নাহিদ বলে তুমি ঘুমোও আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দি ৷ বাধ্য মেয়ের মত শুয়ে পড়ে , মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় নাহিদ ৷
পরম আরামে চোখের পাতা ভারি হয়ে আসে ৷ ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যায় প্রান্তি ৷
আর নাহিদ ডুকরে ডুকরে কাঁদে ৷ চিঠিটা পড়েও কিছু বলে নি প্রান্তিকে ৷ তাকে মুক্তি দেবে নাহিদ ৷
আজ চলে যাবে প্রান্তি
সকাল বেলায় উঠে নাহিদকে জানায় তার এক আত্বীয় অসুস্থ দেখতে যাবে, মেয়েকে রেখে যাবে বিকেলেই ফিরে আসবে ৷
শুনেই চমকে ওঠে নাহিদ ৷ ভেতরটা ডুকরে কেঁদে ওঠে ৷
মেয়েকে কাজের মেয়ের কাছে রেখে ট্রেনে তুলে দিয়ে আসতে যায় প্রান্তিকে ৷
বুকের চাপা কষ্টটাকে বেঁধে রেখে সারা রাস্তা বকবক করতে করতে যায় নাহিদ ৷
প্রান্তি একটাও কথা বলে নি ৷
ট্রেনের সময় হয়ে গেছে কিছুক্ষণ পরেই ট্রেন ছাড়বে, চলে যাচ্ছে প্রান্তি ৷
পেছন থেকে হাতটা টেনে ধরে নাহিদ, চমকে পেছনে তাকায় প্রান্তি, নাহিদের দিকে চেয়ে আছে অবাক হয়ে, চোখের কোনে একবিন্দু জল ৷
করুন চোখে তাকায় নাহিদ, অনেক কিছুই বলার ছিলো, কিছুই বলতে পারে না, শুধু ভালো থেকো, ভালভাবে যেও এটুকু বলেই হাতটা ছেড়ে দেয় সে, ট্রেনে উঠে পড়ে প্রান্তি ৷
ট্রেন ছেড়ে দেয় ধিরে ধিরে চলতে শুরু করে , ট্রেনের দরজায় দাড়িয়ে আছে প্রান্তি , দুর থেকে নাহিদকে বলে, বিছানার নিচে একটা চিঠি আছে তোমার ৷পকেট থেকে হলুদ খামের চিঠিটা বের করে নাহিদ ৷ চমকে যায় প্রান্তি , অবাক বিস্বয়ে তাকিয়ে থাকে নাহিদের দিকে ৷
ধিরে ধিরে চলে যাচ্ছে ট্রেন ৷
চলে যাচ্ছে নাহিদের সুখে থাকার একমাত্র অবলম্বন ৷ নাহিদের বার বার মনে হয় প্রান্তি যেতে পারবে না ফিরে আসবে তার কাছে৷
ঝাপসা চোখে ট্রেনের চলে যাওয়া দেখছে নাহিদ ৷ ট্রেন যাচ্ছে ঝম ঝম ঝম ঝম শব্দে ৷
দুর থেকে কে যেনো ডাকছে বাবা বাবা বলে , ঘুম থেকে উঠে দেখে তার মেয়ে মীরা ডাকছে ৷ মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে বাবা ৷ না সেদিন আর ফেরেনি প্রান্তি ৷ আমেরিকা গিয়ে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দিয়েছিলো ৷ঐ ছেলেকে বিয়ে করেছে ওখানে ৷
বাবা তুমি এখনো ঘুমাচ্ছো? সকাল ১০ টা বাজে , অফিসে যাবে না ?
নারে মা , আজ আর যাবো না , শরীর টা ভালো লাগছে না ৷
কি হয়েছে জ্বর? দেখি দেখি, বাবার কপালে হাত দেয় মীরা ৷
কিছু হয় নি রে মা, এমনি যেতে ইচ্ছে করছে না ৷
ঠিক আছে নাস্তা দিচ্ছি খেয়ে নাও ৷
নাহিদ সাহেব ভাবে সবে ১৪ বছর বয়স মীরার ৷ এখনি পুরো সংসারের দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছে ৷ মীরা চলে যাচ্ছে পেছন থেকে ডাকে বাবা ৷
এদিকে একটু আয় তো মা, এখানে একটু বোস ৷
কি হলো বাবা?
বাবা বলে তুই এতটুকু মেয়ে এত কাজ করিস কেনো ? তোর কষ্ট হয় না !
বাবা আমি ছাড়া তোমার কে আছে বলো , কে করবে?
মা তো আমাদের ছেড়ে পালিয়ে বেঁচে গেছে ৷ আমাকেই তো সব দেখতে হবে তাই না ?
বাবা, মা খুব খারাপ, খুব সার্থপর তাই না? আমাদের ছেড়ে চলে গেছে, বলে বাবাকে জড়িয়ে ধরে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলে মীরা ৷
বাবা তুমি আমাকে ছেড়ে যাবেনা তো? তোমাকে খুব ভালবাসি বাবা ৷
লেখক: আহসান আহমেদ শুভ (হলুদ হিমু)