রাজশাহী : অন্যরকম এক বিয়ে, যে বিয়েতে বরকে কাঁধে তুলে নিয়ে যায় কনে পক্ষ। বিয়েতে উপহার দেয়া হয় ছাগল-ভেড়া। বর-কনেকে নিয়ে সভা বসা হয়।
উৎসব ও সাজন প্রিয় উত্তরের আদিবাসীদের বিয়ে হয়ে থাকে নিজ গোত্রের নিজস্ব নিয়মে। বিয়ের অনুষ্ঠানে থাকে নানান বৈচিত্র্যের ছোঁয়া। পুরো বিয়ের অনুষ্ঠানে তারা থাকে উৎসবে বিভোর।
রাজশাহী, নওগাঁ, দিনাজপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ বরেন্দ্র অঞ্চলে অনেক সম্প্রদায়ের বাস। এদের মধ্যে আদিবাসী ওঁরাও জনগোষ্ঠী একটি। এখনো তাদের রেজিস্ট্রি বিয়ের প্রচলন চালু হয়নি। সামাজিক রীতিনীতি মেনেই তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়ে থাকে।
ওঁরাওদের বিয়ের শুরু হয়ে থাকে অগুয়ার (ঘটক) মাধ্যমে। অগুয়া প্রথমে মেয়ে পক্ষ থেকে বিয়ের জন্য ছেলের বাড়িতে যায়। তার কথা শুনে ছেলে পক্ষ রাজি হলে মেয়ের বাড়িতে আলোচনায় আসে ছেলে পক্ষ। অগুয়া সেই সংবাদ মেয়ে পক্ষের বাড়িতে পৌঁছে দেয়।
বিয়ের কথা হওয়ার নির্দিষ্ট দিনে ছেলের বাবা-মা ও ভগ্নিপতি মেয়ের বাড়িতে আসে। তবে সেইদিন যাবে না ছেলে। ছেলের বাবা-মা ও ভগ্নিপতিই মেয়ে পছন্দ করবেন। তাদের পছন্দ হলে পরে ছেলে দেখতে যাবে।
আলোচনায় রাজি হলে মেয়ের বাড়িতে ‘গড়পানি’ অনুষ্ঠান হয়। ওই অনুষ্ঠানে বিয়ের চূড়ান্ত কথা হয়। মেয়েকে আশীর্বাদ করা হয়। একই দিনে নির্ধারণ হয় পণ। পণ নির্ধারিত হয় দিগরি পরিষদের আওতাভুক্ত গ্রাম অনুযায়ী।
ওই পরিষদের অধীনে যত গ্রাম থাকবে তত টাকা পণ হিসেবে ছেলে পক্ষ মেয়ে পক্ষকে দেবে। দিগরি পরিষদের অধীনে যদি ২০টি গ্রাম থাকে তাহলে পণ হবে ২০ টাকা। ওইদিন মেয়ে পক্ষ থেকে প্রচুর আপ্যায়নের ব্যবস্থা থাকে। তবে মূল আপ্যায়নের উপকরণ হচ্ছে হাড়িয়া (বিশেষ ধরনের পানীয়)।
নির্দিষ্ট দিনে ছেলে পক্ষ মেয়ের বাড়িতে বিয়ে করতে যায়। এ সময় ছেলের ভাবীরা মাথায় ‘কাঁড়সা ভাড়া’ (ধানের শীর্ষ গাঁথা একটি কলস যার মধ্যে প্রদীপ জ্বালনো থাকে) করে নিয়ে যায়।
মেয়ের সাজার জিনিসও সঙ্গে নিয়ে যায়। বর পক্ষ মেয়ের গ্রামে গেলে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। বর পক্ষকে গ্রামের বাইরেই ডেরা দেয়া হয়। প্রথমে অগুয়া মেয়ের বাড়িতে যায়। এরপর ‘বারাত লাড়া’ অনুষ্ঠান হবে। অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মেয়ে পক্ষ বরপক্ষকে গ্রহণ করে থাকে। মেয়ের পক্ষ থেকে লোক এসে বরকে কাঁধে করে মেয়ের বাড়িতে নিয়ে যায়।
বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যায়। বিয়ের মূল পর্ব হচ্ছে ‘ইড়িঁ খুন্দা’ অনুষ্ঠান। এ অনুষ্ঠানে বর মেয়েকে সিঁদুর পরানোর মধ্যদিয়ে বিয়েটি সম্পন্ন হয়। এরপর বর-কনে নিয়ে সভা বসে। সেখানে আত্মীয়-স্বজন ও গ্রামবাসীরা উপহার দিয়ে আশীর্বাদ করে থাকেন।
মেয়ের বাড়িতে বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পরের দিন ছেলের বাড়িতে বাসীবিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেও বর-কনে নিয়ে সভা বসে। আত্মীয়-স্বজন ও গ্রামবাসীরা সামর্থ্য অনুযায়ী উপহার দিয়ে আশীর্বাদ করেন। আশীর্বাদে কেউ টাকা-পয়সা, কেউ ছাগল-ভেড়া দিয়ে থাকে।
ওঁরাও সম্প্রদায়ের এমনই এক বিয়ের অনুষ্ঠান হয় জেলার তানোরের বিনোদপুর সুকানদীঘি গ্রামে। ওই গ্রামের রজেন লাকড়ার ছেলে রিপন লাকড়া ও রূপকুমার লাকড়ার দুই ভাইয়ের বিয়ে হয় একই দিনে। এক ভাই বিয়ে করেন পবা উপজেলার দারুশা গ্রামে এবং অন্য ভাই বিয়ে করেন গোদাগাড়ী উপজেলায়।
সোমবার ছেলের বাড়িতে বিয়ের সভা অনুষ্ঠান হয়।
২ মার্চ,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম