রাজশাহীর বাঘায় শেফালি খাতুন নামের প্রতিবন্ধী এক ভিক্ষুক ৪০ হাজার টাকা মসজিদে দান করেছেন। শেফালি দিনে দিনে ভিক্ষা করে দফায় দফায় টাকা জমিয়ে মসজিদে দান করেন।
জানা যায়, ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় স্বামীর সংসার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান শেফালি। তারপর থেকে ভিক্ষার কাজে নেমে পড়েন। শেফালির ১৫ বছরের একটি পুত্রসন্তান রয়েছে। সে মাঝে-মধ্যে দিনমজুরের কাজ করে।
এদিকে তিনি ভিক্ষা করে সংসার চালিয়ে দিনে দিনে জমানো ৪০ হাজার টাকা দান করেন বাঘা পৌর এলাকার দক্ষিণ গাঁওপাড়া জামে মসজিদে। তিনি তোঁতলাভাবে কথা বলেন। লাঠির উপর ভর করে চলাফেরা করেন। ভিক্ষুক শেফালির বাড়ি উপজেলার গড়গড়ি ইউনিয়নের ব্রাহ্মণডাঙ্গা গ্রামে।
বুধবার তার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল ঘরের দরজা তালাবন্ধ। তার চাচাতো ভাইয়ের স্ত্রী রঞ্জনা জানান, ভিক্ষার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে সকালে বের হয়, ফিরে আসে সন্ধ্যায়। বাবার মৃত্যুর পর পৈতৃক সূত্রে পাওয়া প্রায় এক কাঠা জমিতে ঘর তুলে কোনোরকমে বসবাস করেন শেফালি। তারপরও নিজের চিন্তা না করে ভিক্ষার জমানো টাকা মসজিদে দিয়েছেন। তবে তার জমি থাকলেও পায়নি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বরাদ্দের সরকারি ঘর। তার প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড রয়েছে।
পরে বাঘা বাজারে শেফালির সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, সংসার চালিয়ে অবশিষ্ট টাকা গ্রামের গোরস্থান, মসজিদে মাইক, ফ্যান কেনার জন্য টাকা দান করেছি। আমার ইচ্ছা এবার ভিক্ষা করে নিজের সংসারে খরচ করে যা বাঁচবে, সেই টাকা জমিয়ে মাদ্রাসা ও এতিমখানায় দিব। আল্লাহর ঘরে দান করলে পরকালে শান্তি পাওয়া যাবে।
গড়গড়ি ইউনিয়নের ব্রাহ্মণডাঙ্গা গ্রামের রেজাউল ইসলাম জানান, শেফালির বাবা মসলেম উদ্দিন প্রামাণিক ছিলেন দিনমজুর। মায়ের মৃত্যুর পর বেড়ে উঠেন বাবার আশ্রয়ে। বাবা বেঁচে থাকতে শেফালিকে বিয়ে দিয়েছিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন এক ছেলের সঙ্গে। এ বিয়ের সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় স্বামীর সংসার থেকে বিচ্ছিন্ন হন। তারপর থেকে ভিক্ষা শুরু করেন।
বাঘা পৌরসভার দক্ষিণ গাঁওপাড়া গোরস্থান জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি সামসুজ্জোহা সরকার, মসজিদের সার্বিক তত্ত্বাবধায়ক মোয়াজ্জেম হোসেন ও রফিকুল ইসলাম জানান, দফায় দফায় ৪০ হাজার টাকা দিয়েছেন শেফালি। সেই টাকা দিয়ে মসজিদের মাইক, ফ্যান ও টাইলসের কাজ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে গড়গড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম জানান, শেফালি ভিক্ষা করে সংসার চালান। পাশাপাশি অবশিষ্ট জমানো টাকা মসজিদে দান করেছেন শুনেছি। তবে তাকে পরিষদ থেকে সহযোগিতা করা হয়।