শুক্রবার, ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১১:৪২:৩৫

‘যে বাবা নিজের সন্তানের গলায় ছুরি ধরতে পারে সে সন্তানকেও মেরে ফেলতে পারে’

‘যে বাবা নিজের সন্তানের গলায় ছুরি ধরতে পারে সে সন্তানকেও মেরে ফেলতে পারে’

রাজশাহী : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আকতার জাহান জলির (৩৮) সুইসাইড নোট পাওয়ার পর নানা আলোচনা চলছে।

 তার কক্ষের ল্যাপটপের নিচ থেকে সুইসাইড নোটটি উদ্ধার করা হয়।  শুক্রবার রাত ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনের ৩০৩ নম্বর কক্ষ থেকে ওই নোটটি উদ্ধার করা হয়।

মতিহার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হুমায়ুন কবীর জানান, রাতে অন্যান্য আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তাসহ পুলিশ ওই কক্ষে তল্লাশি চালায়। এ সময় আকতার জাহান জলির বিছানায় থাকা ল্যাপটপের নিচ থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করা হয়।

শুক্রবার দুপুরের পর তার একমাত্র ছেলে সোয়াদ মোবাইলে বারবার ফোন করে মাকে না পেয়ে বিষয়টি
 বিভাগের শিক্ষকদের জানায়।  বিষয়টি অন্য শিক্ষকরা জানার পর জুবেরী ভবনে গিয়ে দেখেন ভেতর থেকে দরজা বন্ধ।  

বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কক্ষের দরজা ভেঙে আখতার জাহানের দেহ উদ্ধারের পর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।  সেখানের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।  রাবির জুবেরী ভবনের ৩০৩ নম্বর কক্ষে একাই থাকতেন আখতার জাহান জলি।

জুবেরী ভবনের কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েকদিন ধরে আখতার জাহানকে কেউ বাইরে দেখেনি।  

  ঘরের ভেতরে মশারির মধ্যে আখতার জাহান জলিকে শোয়া অবস্থায় পাওয়া যায়।  তার মুখের দু'পাশ দিয়ে লালা ঝরছিল।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি শাতিল সিরাজ জানান, আখতার জাহানকে উদ্ধার করে রামেক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

রামেক হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক মাহিনুল ইসলাম জানান, আখতার জাহানের মুখের ভেতরে ঝলসে গেছে।  লালা বের হচ্ছে।  প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে- এসিড জাতীয় কিছু পান করে আত্মহত্যা করেছেন তিনি।  তবে ময়নাতদন্ত ছাড়া কিছু বলা সম্ভব নয়।

এদিকে সুইসাইড নোটে নিজের মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয় উল্লেখ করে জলি লিখেছেন, ‘ছেলে সোয়াদকে যেন তার বাবা কোনোভাবেই নিজের হেফাজতে নিতে না পারে’।

সুইসাইড নোটটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। শারীরিক, মানসিক চাপের কারণে আত্মহত্যা করলাম। সোয়াদকে যেনো ওর বাবা কোনোভাবেই নিজের হেফাজতে নিতে না পারে। যে বাবা নিজের সন্তানের গলায় ছুরি ধরতে পারে সে কোনো সময় সন্তানকে মেরেও ফেলতে পারে বা মরতে বাধ্য করতে পারে। আমার মৃতদেহ ঢাকায় না নিয়ে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দেয়ার অনুরোধ করছি।'

ওই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দার রানা বলেন, আমার যতদূর অভিজ্ঞতা তাতে কাগজে লেখা ওই বাক্যগুলোর লেখা আকতার জাহানের হাতের লেখার সঙ্গে মিল রয়েছে।

বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিভাগের একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং ছাড়াও প্রায় মিটিংগুলোতেই আকতার জাহানকে প্রকাশ্যে গালাগালি এবং অপমানজনক কথাবার্তা বলতেন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং আকতার জাহানের সাবেক স্বামী তানভীর আহমেদ।  বিভিন্ন সময় মোবাইল ফোনে গালাগালি করে এসএমএস দিতেন।

গত বছর তানভীর আহমেদ বিভাগের প্রভাষক সোমা দেবকে বিয়ে করেন।  প্রভাষক সোমা দেব রাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেন।  পরে প্রভাষক হিসেবে তিনি একই বিভাগে যোগ দেন।

তানভীর আহমেদ এবং তার দ্বিতীয় স্ত্রী সোমা দেব ও প্রথম স্ত্রী আকতার জাহান একই বিভাগের হওয়ায় এ নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা হাসাহাসি করতেন।  এতে চরম বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হতো আকতার জাহান জলিকে।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেছেন, 'আমরা একটা সুইসাইড নোট পেয়েছি।  সেটি তার সহকর্মী শিক্ষকদের দেখিয়েছি।  তারাও বলেছেন, নোটটি আকতার জাহানের লেখা।'

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক মাহিনুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান,  মৃত্যুর সঠিক কারণ ময়নাতদন্ত ছাড়া বলা সম্ভব নয়।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ বক্স ইনচার্জ এএসআই মনিরুল ইসলাম জানান, হাসপাতালে আনার আগেই আখতার জাহানের মৃত্যু হয়েছে।  ময়নাতদন্তের জন্য তার লাশ মর্গে রাখা হয়েছে।  তার লাশ বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে।
৯ সেপ্টেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে