বুধবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৫, ০৫:৫৪:৩৪

সেলিনার এগিয়ে চলার গল্প

সেলিনার এগিয়ে চলার গল্প

রাজশাহী: বরেন্দ্র অঞ্চল রাজশাহীর তানোর উপজেলার ঝিলাখোলা নামে এক আদিবাসী গ্রাম। ওই গ্রামের এক অভাবি পরিবারের মেয়ে সেলিনা হেমব্রম। বাবা-মা অনেক আগেই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে। ৫ ভাই-বোনের সংসারে নুন আনতে পানতা ফুরায় তাদের। পরের জমিতে খেটে আনা কষ্টের টাকা দিয়ে পেট চলে তাদের। গ্রামের কাঁচা রাস্তার ধুলা-কাঁদায় লুটোপুটি খায় তাদের উন্নয়ন। তারই মাঝে এগিয়ে চলছে সেলিনা। সেলিনা এখন এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তার গ্রাম থেকে ৬ কিলোমিটার দুরে মুণ্ডুমালা বাজারের পাশে অবস্থিত ফজর আলী মোল্লা কলেজের ছাত্রী তিনি। মাঠে খেটে ও গ্রামের কয়েকটি আদিবাসী শিশুদের প্রাইভেট পড়িয়ে লেখাপড়ার খরচ চালান তিনি। ২০১৩ সালে পাশের জুমারপাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন সেলিনা। এরপরে কলেজ অনেক দুরের পথ। সেই পথে যেতে অনেক কষ্ট। ৬ কিলোমিটারের মধ্যে অর্ধেক রাস্তা কাঁচা। শীত-গ্রীষ্মে ধুলা আর বর্ষা মৌসুমে কাঁদা। পায়ে হেঁটে পথ পাড়ি দিয়ে কলেজে যেতে অনেক কষ্ট। এরপরে ভ্যানে যাতাযাতের খরচও অনেক বেশি। সে কারণে নিজের প্রয়োজনে সেলিনা সাইকেল চালানো শেখেন। সাইকেল চালিয়ে তিনি ৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে কলেজে যান। সেলিনা জানান, অনেক কষ্ট করে নিজে টাকা জোগাড় করে সাইকেল কিনেছেন তিনি। কিন্তু সেই সাইকেলটি চুরি হয়ে গেছে বাড়ির উঠান থেকে। এরপর থেকে বড় ভাইদের সাইকেল নিয়ে কলেজে যাতাযাত করেন তিনি। আর যখন সাইকেল থাকে না সেই সময় পায়ে হেঁটে কলেজে যেতে হয় তাকে। এছাড়াও সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথে তার রয়েছে আরও অনেক বাধা। গ্রামের মেয়ে হওয়ার কারণে তাকে শুনতে হয় নানা কটু কথা। এলাকার অনেকে তাকে বলেন ‘আর পড়াশুনা করে কী হবে। মেয়েদের এতো স্বপ্ন থাকা ভালো না। এখন বিয়ে করে সংসার কর।’ কিন্তু এসব কথা কানে নেন না সেলিনা। লেখাপড়ার সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করতে চান তিনি। আলোকিত মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে চান। তাইতো সংসারের অভাব, মানুষের গঞ্জনাসহ নানা সমস্যা উপেক্ষা করে নিজের স্বপ্ন পুরণের লক্ষ্যে এগিয়ে চলছেন তিনি। সেলিনার বড় ভাই কৃষ্ণ হেমব্রম জানান, অভাবের সংসারে সেলিনাকে অর্থের জোগান দিয়ে সহযোগিতা করা সম্ভব হয় না। সে (সেলিনা) নিজের চেষ্টায় এগিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে তানোর আদিবাসী পরগানা পরিষদের সভাপতি ও মুণ্ডুমালা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামেল মার্ডি জানান, এসব জায়গা থেকে উঠে আসতে একজন আদিবাসী নারীকে অনেক কষ্ট করতে হয়। সে জন্য যারা নিজ চেষ্টায় উঠে আসতে চায় তাদের পাশের দাঁড়ানো প্রয়োজন। এ চেষ্টাকে থামিয়ে দিলে আদিবাসী জনগোষ্ঠী সামনের দিকে এগোতে পারবে না। বাধাইড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান হেনা জানান, মেয়েটি অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করেন বলে জেনেছি। এ বিষয়ে যতখানি সহযোগিতা করার প্রয়োজন তা দেখা হচ্ছে। -বাংলামেইল ১৮ নভেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/রাসেল/মাহমুদ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে