রাজশাহী : রাজশাহীতে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত যুবক নজরুল ওরফে বাইক হাসান ওরফে পারভেজ (৩০) ছিলেন মাদ্রাসার ছাত্র। কিন্তু মাদ্রাসার পড়াশোনা শেষ না করে এলাকায় মুদিখানার দোকানে কাজ শুরু করেন। এরপর মুদিখানার দোকান থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবি’র সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তিনি। হয়ে ওঠেন উত্তরবঙ্গের জেএমবি’র একজন দুর্ধর্ষ সদস্য।
শুধু তাই নয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যাসহ তিনি রাজশাহী, রংপুর, কুষ্টিয়া, পঞ্চগড়সহ উত্তরবঙ্গের ১১টি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। এমনটাই জানালেন রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপত্র ও সিনিয়র সহকারী কমিশনার ইফতেখায়ের আলম।
ইফতেখায়ের আলম আরও জানান, বন্দুকযুদ্ধে নিহত যুবক দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মোট ১১টি হত্যাকাণ্ড ও ২টি হত্যা প্রচেষ্টার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত বলে জানা যায়। তিনি রংপুর জেলার কাউনিয়া উপজেলায় জাপানি নাগরিক ওসি কুনিও হত্যাকাণ্ড, খাদেম রহমতুল্লাহ হত্যাকাণ্ড, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ব্যবসায়ী শ্রী তরুণ দত্ত হত্যাকাণ্ড ও জুতা ব্যবসায়ী শ্রী দেবেশ চন্দ্র হত্যাকাণ্ড, কুড়িগ্রাম জেলায় খৃস্ট ধর্মে ধর্মান্তরিত হোসেন আলী সুমন, পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ থানার শ্রী শ্রী গৌরী মঠ এর মহারাজ যোগেশ্বর দাসাধিকারী, টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর থানার দুবাইল বাজারের দর্জি নিখিল হত্যাকাণ্ড, পাবনার হেমায়েতপুর আশ্রমের সেবক নিত্যরঞ্জন হত্যাকাণ্ড, কুষ্টিয়ার হোমিও চিকিৎসক মীর সানোয়ার রহমান হত্যাকাণ্ড, নাটোরের বনপাড়ার খ্রিস্টান মুদি ব্যবসায়ী সুনীল গোমেজ হত্যাকাণ্ড এবং দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর থানার রানীরবন্দর এলাকার ধীরেন্দ্রনাথ ও রংপুরের বাহাই সম্প্রদায় নেতা ডা. রুহুল আমিন হত্যাচেষ্টার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন।
এদিকে রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, মঙ্গলবার ভোরে পুলিশের ওপর ওই যুবক ও তার সহযোগীরা ককটেল হামলা চালায়। এ সময় তাদের সঙ্গে পুলিশের গুলি বিনিময় হয়। পরে সেখান থেকে ওই যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়। তবে তাৎক্ষণিক তার পরিচয় পাওয়া যায়নি। পরে আমাদের তালিকায় থাকা এক জেএমবি সদস্যের সাথে তার চেহারার মিল পাওয়া যায়। এরপর বিষয়টি নিশ্চিত হতে তার স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়।
পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন জেলা শহরে তার সন্ধান পাওয়ার চেষ্টা চলছিল। সে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটানোর পাশাপাশি অধিকাংশ সময় পলাতক ছিল। তাকে ধরার জন্য সম্প্রতি পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হয় পুলিশের পক্ষ থেকে।
এছাড়া মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (পশ্চিম) একেএম নাহিদুল ইসলাম বলেন, রাজধানীর কল্যাণপুরে জঙ্গিদের আস্তানা থেকে যে পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে, একই ধরনের পিস্তল বুন্দকযুদ্ধের পর পারভেজের মৃতদেহের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়।
তিনি পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ থানাধীন গজপুরী গ্রামের সোনাহার এলাকার আবদুল্লা মিয়া ওরফে মুন্নার ছেলে।
প্রসঙ্গত, রাজশাহী মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও মতিহার থানার যৌথ সন্ত্রাস ও জঙ্গিবিরোধী বিশেষ অভিযানকালে গত ২ আগস্ট ভোর ৩টার দিকে মতিহার থানাধীন আশরাফের মোড় এলাকায় (হরিয়ান পূর্বপাড়া) কতিপয় দুষ্কৃতকারী পুলিশকে লক্ষ্য করে অতর্কিতভাবে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় এবং গুলি চালায়। এ সময় পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায়। এ সময় উপ-পুলিশ কমিশনার (পশ্চিম) সঙ্গের ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন। ঘটনাস্থলে জেএমবি সদস্য পারভেজকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায় এবং রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে। অন্যরা পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থল হতে একটি পিস্তল ও বিস্ফোরিত ককটেলের অংশবিশেষ উদ্ধার করা হয়। -বাংলা ট্রিবিউন
০৪ আগস্ট, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম