কাজী শাহেদ, রাজশাহী : নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেওয়া না নেওয়ার বিষয়টি ঝুলে থাকলেও রাজশাহীর ছয়টি আসনেই (সংসদীয় আসন ৫২, ৫৩, ৫৪, ৫৫, ৫৬ ও ৫৭) বড় দুই দলের নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হয়ে গেছে। মনোনয়ন পেতে আওয়ামী লীগ-বিএনপির একডজন নেতা দৌড়াদৌড়ি করছেন। এদের অনেককে আগে এলাকায় দেখা না গেলেও এখন তারা নির্বাচনী এলাকায় নানা কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন।
রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনে ১৯৯১-২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির মনোনয়নে পরপর তিনবার এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন ব্যারিস্টার আমিনুল হক। সর্বশেষ চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী ছিলেন তিনি। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনে দেশ ছেড়ে পালিয়ে থাকায় এবং বিএনপির সংস্কারপন্থিদের কাতারে ভেড়ায় আমিনুল হকের পরিবর্তে তার ভাই এনামুল হককে দলীয় মনোনয়ন দেয় বিএনপি।
ওই নির্বাচনে সাবেক পুলিশপ্রধান এনামুল হক পরাজিত হন বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরীর কাছে। গত নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন। তবে এবার বিএনপির প্রার্থী হয়ে অংশ নিতে এরই মধ্যে মাঠে নেমেছেন সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হক।
রাজশাহী-২ (সদর) আসনে বিএনপির সাবেক এমপি ছিলেন মিজানুর রহমান মিনু। ২০০৮ সালের আগে এ আসনটি দীর্ঘদিন ধরেই বিএনপির দখলে ছিল। ২০০৮ সালেও মিনু কারাগার থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। তবে মহাজোট প্রার্থী ও ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশার কাছে তিনি পরাজিত হন। আগামী নির্বাচনে আবারও বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেতে মাঠে নেমে পড়েছেন মিজানুর রহমান মিনু।
যদিও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল মহানগর বিএনপির সভাপতি হওয়ার পর থেকে মিনু-বুলবুলের মধ্যে দূরত্ব বেড়েছে। ফলে এই আসনটিতে আগামীতে মনোনয়ন দৌড়ে আসতে পারেন প্রবীণ নেতা কবীর হোসেন। যদিও তিনি নিজেকে নিভৃতে রেখেছেন। এ আসনে বাদশা-মিনুর লড়াই, নাকি অন্য কেউ মনোনয়ন পাচ্ছেন এখন থেকে শুরু হয়ে গেছে আলোচনা।
কারণ এ আসনে মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। তিনি ছাড়া আওয়ামী লীগ থেকে সদরে আর কেউ মনোনয়ন দাবি করছেন না। তবে লিটন মেয়র নির্বাচন করলে এ আসনে দলের কাছে মনোনয়ন চাইবেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, নগর যুবলীগের সভাপতি রমজান আলী। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক আবদুল খালেকও আছেন এ তালিকায়।
রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনটি ২০০৮ সালের নির্বাচন থেকে সৃষ্ট হওয়ার পর প্রথমবারের মতো এমপি হন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল্লা। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আয়েন উদ্দিনকে এ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন সাবেক এমপি মেরাজ উদ্দিন মোল্লা। এরপর দলের সভাপতি পদ থেকেও তাকে অপসারণ করা হয়। কিন্তু গত বছর অনুষ্ঠিত জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে সহ-সভাপতির পদ দেওয়া হয় তাকে।
এরই মধ্যে আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মেরাজ উদ্দিন মোল্লা আবার নতুন করে মাঠে নেমেছেন। এ আসনটিতে মনোনয়ন চান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ। বিএনপি থেকে একাধিক নেতা দলের মনোনয়ন চান এ আসনে। ২০০৮ সালে এখানে নির্বাচন করেছিলেন কবীর হোসেন। এবারও এ আসনে তার নাম উচ্চারিত হচ্ছে। এ ছাড়া নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টু মনোনয়ন চান এ আসনে।
রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনটিও ২০০৮ সাল থেকে সৃষ্টি হয়। আগে মোহনপুর ও বাগমারাকে নিয়ে ছিল রাজশাহী-৩ আসন। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনে কেবল বাগমারা নিয়েই একটি আসন করা হয়। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয় ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হককে। বিএনপির আমলে ২০০১-০৬ সাল পর্যন্ত এমপি ছিলেন বিএনপি নেতা আবু হেনা।
আগামী নির্বাচনে তিনি বিএনপির মনোনয়নের জন্য কাজ শুরু করেছেন। এ ছাড়া রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আমেরিকা প্রবাসী ডা. জাহিদ দেওয়ান শামীম, জেলা বিএনপির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন তপু এ আসনে মনোনয়ন চান। ২০০৮ সালের নির্বাচনে অংশ নেওয়া আবদুল গফুরও মনোনয়ন চান।
রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল ওয়াদুদ দারা। ২০০৮ সাল থেকে তিনি এমপি। আগামীতেও তিনি মনোনয়ন প্রত্যাশী। এ আসনে এবার মনোনয়ন চান সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আহসানুল হক মাসুদও। এর আগে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত এখানে এমপি ছিলেন রাজশাহী জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নাদিম মোস্তফা। তারও আগে ১৯৯১-৯৬ সাল পর্যন্ত এমপি ছিলেন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুক। আগামী নির্বাচন ঘিরে সাবেক এই দুই এমপি আবারও সক্রিয় হয়েছেন।
রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের বর্তমান এমপি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি ২০০৮ সাল থেকে এখানে এমপি নির্বাচিত হয়ে আসছেন। আগামীতেও তিনি মনোনয়ন পাবেন বলে মনে করা হচ্ছে। তবে গত নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে অংশ নিয়েছিলেন আরেক সাবেক এমপি রায়হানুল হক।
এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লায়েব উদ্দিন লাবলু, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রোকনুজ্জামান রিন্টু আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী। আগামী নির্বাচনে এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন চান চারঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সাইদ চাঁদ, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল ও বাঘা উপজেলা বিএনপি সভাপতি মানিক। বিডি প্রতিদিন
জুন, ২০১৭/এমটিনিউজ২৪ডটকম/এসবি