রাজশাহী : গত মঙ্গলবার ঢাকা যাওয়ার কথা ছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আখতার জাহান জলির। কিন্তু তিনি যাননি। পরে তার একমাত্র ছেলে সোয়াদ বারবার মোবাইলে চেষ্টা করেও তার মাকে পায়নি।
শুক্রবার দুপুরের পর বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করে সোয়াদ বিষয়টি জানায়।
বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কক্ষের দরজা ভেঙে আখতার জাহানের দেহ উদ্ধারের পর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
রাবির জুবেরী ভবনের ৩০৩ নম্বর কক্ষে একাই থাকতেন আখতার জাহান। কয়েকদিন ধরে তিনি বাইরেও বের হননি বলে এমনটাই জানা গেছে।
ঘরের ভেতরে মশারির মধ্যে আখতার জাহানকে শোয়া অবস্থায় পাওয়া যায়। তার মুখের দু'পাশ দিয়ে লালা ঝরছিল।
রামেক হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক মাহিনুল ইসলাম জানান, আখতার জাহানের মুখের ভেতরে ঝলসে গেছে। লালা বের হচ্ছে।
এর আগে শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে আকতার জাহানের অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় ওঠে। আকতার জাহানের কক্ষে ল্যাপটপের নিচ থেকে তার লেখা সুইসাইড নোটও উদ্ধার করা হয়।
এদিকে মৃত্যুর পর তার সাবেক স্বামী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানভীর আহমেদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের অবস্থান তুলে ধরেছেন।
তানভীর আহমেদের স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-
'গতকাল থেকে মিডিয়াসহ অনেকেরই কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছি। তাই কিছু উত্তর এখানে দিয়ে রাখলাম:
আমাদের জীবনে সমস্যার সূত্রপাত ২০১০ সালে। আমার সাবেক স্ত্রী আকতার জাহান বিভাগের এক জুনিয়র সহকর্মীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে নতুন জীবন শুরু করতে চান। বিষয়টি আমার সহকর্মীরাসহ ক্যাম্পাসের অনেকেই জানেন। ফলে ২০১১ সালের মাঝামাঝি সময়ে আমরা মিউচুয়ালি আলাদা হয়ে যাই। তিনি আমাদের সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় চলে যান। কিন্তু প্রায় ২ সপ্তাহ পরেই ছেলেকে আমার কাছে পাঠিয়ে দেন এবং জানান যে, শারীরিক অসুস্থতার জন্য তিনি ছেলের দায়িত্ব নিতে পারছেন না। আমাদের ছেলে তখন ক্লাশ ফোরে উঠেছে। পরবর্তী বছরগুলোতে আমি প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে অনুরোধ জানালেও নিজের অসুস্থতার কারণে তিনি ছেলেকে নিজের কাছে নিতে অপরাগতা জানিয়েছিলেন। তখন থেকে ২০১৬ এর ৩০ মে পর্যন্ত ছেলে আমার কাছেই ছিল। তবে প্রতিটি ঈদ ও স্কুলের ভ্যাকেশনে মায়ের সাথে নানীবাড়িতে যেত। সে রাজশাহীর প্যারামাউন্ট স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র ছিল। সম্প্রতি তার মা তাকে ঢাকার স্কুলে পড়াশোনা করানোর ইচ্ছা আমার মায়ের কাছে জানান। আমার কাছেও এটি সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য ভাল প্রস্তাব মনে হয়। ঢাকার স্কুলটিতে সেশন জানুয়ারিতে শুরু হওয়ায় আগামী জানুয়ারিতে তার ক্লাশ নাইনে ভর্তি হওয়ার কথা।
২০১১ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত আকতার জাহানের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত পর্যায়ে যোগাযোগ ছিল না।
উল্লেখ্য, গত ২৬.০৮.২০১৩ তারিখে তিনি অফিসিয়ালি ডিভোর্স প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য আমাকে ডিভোর্সের নোটিশ পাঠান। আমিও তাতে সম্মতি দিই।
এই ৫ বছরে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন-যাপন, ভালো-মন্দ কোন কিছুর সাথেই আমি সংশ্লিষ্ট ছিলাম না। তিনি নতুন করে জীবন গুছিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। আমি তাতে বাঁধার কারণ হয়ে দাঁড়াতে চাইনি। তিনি নিঃসন্দেহে একজন ভাল শিক্ষক, সহকর্মীদের কাছে একজন ভাল সহকর্মী এবং ছাত্রদের কাছে মাতৃতুল্য অভিভাবক। আমার সাথে তাঁর বহু আগেই শেষ হয়ে যাওয়া ব্যক্তিগত সম্পর্কের থেকে মুখ্য হলো তিনি এই ৫ বছরে যাদের ঘনিষ্ঠ ছিলেন, তাঁর বর্তমান সময়ের সুখ-দুঃখ, সাফল্য-ব্যর্থতা সম্পর্কে তারাই সবচেয়ে ভাল বলতে পারবেন। এসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমি মোটেই সঠিক ব্যক্তি নই।'
১১ সেপ্টেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম