রাজশাহী: জেলার বাগমারায় চাঞ্চল্যকর জোড়া খুনের ঘটনার তদন্ত হিমঘরে। হত্যার দীর্ঘদিন অতিবাহিত ও হত্যাকারীদের মূলহোতা শনাক্ত হওয়ার পরেও গ্রেপ্তার না হওয়ায় এলাকায় ক্ষোভ বাড়ছে। নিহতের পরিবার বিচার নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশও করেছে। তাদের অভিযোগ, হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও অর্থের জোগানদাতা এলাকায় বিভিন্ন সময় দেখা গেলেও প্রশাসনের মাথাব্যাথা নেই।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, ২০১৪ সালের ২৪ নভেম্বর দিবাগত রাতে উপজেলার বাসুপাড়া ইউনিয়নের দেউলা গ্রামে চৌরাস্তার পাশে পাকা বাড়িতে মা আকলিমা ও ছেলে জাহিদকে নির্মমভাবে খুন করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। পরের দিন (সোমবার) সকালে ওই বাড়িতে কাজ করতে আসা রাজমিস্ত্রিরা ও তার বড় ছেলে খুনের ঘটনাটি প্রথম দেখতে পান।
ওই দিনই ২৫ নভেম্বর নিহত আকলিমা বেগমের বড় ছেলে দুলাল হোসেন বাদী হয়ে বাগমারা থানায় অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর থেকে চাঞ্চল্যকর জোড়া হত্যাকাণ্ডটির তদন্ত নানা নাটকীয়তায় মোড় নেয়।
মামলার বাদী ও এলাকার লোকজনের অভিযোগ, প্রকৃত খুনিদের গ্রেপ্তার না করে মানসিক প্রতিবন্ধী দেউলা গ্রামের জালাল উদ্দিনের ছেলে সান্টু নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ দায় এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পুলিশের এ ধরনের কাজে নিহত পরিবারের সদস্য ও এলাকার সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকেও তিন দফা পরিবর্তন করা হয়। তবুও বাগমারা থানা পুলিশ মামলার তদন্তে তেমন অগ্রগতি করতে পারেনি। পুলিশ জোড়া খুনের ঘটনায় আসামিদের সাথে গোপনে বাণিজ্য শুরু করেছে অথবা রাজনৈতিক কারণে পুলিশ প্রকৃত খুনিদের আড়াল করার চেষ্টা করছে নাকি অন্য কোনো গডফাদার পেছনে কলকাঠি নাড়ছে। নানান প্রশ্ন এলাকার বাতাসে উড়তে থাকে।
তবে, হত্যাকাণ্ডের দুই মাস পর ২০১৫ সালের ২৩ জানুয়ারি নিহত আকলিমার হারিয়ে যাওয়া মোবাইল ফোনটি উদ্ধার হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ডোমদের কাছে থেকে। সে সময় এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক(এসআই) মাসুদ পারভেজ রাজশাহী থেকে চার ডোমকে গ্রেপ্তার করে সাতদিনের রিমান্ডে নেয়। তবে, সেখানেও অন্য ঘটনা উঠে আসে। লাশ দুইটি ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজে নিয়ে গেলে নিহত আকলিমার কাপড়ের মধ্যে থেকে মোবাইলটি পায় ডোমেরা। এ সময় লোভে পরে মোবাইল ফোনটি লুকিয়ে ফেলে তারা।
সে সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মাসুদ পারভেজ জানিয়েছিলেন, হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে চার ডোমের কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে এমন সন্দেহের কারণেই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। হত্যাকারী কে বা কারা তা ডোমদের কাছ থেকে উদ্ধার করা যায়নি।
এরপরেই মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে স্থানান্তর করা হয়। তখন থেকেই মামলার অনেকটা অগ্রগতি হয় ও মূলহোতা চিহ্নিত করতে সক্ষম হন।
পরে অপরাধ তদন্ত বিভাগ নিহত আকলিমা বেগমের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি ট্রাকিং করে পাশের দূর্গাপুর উপজেলা থেকে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ভাড়াটে দুই হত্যাকারীকে আটক করতে সক্ষম হয়। পরে তাদের রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ জানতে পারে হত্যাকাণ্ডের অর্থের জোগানদাতা মূল হোতার নাম। তিনি একই গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা শিক্ষক আবুল হোসেন।
শিক্ষক আবুল হোসেন নিহত আকলিমা বেগমের সম্পর্কে দেবর এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দেওলা রানী রিভারভিউ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক। আবুলের নামটি পরিষ্কার হওয়ায় গত বছর শেষের দিকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারের জন্য দেওলা গ্রামে অভিযান চালায়। সে সময় আবুল বাড়িতে অবস্থান করলেও পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তিনি পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। এখন পর্যন্ত তিনি পলাতক রয়েছেন।
এদিকে, এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও অর্থের জোগানদাতা আবুল হোসেন পলাতক থাকলেও চাকরি থেকে নিয়মিত বেতন উত্তোলন করছেন। শুধু তাই না, তার হাজিরা খাতায় স্বাক্ষরও হচ্ছে নিয়মিত। অনেকেই অভিযোগ করেন, অভিযুক্ত আবুল হোসনকে প্রায় সময় এলাকায় দেখা যায়। পুলিশ বিষয়টি জানার পরেও কোনো পদক্ষেপ নেয় না।
এ বিষয়ে বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তদন্ত আবুল কালাম আজাদ চাঞ্চল্যকর এই মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে স্থানান্তর হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে জানান, মামলাটির মূল পরিকল্পনাকারী শনাক্ত হয়েছে। এখন তাকে গ্রেপ্তারের অপেক্ষা।
বর্তমানে এ মামলাটি তদন্ত করছেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত রাজশাহী অফিস। ওই মামলা তদন্তকারী অফিসার জাহাঙ্গীর আলম মণ্ডল ছুটিতে আছেন। তার মুঠোফোনে কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি। -বাংলামেইল
৩০ জুলাই, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম