নিউজ ডেস্ক : বিদ্যুৎ বিভাগে অনিয়ম আর ভোগান্তির শিকার হয়নি এমন মানুষের সংখ্যা খুব কমই আছে। ভোগান্তির সেই তালিকায় বিদ্যুৎ বিভাগের অবস্থান উপরের দিকেই থাকে।
ভুক্তভোগীদের মতে, বিদ্যুৎ অফিস এমনি একটি অফিস, যে অফিসের ইট-বালু-সিমেন্টকেও সমীহ করে চলতে হয়। তা মেনে না চললেই পদে পদে বিপদ।
গত বছর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে টাঙ্গাইলের সখীপুরের বড় চওনা হাইস্কুল মাঠে চ্যানেল আইয়ের ‘হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’ আয়োজিত ‘কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট’ অনুষ্ঠানের প্রাক-বাজেট আলোচনায় অংশ নেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
অনুষ্ঠানে তৃণমূল কৃষকরা তাদের নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন। তাদের অভিযোগের বেশির ভাগ ছিল বিদ্যুৎ নিয়ে। মন্ত্রীর উপস্থিতিতে প্রায় পাঁচ শতাধিক কৃষক নির্বাহী প্রকৌশলী শাহাদত আলীর হয়রানিমূলক কর্মকাণ্ডের চিত্র জোরালোভাবে তুলে ধরেন।
ওই আলোচনা অনুষ্ঠানে যারা অনিয়মের চিত্র তুলে ধরেছিলেন তারা আরো ভোগান্তিতে পড়েছেন। টাঙ্গাইলের সখিপুর উপজেলার হাজারো বিদ্যুৎ গ্রাহক ভোগান্তিতে পড়েছেন। সবচেয়ে বড় থাবাটি পড়েছে সখীপুর উপজেলার কুতুবপুরের আবেদ নগর গ্রামের কৃষক আন্তাজ আলীর ওপর। তিনি ওই আলোচনা অনুষ্ঠানে তীব্রভাবে তুলে ধরেছিলেন বিদ্যুৎ অফিসের অনিয়মের চিত্র।
গত ৩ বছর বিদ্যুৎ ধরে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই দরিদ্র কৃষক আন্তাজ আলীর বসত ভিটায়, তবুও তার নামে বকেয়া বিল পাঠানো হয়েছে ১০ লাখ ১০ হাজার ৬শ' ৯০ টাকার।
গত ১৮ ফেব্রুয়িরি বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের ওই কাগজ হাতে পান তিনি। গত এক সপ্তাহ ধরে বিলের কাগজ হাতে নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।
বিলের কাগজ নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগে যোগাযোগ করেও কোনো সুরাহা পাননি। ২৩ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিল পরিশোধে ব্যর্থ হলে বিদ্যুৎ বিভাগ তার বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দিয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী কৃষক।
আন্তাজ আলী গণমাধ্যমকে বলেন, ২০০২ সালে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) একটি আবাসিক সংযোগ নেই। যার হিসাব নং ৫২৪৬ ও গ্রাহক নং ৭৪৭১৭৫৩৯। ২০১২ সাল পর্যন্ত নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে আসলেও ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে ৪৪ হাজার টাকার একটি বিদ্যুৎ বিল দেয়। বিষয়টি নিয়েে আমি সখীপুর বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগে যোগাযোগ করি। তারা আমাকে বিলটির সংশোধনের আশ্বাস দেন।
এ নিয়ে পুনরায় অভিযোগ করা হলে ওই গ্রাহকের মিটার খুলে আনা হয়। এরপর থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ থাকলেও কিছুদিন পর তার নামে আরো ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার আরেকটি বিল পাঠানো হয়।
জানা গেছে, বিষয়টি খতিয়ে দেখতে সখীপুর বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই গ্রাহকের মিটারটি এনালগ হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে প্রতিমাসে ২০০ ইউনিটের গড়বিল করা হয়।
এরপর মিটার রিডিং ১৫২১৫ ইউনিট দেখিয়ে বকেয়া সমন্বয় করতে শুধুমাত্র ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে ৫৫৪০ ইউনিটের বিল করা হয়, যা গড়বিল ২০০ ইউনিট থেকে ৫৩৪০ ইউনিট বেশি।
এ অবস্থায় দীর্ঘদিন কোনো বিলের কাগজ না দেয়া হলেও গত বৃহস্পতিবার তাকে ১০ লাখ ১০ হাজার ৬ শ’ ৯০ টাকার একটি বকেয়া বিল পাঠানো হয়েছে, যা চলতি মাসের ২৩ তারিখের মধ্যে পরিশোধ করতে বলা হয়।
আন্তাজ আলী বলেন, তিন বছর আগে নতুন মিটার দেয়ার কথা বলে আমার মিটারটি খুলে নেয়। পরে আমাকে আর মিটার দেয়া হয়নি। কিন্তু আমার নামে ১০ লাখ টাকার বিলের নোটিস আসে।
সখীপুর বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহাদত আলী গণমাধ্যমকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয়। আন্তাজ আলীর সমস্যাটি আমার আগের সময়ের। এটি কম্পিউটার সেকশনের ভুল। একটি কমিটি করে বিষয়টি সমাধান করা হবে বলে জানান তিনি।
২৯ ফেব্রুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম